সুবিধাভোগী ও কোন্দলে দ্বিধাবিভক্ত দোহার বিএনপি

513

রহমান সজল ♦ চরম সুবিধাভোগী, পদপ্রত্যাশী ও কোন্দল এবং নেত্রিত্বহীনতায় দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে দোহার উপজেলা বিএনপি। আর তৃণমূল র্পযায়ের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দিশাহীন দোহার বিএনপি। একদিকে নাজমুল হুদা, অন্যদিকে আবু আশফাক ও আরেক দিকে আব্দুল মান্নান। প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একাধিক কমিটি। এক কমিটির সাথে আরেক কমিটির সদস্যরা মাঝে মাঝে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এই ত্রিমুখী কোন্দলে নাজেহাল দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই রাজনৈতিক দল। কারও সাথে কারও নেই মুখ দেখা-দেখি, ফলে কেন্দ্র অথবা স্থানীয় বা জাতীয় দিবস বা যে কোন ধরনের কার্‍্যক্রমে নেই তাদের তেমন কোন অবস্থান। বরং অনেকটাই ক্লাব পার্টিতে পরিণত হয়েছে দোহার নবাবগঞ্জ তথা দোহার বিএনপি। একটা সময় বিএনপি’র ঘাটি বলে পরিচিত দোহারে বিএনপি পরিচালিত হতো সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ইশারায়। কিন্তু দলের সংকটকালীন সময়ে দল থেকে বেড়িয়ে এসে তিনি গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল বিএনএফ। আর বিএনএফ গঠন করার পর বিএনপি থেকে তিনি বহিস্কৃত হন। আর এতে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে দোহার উপজেলা বিএনপি।

বিএনএফ যে সরকারের ছত্রছায়ায় বিএনপি’কে পর্যদুস্ত করতে গঠিত হয়েছিল তা বোঝা যায় বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের আচরণে। বিএনপি থেকে তিনি বহিস্কৃত পর তিনি হারান ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতির পদও। তারপর সেই পদে ভারপ্রাপ্ত হয়ে আসেন সাবেক বিমানমন্ত্রী নবাবগঞ্জ উপজেলার সাবেক এম.পি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান। আর তখন থেকেই দোহার উপজেলায় শুরু হয় বিএনপির কোন্দল সুপষ্ট। শুধু 5 Star বলে পরিচিত একটি গ্রুপ ও মুকসুদপুর ইউনিয়ন বিএনপি রয়ে যায় নাজমুল হুদার পাশে। তবে এখনো দোহার-নবাবগঞ্জে জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম ব্যা. নাজমুল হুদা। এছাড়া আব্দুল মান্নানের জামাতা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যা. নাসিরুদ্দীন অসীম। ব্যা. অসীম নিজে বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার আইনজীবী হওয়ায় তার অবস্থান অনেক দৃঢ়। এদিকে বিএনপি’র নেতা র্কমীদের দলে ভেড়াতে শুরু হয় রাজনীতি। হঠাৎ করেই ঘোষিত হতে থাকে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির কমিটি। আর কমিটি ঘোষিত হতে থাকে মান্নান পন্থী নেতা কর্মীদের নিয়ে। ফলে নাজমুল হুদা পন্থীদের উপর নেমে আসে হতাশার কালো মেঘ। ফলে দোহারের বিএনপির রাজনীতিতে প্রথম শুরু হয় কোন্দল। ফলশ্রুতিতে আন্দোলন শুন্য ও কমিটি কেন্দ্রীক হয়ে দোহার বিএনপির রাজনীতি। এই রকম এক প্রেক্ষাপটে দোহারের বিএনপির রাজনীতিতে আরও বেশি সক্রীয় হন নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি কেন্দ্রীয় র্নিবাহী কমিটির সদস্য আবু আসফাক।

অন্য খবর  শহিদ খানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নবাবগঞ্জে মানববন্ধন

