দোহার-নবাবগঞ্জে ইজি বাইক নাম হলেও ভাড়ার ক্ষেত্রে হার্ড রাইড

126

শরিফ হাসান ও আব্দুর রাহিম, স্টাফ রিপোর্টারঃ দোহার-নবাবগঞ্জে রাস্তায় সবচেয়ে বেশি যে যানবাহন দেখা যায় সেটি হলো তিন চাকার হালকা ইজি বাইক। যাত্রীরা নিত্য যাতায়াতের জন্য বেশি পছন্দ করছেন এই গাড়িটিকে। একটি গাড়িতে সচ্ছন্দে প্রায় ৪ থেকে ৬ জন যাওয়া যায়। আর এই যান অবাধ চলাচলের জন্য রাতারাতি জন্ম হয়েছে এক গায়েবি সংগঠন। নাম তার ‘অটোবাইক মালিক সমিতি। অথচ তাদের নিজেদেরই সরকারি নিবন্ধন নেই। কিন্ত  হঠাৎ করেই, ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে ভুঁইফোড় সংগঠনটি। ইতিমধ্যে দোহারে এদের তৎপরতার কারণে চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্‌বিতণ্ডাসহ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।

তবে অটোচালকদের ধারণা, একটি স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেট দোহার-নবাবগঞ্জে ইজিবাইকচালক ও মালিকদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর প্রকাশ হিসেবে প্রথমে ইজিবাইকে চলাচলের ভাড়ার তালিকা ধরিয়ে দিয়ে চালক ও যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। পরবর্তীতে শ্রমিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুদূরপ্রসারী চিন্তা রয়েছে বলে অনেকের আশংকা।

সংগঠনের পক্ষে যেকোনো দূরত্বে ইজিবাইকের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা দাবি করা হয়েছে। এই ভাড়া না মানলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। এমনকি গাড়ি এক দিন আটকে রাখা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।  তাদের এ ক্ষমতা কে দিলো? এর আইনগত বা নৈতিক ভিত্তি কি এসবের কোন সদুত্তর তারা কেউই দিতে পারেননি। তাদের এক কথা পাচ টাকা কোন ভাড়া নাই।

অন্য খবর  দোহারের নারিশায় বেপারী পরিবারের ত্রাণ বিতরণ

সম্প্রতি দেখা যায়, দোহারে চলাচল করা ইজিবাইকের ভেতর একটি ভাড়ার তালিকা টাঙানো রয়েছে। এতে উপজেলার অটোবাইক মালিক সমিতির অনুমোদন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে একাধিক ইজিবাইকচালক ও মালিকের সঙ্গে কথা বলে এই সমিতির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

নবাবগঞ্জ থেকে দোহারের জয়পাড়ায় আসা প্রতিদিনকার যাত্রী চন্দন বলেন, ‘ইজিবাইকের চালকেরা কি মগের মুল্লুক পেয়েছেন! রাতারাতি ভাড়া বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। আর এটা কি প্রশাসন দেখবে না? তাদেরতো তেল গ্যাস কিছু লাগে না। আর এখনো তো বিদ্যুতের দাম বাড়েনি।’

নারিশা পশ্চিম চর থেকে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে যাতায়াতকারো শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ইজিবাইক দেশে সহজলভ্য এবং একটি ঝুকিপূর্ণ  যান। এদের আবার সমিতি কিসের? আসলে দোহার-নবাবগঞ্জে অটোবাইক মালিক সমিতি নামে একটি অবৈধ চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

উপজেলার জয়পাড়া সেতুর ঢালে ইজিবাইকের চালকের সঙ্গে তর্ক করছিলেন যাত্রী আবুল কালাম। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি লটাখোলা বাজার থেকে জয়পাড়া ব্রিজের ঢালে এসে আগের ভাড়া ৫ টাকা দিয়েছি। কিন্তু চালক তা না নিয়ে আমার কাছে ১০ টাকা দাবি করছেন। কারণ জানতে চাইলে চালক গাড়িতে টাঙানো ভাড়ার তালিকা দেখিয়ে দেন।’

অন্য খবর  শিক্ষাই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেঃ আব্দুল মান্নান খান

ওই ইজিবাইকের চালক হোসেন বলেন, ‘আপনি যেখান থেকেই উঠেন না কেন, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।’ মূল্য কারা নির্ধারণ করেছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভাড়া তালিকা কারা করেছে, আমরা জানি না। তবে, নতুন এই ভাড়ার তালিকা তৈরি করাতে যাত্রীর সঙ্গে আমাদেরও অনেক ঝগড়া হচ্ছে।’

ভাড়া বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে ইজিবাইকের চালক রাকিব হোসেন বলেন, ‘দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাই আমরা ইজিবাইকের ভাড়াও বাড়িয়েছি। আর বাজারের জ্জিনিসপত্রের যে মূল্য, আমাগো তো বাচতে হইবো।’

জয়পাড়া পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে এটা কারা করেছে, সেটা জানার চেষ্টা করছি।’

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশ্বের আলম বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ইজিবাইকের ভাড়ার একটি তালিকা দেখেছি। তবে অটোবাইক মালিক সমিতি নামে দোহারে কোনো সমিতির সন্ধান পাওয়া যায়নি। কে বা কারা এই কাজটি করেছে, তাঁদের খোঁজা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত দিন