রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত দোহার উপজেলা। জনসংখ্যা তিন লাখ। ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ হয়ে দোহার পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কই একমাত্র পথ। সামান্য এ পথ অতিক্রম করতে অসংখ্য খানাখন্দে চরম ঝাঁকুনি, ডোবায় কাদা মেখে আর ধুলি- মেঘে ভেসে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারের অধিবাসী এবং দক্ষিণাঞ্চলের বহু মানুষের এ দুর্ভোগ এখন নিত্যসঙ্গী।
রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়ে আবার বন্ধ থাকার কারণে এ দুর্ভোগ আরও বেড়েছে এলাকাবাসীর। এ পথের নিত্য দুর্ভোগ আর ভোগান্তির কথা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনে বহুবার বলেছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও উঠে এসেছে দুর্বিষহ এ সড়কের চিত্র। কিন্তু যাদের তা দেখার কথা তারা দেখছেন না। উদ্যোগ নিচ্ছেন না এলাকাবাসী দুর্ভোগ লাঘবে।
সংস্কার কাজে ধীরগতি দেখে এলাকাবাসী মনে করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের ৮ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ না করেই সটকে পড়ার চেষ্টা করছেন। এ পরিস্থিতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেন অতি দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে সে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।
বাবুবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু পার হলেই ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলা। সোজা রাস্তা গেছে ঢাকা- মাওয়া মহাসড়কে। আর ডানে মোড় নিলেই কেরানীগঞ্জ-নবাবগঞ্জ-দোহার আঞ্চলিক সড়ক। কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে তুলসীখালী সেতু পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর মধ্যে কদমতলী থেকে রোহিতপুর ঢাকা এবং রোহিতপুর থেকে নবাবগঞ্জ মুন্সীগঞ্জ সওজের আওতায়।
কদমতলী থেকে রোহিতপুর পথ তৈরি সড়ক বিভাগের ভাষায় সিঙ্গেল বিটুমিনে। আর সিঙ্গেল বিটুমিন মানেই কোনো ভারি যানবাহন, যেমন ট্রাক কিংবা বড় বাস চললেই দেবে গিয়ে তৈরি হয় খানাখন্দের। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে তা ভেঙে অল্প ক’দিনেই তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। শুরু হয় ভোগান্তি। কদাচিৎ কোনো মন্ত্রী, বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ পথে পা বাড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কার করা হয়। কিন্তু সংস্কারের নামে টাকা নয়ছয়, তড়িঘড়ি ও নিুমানের কাজের পরিণতি দাঁড়ায় ক’দিন পরেই পুরনো চেহারায় ফিরে আসা।
মন্ত্রী চলে যায়, গর্ত তাই গর্তই রয়ে যায়। আর বৃষ্টি নামলেই তা পরিণত হয় ডোবায়। এলাকাবাসী জানান, যতদিন জোড়াতালি দিয়ে মেরামত বন্ধ না হবে, ডাবল বিটুমিন ও ভালো মানের কাজ না হবে এ ভোগান্তি থেকে বাঁচার পথ নেই। দোহার অংশের ১০ কিলোমিটার পথ মানে বছরের পর বছর ধরে খানাখন্দ আর ডোবা। যেন মরণফাঁদ।
পালামগঞ্জ থেকে পদ্মা তীরবর্তী মৈনটঘাট পর্যন্ত রাস্তাটিকে সড়ক বলাই মুশকিল। যদিও দোহার নবাবগঞ্জবাসী ছাড়াও অর্থ ও সময় সাশ্রয়ের আশায় ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষ এ পথ ধরেন। কিন্তু শুধু ভোগান্তিই জোটে তাদের। এ সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় জনসাধারণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এলাকাবাসী দ্রুত এ সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গার রেজাউল করিম বলেন, অল্প সময়ে ঢাকা যেতে এ রাস্তাই আমাদের কাছে খুব সহজ। কিন্তু রাস্তার কারণে এক ঘণ্টার পথ যেতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। আর কষ্ট তো আছেই।
একই অভিযোগ দোহারের কার্তিকপুরের বাসিন্দা সোহরাব হোসেনেরও। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে রাস্তাটিতে সর্বশেষ কাজ হয়েছে। এরপর ১০ বছর চলে গেলেও সংস্কার হয়নি। ফলে আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তায় কোথাও কোথাও না আছে খোয়া, না ইট না পাথর। স্থানে স্থানে খানাখন্দ ও ধুলোবালুর স্তূপ। বৃষ্টি নামলেই যা পরিণত হয় ডোবায়। পথের আশপাশের বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ঢেকে গেছে ধুলোবালুতে। পথচারীদের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত।
যমুনা বাস সার্ভিসের চালক রুপম বলেন, ছেলেমেয়েদের জীবিকার স্বার্থেই এ রাস্তায় গাড়ি চালাই। ধুলোবালুতে গাড়ির যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে। গর্তে পড়ে গাড়ির ঝাঁকুনির কারণে যাত্রীদের গালিগালাজও শুনতে হয়। ৪০ কিমি. রাস্তা যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
২০১০ সালে অগ্রাধিকার সংস্কার প্রকল্পের (পিএমপি) আওতায় নবাবগঞ্জ অংশে বর্ধনপাড়া থেকে দোহারের বাঁশতলা পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ৫ কিমি. রাস্তার কাজ বন্ধ থাকে। গত বছরের শেষের দিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ কাজের দরপত্র আহ্বান করে। মেসার্স কামাল অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়।
চলতি বছরে জানুয়ারির প্রথমদিকে কাজ শুরু করলেও তা থেমে যায়। তারপর কেটে গেছে ২ মাস। কাজ থেমে থাকার কারণ হিসেবে সওজের কর্মকর্তারা কিছু বলতে না চাইলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একজন মো. মোর্শেদুল হক বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মালামাল আনার সমস্যার কারণেই কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত শেষ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক ইকবাল বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। এসব রাস্তার বিষয়ে তার ভালো তথ্য জানা নেই। তবে সব জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খায়রুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।