নবাবগঞ্জে বিএনপিতে শক্ত অবস্থানে থাকলেও দোহারের বিএনপির রাজনীতিতে তিনি নতুন। কিন্তু ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার একসময়ের ভাবশিষ্য হিসাবে পরিচিত আবু আশফাক তার অনুসারী তৈরী করতে বেশ তৎপর। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা পন্থী নেতা কর্মীরা ধীরে ধীরে যোগ দিতে থাকেন আবু আশফাকের সাথে। ফলে ত্রিমুখি সংকটে হতাশা ও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে ঢাকা-১ আসন খ্যাত দোহার উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতি। দলীয় কর্মসুচিতে কেউ নাই অথচ সবাই ব্যাস্ত বিভিন্ন কমিটির পদ নিতে এবং নিজের ব্যবসায়িক কাজে সময় দিতে। এসবের মাঝে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতে এমপি অথবা উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দীন মোল্লা। এক সময় নাজমুল হুদার নিকটজন এই নেতা বর্তমানে আব্দুল মান্নানের কাছের জন। আবার আব্দুল মান্নানের গ্রুপে রয়েছে উপ-গ্রুপিং। এখানে সভাপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের সাথে আছেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। কিন্তু দ্বন্দে তাদের থেকে দূরে রয়েছেন ডালু খন্দকার। যদিও আব্দুল মান্নান নিজেকে দাবী করেছেন, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি। কিন্তু গণমাধ্যম তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেই জানে। আব্দুল মান্নানের এই কমিটির কোন বৈধতা বা অনুমোদন কেন্দ্র থেকে নেই বলে জানিয়েছেন আবু আশফাক।  আর দোহারে বিএনপি’র রাজনীতিতে কোন্দলকে আরো উসকে দেয় বিভিন্ন অংগ-সংগঠনের কমিটি ঘোষণা দেয়া নিয়ে। দ্বন্দ প্রকট হতে থাকে নিজেদের মধ্যে। এরই মধ্যে দোহারে রয়েছে ছাত্রদল, শ্রমিকদল ও যুবদলের দুটি করে কমিটি। সবাই নিজেকে বৈধ কমিটি বলে দাবি করলেও কার যে বৈধতা আছে তা নিয়ে সন্দিহান নিজ অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরাই। এই গ্রুপিংএর ভিতরেও সৃষ্টি হয়েছে একটি গ্রুপ। সুবিধাভোগী বলে পরিচিত এই গ্রুপের কাজ হচ্ছে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে দলের ভিতরে পদ বাগিয়ে নেয়া। এদের সকাল বেলা হয়তো দেখা যায় আবু আশফাকের বাসায়, বিকালে নবাবগঞ্জের গালিমপুরে আব্দুল মান্নানের বাসায় আবার রাতে শাইনপুকুরে নাজমুল হুদার সাথে। অথবা ঢাকায় আলাদা আলাদা ভাবে সবার সাথে ভাব রেখে চলেছেন এই নেতারা। আন্দোলনে নেই তারা। বিএনপি’র বিগত ৬০ ঘণ্টা, ৬০ ঘণ্টা ও ৮৪ ঘণ্টার হরতালে দেখা যায় নি নূন্যতম কোন পিকেটিং বা বিক্ষোভ। এর মাঝে ১৮দলীয় জোটের একটি প্রতিবাদের আয়োজন করে ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ ও জয়পাড়া কলেজ সাবেক জিএস সেণ্টু ভূইয়া। কিন্তু নিজ দলের মাত্র ৮/১০ জন নেতা কর্মী থাকায় তা বাতিল করা হয়। আর সর্বশেষ ১১ই নভেম্বর, সোমবারের হরতালে সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বিদ্যুৎ জয়পাড়া বাজারে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশের উপস্থিতিতে তা পন্ড হয়। পরে রাতে পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালালেও বিদ্যুৎ কে আটক করতে পারে নি। এই হল বিএনপি’র আন্দোলন পরিস্থিতি। যদিও অনেককে দেখা যায় রাজনীতি নিয়ে কথা বলায় বা রাজপথে সংগ্রাম করার প্রচন্ড অনীহা। অথচ এদেরকেই বিগত জোট সরকারের আমলে বড় বড় টেন্ডারে সবার আগে দাদা’র (নাজমুল হুদা) পাশে দেখা গেছে। যারা তেমন সুবিধা নেয় নি আজ তারাই চায় আন্দোলন করতে। শুধু একজন নেতা দরকার! কোন কোন শীর্ষনেতা আছেন বাড়ীর সামনের হাটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন পত্রিকা অফিসে, ফোন করে বলছেন তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন। মাঝে মাঝে ছবি বাদে ফোন করছেন যে তারা আন্দোলন করছেন অথচ যার কোন সত্যতা নেই। এসব নির্লজ্জ সুবিধাভোগীদের খপ্পরে প্পড়ে তৃনমূল বিএনপি আজ দিশেহারা অথচ সমর্থকএর দল বলে পরিচিত বিএনপি’র তৃনমূলে নেই কোন বিভেদ। কিন্তু নেতৃত্বের এই পলায়ন ও বেহাল দশার কারণে হতাশা নেমে এসেছে স্থানীয় বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে। মাঠের নেতা কর্মীরা হতাশ এই তৈলাক্ত রাজনীতি নিয়ে। ত্যাগী নেতা কর্মী বলে যারা স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিত তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না মাঠ পর্যায়ে। বরং সুবিধা ভোগীর রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে তারা সরে এসে ব্যস্ত রয়েছেন নিজেদের প্রাত্যহিক কাজে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি’র রাজনীতির ফায়দা লোটার জন্য অপেক্ষায় আছে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। স্থানীয় পর্যায়ের এই কোন্দলের কারনে হয়তো এবারও এই সংসদীয় আসনটি হারাতে পারে বিএনপি। এতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিএনপির ক্ষতি হবে, ক্ষতি হবে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপিরও। পাল্টে যেতে পারে ঢাকা জেলায় বিএনপি’র অবস্থান। আর এই নেতৃত্বহীনতার জন্য ভুগছে ঢাকা মহানগর বিএনপিও। ফলে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে দোহার উপজেলার ত্যাগী বিএনপি নেতা কর্মীদের জন্য।

আপনার মতামত দিন