দোহার – নবাবগঞ্জে নাজমুল হুদাকে নিয়ে গুজবের পর গুজব

1126

নাজমুল হুদা, এক আলোচিত – সমালোচিত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের নাম। দোহার-নবাবগঞ্জ তথা ঢাকা জেলা সহ রাজনৈতিক জনপ্রিয় নাম। সব-সময় ই আলোচনায় থেকেছেন, বিভিন্ন কর্মকান্ডে সমালোচিতও হয়েছেন। দলীয় শৃলংখা ভংগের অভিযোগে বার বার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন; আবার জনপ্রিয়তার কারণে দলেও ফিরে গেছেন। এমনকি নিজেও পদত্যাগ করেছেন। আবার দেখা গেছে তার নিজ হাতে গড়া বিএনএফ থেকেও বহিষ্কৃত হয়েছেন। তাকে নিয়ে দোহার – নবাবগঞ্জে গুজবের অন্ত নেই। এক গ্রুপ তা বিশ্বাস করে, অপর গ্রুপ তা হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়। তবে আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে নাজমুল হুদা কেন্দ্রিক দোহার – নবাবগঞ্জ রাজনীতিতে।

একের পর এক নাজমুল হুদাকে নিয়ে গুজবে উচ্চকিত দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপি। আজকে তিনি তারেক জিয়ার সাথে কথা বলেছেন, কালকে ম্যাডাম জিয়ার সাথে দেখা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফিরছেন, আজ তারেক জিয়ার সাথে সিঙ্গাপুরে দেখা করে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেছেন; এরকম এক পর এক গুজবে দিশেহারা দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপি। এক কথায় পুরো ঢাকা জেলা বিএনপি। ফলে একদিকে সর্ব সময়ে সুবিধাভোগী কিছু বিএনপি নেতা যেমন খুশিতে বগল বাজায় অপর দিকে দলের দুঃসময়ে দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপির হাল ধরে থাকা নেতারা আছেন চরম আতংক ও সংশয়ে। নাজমুল হুদা যদি দলে ফিরে আসেন তাহলে সেই বিএনপিতে কি তাদের জায়গা হবে নাকি হারিয়ে যাবেন নব্য চাটুকারদের ভীড়ে। কেননা নাজমুল হুদার দলত্যাগ; ঢাকা জেলা বিএনপিসহ এক কথায় মহানগর বিনেপি’তে এর আঁচ পড়ে। আন্দোলন সংগ্রামে সাংগাঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি।

গুজব রয়েছে তিনি দলের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ঢুকছেন; একই সাথে ফিরে পেতে পারেন ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদ। আর তা না হলে মহানগর বিএনপি’র সভাপতি বা সেক্রেটারী পদ। অথবা শুধুমাত্র ভাইস – চেয়ারম্যান পদ নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এবার গুজব তারেক জিয়ার শ্বাশুড়ী’র মাধ্যমে তারেক – হুদা ফোনালাপ হয়েছে। আর এতে নাকি তিনি ফিরে পাচ্ছেন দলীয় শীর্ষ পদ।

একথা নিঃসন্দেহ যে দোহারের রাজনীতিতে নাজমুল হুদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা। বিশাল জনগোষ্ঠির নিকট তিনি এখনো জনপ্রিয় তার উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য। কিন্তু বার বার বহিষ্কৃত ও নিজে দলত্যাগী এবং নতুন দল গঠনকারী এই নেতা – কে অনেকে সাবেক প্রেসিডেণ্ট  এরশাদের হটকারীতার সাথে তুলনা করে থাকেন।

