ঢাকার দক্ষিনের পদ্মা ঘেষা দুই উপজেলা দোহার, নবাবগঞ্জসহ দেশের ১৪টি উপজেলায় গ্রাম ও শহর মিলিয়ে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে নগর উন্নয়ন অধিদফতর। জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রতিফলন ঘটিয়ে এ ধরনের ভূমি ব্যবহারভিত্তিক পরিকল্পনা দেশে এটিই প্রথম। বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে গণপূর্ত অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘গৃহায়ণ নীতিমালা : সাধ্যের আবাস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নগর গবেষণা কেন্দ্রের সাম্মানিক সচিব ড. নুরুল ইসলাম নাজেম এ তথ্য জানান।
তিনি ‘মানব বসত, ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।
১৪ উপজেলার মধ্যে রয়েছে- ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার, মাদারীপুরের শিবচর, নরসিংদীর শিবপুর ও রায়পুরা, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, ফরিদপুর সদর, রাজশাহীর বাগমারা, মেহেরপুরের গাংনী, গাইবান্ধার সাঘাটা, বগুড়ার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি, কক্সবাজারের রামু এবং চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া।
আগামী বছরের জুনের মধ্যে ‘প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর ফোরটিন উপজেলাস’ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি প্যাকেজে এ উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজ সম্পন্ন হবে বলে নগর উন্নয়ন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরপরই এটি দেশের সব উপজেলায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
সভায় নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, ‘১৯৭৩-৭৪ সালে মোট ভূমির ৬০ শতাংশ ছিল নিট কর্ষিত ভূমি। ২০১০-১১ সালে তা কমে হয়েছে ৫৩ শতাংশ। পতিত জমির পরিমাণও কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এই একই সময়ে বসতভূমির পরিমাণ ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ শতাংশ। এই হারে কৃষি জমি কমতে থাকলে বাংলাদেশ বিভিন্ন ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
সার্বিক উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও শহরভিত্তির পরিকল্পনার নানা ত্রুটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গ্রামের বসতি, উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে কৃষির উন্নতি, পানি ব্যবস্থাপনা, বনজসম্পদ বৃদ্ধি, গ্রামের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান ও সেবা দেয়ার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা অতীতে নেয়া হয়নি। সম্প্রতি নগর উন্নয়ন অধিদফতর ১৪টি উপজেলায় গ্রাম ও শহর মিলিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উন্নয়ন পরিকল্পনা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে কৃষি জমি সুরক্ষা, বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রাম-শহরের মধ্যে অধিকতর সংযোগ ও ভারসাম্য আনা এবং উন্নয়নে গতি সঞ্চার করা। এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে গ্রামে রাখা যাবে।’
বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারলে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা সহজ হবে বলেও মনে করেন নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, পাঁচটি স্তরে উপজেলাভিত্তিক এই উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজ সম্পন্ন হবে।
কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে জানিয়ে সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘১৪টি উপজেলায় যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সব উপজেলায় এটা করতে হবে। পরিকল্পিত আবাসন করতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ১৪ জেলায় যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে এটি উৎসাহব্যঞ্জক। সঠিকভাবে এটি বাস্তবায়ন করা গেলে এটি একটি নতুন ধারণার সূচনা করবে। টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আসবে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক আইনি কাঠামো কোথায়? সেটা দরকার।
ইনসস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) সভাপতি এ কে এম এ হামিদ বলেন, ‘বড় লোকদের বাগানবাড়ি করার প্রবণতা রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করতে হবে। এখন ১৪ উপজেলায় উন্নয়ন পরিকল্পনা শুরু হয়েছে, সারাদেশে করতে সময় লাগবে। কিন্তু দেশের সব উপজেলায় একজন করে জুনিয়র আর্কিটেক্ট নিয়োগ দিয়ে কাজটি এখনই শুরু করা যায়।’
নগর উন্নয়ন অধিদফতরের পরিচালক খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার। অনুষ্ঠানে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবু সাদেক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আকতার মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।