দোহার বিএনপির দুঃসময়ে যিনি হাল ধরে ছিলেন, দলের প্রতি যিনি সবসময়ে আনুগত্য প্রকাশ করেছেন  দোহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ এর মতো এমন নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মিরা যারা ব্যক্তি নয়, সর্ব সময় দলের সাথে থেকেছেন। এক এগারো সময়ে নির্যাতন, মামলা বা রিমান্ডের শিকার হয়েছেন যারা বিএনপি ছেড়ে কোথায় যান নি, যদিও এমন অনেক প্রস্তাব ছিল বিএনপি ছাড়লে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহযোগীতা পাবেন। কিন্তু দলকে সংগঠিত রাখতে, জাতীয়তাবাদী চেতনা সমুন্নত রাখতে  তারা  ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে নাজমুল হুদা যখন নতুন দল গঠন করলো দোহার উপজেলা বিএনপির অনেক নেতাকর্মী তার পদাংক অনুসরন করে বিএনপিতে ছাড়লেও দলের দুঃসময়ে সাহাবুদ্দীন আহমেদ, ডালু খন্দকার বা সিরাজুল ইসলাম ভুলুর মতো লোকেরা ধরেছিলেন দোহার বিএনপির হাল। যদিও এসব কমিটিতে ছিল হুদা অনুসারী কিন্তু বিএনপি পন্থী নেতা-কর্মী।

অন্য খবর  বিএনপিকে কেন অনুমতি দেয়া হয়নি তা আমার জানা নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কোনভাবেই যেন হুদার প্রচ্ছন্ন প্রভাব থেকে বের হতে পারছিলেন না তারা। অবঃশেষে দোহার উপজেলা নির্বাচনে স্পষ্টত দু;ভাগ হয়ে গেল বিএনপি। সেখানে ব্যাঃ হুদার ইমেজ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করলেন তার অনুজ ও ঢাকা জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি কামরুল হুদা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীমা রাহিম। এরপরই মূল দল থেকে দূরত্ব বাড়তে থাকে হুদাপন্থীদের। এতে সংকটে পড়ে আন্দোলনে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়া দোহার – নবাবগঞ্জ বিএনপি।

সেই সব ত্যাগী নেতা-কর্মিরা দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করে পরম মমতায় আগলে রাখেন দোহার নবাবগঞ্জ বিএনপি। সীমিতি পরিসরে নেতা বিহীন বিএনপি কোনরকমে নামকাওয়াস্তে চালিয়ে যেতে থাকেন দলীয় কর্মসূচী। অনেক নেতা – কর্মি আটক হলেও অদৃশ্য কারনে হুদাপন্থীরা রয়ে যান থানা পুলিশের নাগালের বাহিরে। বর্তমানে দোহার উপজেলা বিএনপি মোটামুটি গুছিয়ে আনলেও কয়েক দিন পর পর নাজমুল হুদাকে দলে যোগদানের গুজব তাকে এবং দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্গখলাকে বার বার করছে আঘাত। ফলে কোন ভাবেই সুসংগঠিত করতে পারছেন না দোহার উপজেলা বিএনপি।

বাংলাদেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সম্ভাব্য দোহার-নবাবগঞ্জের আগামী দিনের নেতা  ভিপি কামাল এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।

এদিকে দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপির আরেক কাণ্ডারি নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নির্বাহী খন্দকার আবু আসফাকও কয়েকদিন পর পর নাজমুল হুদাকে নিয়ে সংগঠিত এইসব গুজব নিয়ে বিরক্ত। তার মতে এতে তার নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এক সময়ের নাজমুল হুদার গ্রুপের অন্যতম শক্তিশালী এই নেতাও নাজমুল হুদা বিএনপি ছেড়ে গেলেও তিনি দল ছাড়েন নি। যদিও তিনি একসময় চেয়েছিলেন নাজমুল হুদা দলে ফিরে আসুক কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বার বার বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যাওয়া নাজমুল হুদাকে নিয়ে তিনি আর চিন্তা করেন না। বরং কয়েক দিন পর পর নাজমুল হুদাকে নিয়ে বেরোনো রং মাখানো বিভিন্ন অতি রঞ্জিত নিউজ নিয়ে তিনি দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

খন্দকার আবু আশফাক, নাজমুল হুদার বিএনপিতে যোগ দান গুজব প্রসংগে বলেন, দোহার – নবাবগঞ্জ বিএনপি খন্দকার আবু আশফাকের নেতৃত্ব বর্তমানে সুসংগঠিত আছে। দলের চেয়ারপার্সন তাকে দলে নিলে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো । তবে সেক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মিদের মাঝেতো উস্মা থাকবেই। নেতা-কর্মিদের মাঝে যে দূরত্ব রয়েছে সেটা হুদা ভাইকে – ই মেটাতে হবে।

একের পর এক কয়েক দিন পর পর নাজমুল হুদার বিএনপিতে যোগদানের খবর নিয়ে তোলপাড় দোহার-নবাবগঞ্জের বিএনপি।

এদিকে দোহারে নাজমুল হুদার বিএনপিতে যোগদানকে কেন্দ্র করে সংশয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোহার বিএনপি’র শীর্ষ এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতা বলেন, “ নাজমুল হুদা বিএনপি’কে যে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে সময়ের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপি সে ক্ষতি পুষিয়ে ঊঠলেও এখন আবার হটাৎ করে তার বিএনপিতে যোগদানের গুজব দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের যারা দলের দুঃসময়ে বিএনপির হাল ধরে ছিলেন তাদের শুধু হতাশই করছে না সুবিধাভোগী কিছু বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য বিএনপিকে আবার টেন্ডারবাজদের দলে পরিনত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।  ফলে একদিকে বিএনপির দুঃসময়ে ব্যক্তিপূজা না করে আমরা দলের সাথে থেকেছিলাম যেমন আতংকিত ঠিক তেমনি ভাবে টেন্ডারবাজ সুবিধাভোগী নেতারা যারা ব্যক্তিপুজোর রাজনীতি করে তারা উৎফুল্ল। এই ভাবে তো একটা দল চলতে পারে না। দলে এতদিন পরে তাদের পরিচয় কি হবে আর আমাদের – ই বা কি হবে। কে কাকে মূল্যায়ন করবে। ”

অন্য খবর  দোহারে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মানবন্ধন: পদ্মায় চাই বাঁধ

ব্যরিষ্টার নাজমুল হুদা যেসময় দল থেকে বের হয়ে যায়  সেসময় দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপি হয়ে পড়েছিল অভিভাবক শুন্য। ফলে কোন্দল মুক্ত দোহার-নবাবগঞ্জ বিএনপি বা বৃহত্তর ঢাকা জেলা বিএনপিতে সৃষ্টি হয় শুন্যতা। ফলে এক সময়ের ঐক্যবদ্ধ বিএনপি হয়ে পড়ে ৪ থেকে ৫ গ্রুপে বিভক্ত। ফলে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রামে কোন ভূমিকাই রাখতে পারে নি বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। ফলে বিএনপির এই বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে দুর্বল করার দায় ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে নিতে হবে বলে মনে করেন বর্তমানে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের  নেতা কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোহার এর বিএনপির এক ইউনিয়ন পরিষদ সভাপতি ক্ষোভের সাথে নিউজ৩৯কে বলেন, আমরা এক সময় দাদা বলতে অন্তপ্রান ছিলাম। তার জন্য আমরা যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তিনি একের পর এক আত্মঘাতি ও বিএনপিতে ভাঙ্গন ধরানোর জন্য প্রথমে বিএনএ পরে বিএমপি গঠন করেন। ফলে তিনি স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে সৃষ্ঠি করেছেন হতাশা। ফলে তার জায়গা তিনি তার কিছু চটুকার ছাড়া দলের সবার কাছে হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি দোহারে আর বিএনপির জন্য কোন বড় ফ্যাক্টর না।

দোহার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ নিউজ৩৯কে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে দাদা(নাজমুল হুদা) দলে ফিরছেন বলে গুজব থাকলেও এর কোন ভিত্তি তিনি খুজে পান নি, আর তার ফিরে আসার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। তবে তিনি যদি ফিরে আসেন সিনিয়র নেতা হিসাবে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো, তবে উনি ফিরে আসলেন আবার পরিস্থিতি অনুসারে বের হয়ে গেলেন এবং নতুন দল খুললেন সেটা তো মেনে নেয়া যায় না। তাছাড়া বিএনপির নেতা কর্মীরা এখন আর কোন ব্যক্তির অনুসারী নয়। তারা দলের অনুসারী, দাদাকে যদি দল মনে করে নিবে। তবে দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে আমরাও তাকে মেনে নিবো।

আপনার মতামত দিন