দোহারে পদ্মা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

1822

দোহারের নয়াবাড়ী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। এর আগে দফায় দফায় বন্ধ ছিল প্রকল্পের কার্যক্রম। ফের কাজ শুরু হলেও এখন বাঁধের ব্লক তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের পাথর ও বালু। জানা যায়, এ বাঁধের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে তিন বছর। এ তিন বছরের মধ্যে দুই বছর সময় লাগবে ব্লক তৈরিতে। বাকি এক বছর সময় লাগবে পদ্মাপাড়ে ব্লকগুলো স্থাপনে। গত ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ব্লক তৈরির কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্লক তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। ব্লক তৈরিতে যেখানে ব্যবহার করার কথা উন্নতমানের কালো পাথর, সাদা বালু, সিলিকন বালু ও সিমেন্ট—সেখানে ব্যবহার হচ্ছে পদ্মা থেকে তোলা বালু। পাথর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে লাল পাথর (মরা পাথর)। মিশ্রণে সিমেন্টের পরিমাণও অনেক কম দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে ব্লকগুলোর স্থায়িত্ব কম হবে বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পে কাজ করার কয়েকজন শ্রমিক। উপকরণ মিশ্রণে সাদা বালু (পদ্মা নদী থেকে তোলা) বেশি পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে ব্লক তৈরির পরপরই অনেকটা ফেটে যাচ্ছে।

অন্য খবর  করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু; পাভেলের নেতৃত্বে রাতে দাফন

এলাকাবাসী আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, এ কাজে আমার কমবেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ প্রকল্পে যে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। সিমেন্টের পরিমাণ কম ব্যবহার করায় অনেক ব্লকেই ফাটল দেখা যাচ্ছে, ব্যবহূত পাথরগুলো মরা পাথর। তিনি বলেন, ‘এখনই যদি ব্লকে ফাটল ধরে তাহলে ভবিষ্যতে কি হবে, তা ভেবে আমরা হতাশ। সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প পানিতে যাবে। ’

কৌশলে কথা হয় ব্লক তৈরির মিক্সার মেশিন পরিচালনাকারী মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে পাথর দিয়ে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে এটা লাল পাথর। এটাকে সবাই মরা পাথরও বলে। এই মরা পাথর দিয়ে চীনা কোনো কম্পানি হলে কাজই করত না। ওরা (চীনারা) যে পাথর ব্যবহার করে ওটা চার পয়েন্টের কালো পাথর। ওই পাথরে কোনো গুঁড়া ও মরা পাথর থাকে না। এ পাথর দিয়ে তৈরি করা ব্লক অনেক মজবুত হয়।

প্রকল্পে কর্মরত ঠিকাদার মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমাদের বড় ঠিকাদার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই ব্লক তৈরি করছি। ভালোমন্দ আমাদের ওই ঠিকাদার জানেন। ব্লক তৈরিতে ব্লকের ভেতরে কোনো নেট বা খাঁচা ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না ভেতরে কোনো নেট বা খাঁচা ব্যবহার হচ্ছে না। শুধু পাথর, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। ’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশের কোথাও ব্লকের ভেতরে কোনো নেট বা খাঁচা ব্যবহার করা হয় না। ব্লক তৈরিতে কালো পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে লাল বা মরা পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাথর কোথা থেকে আসে আর সেটা কেমন পাথর এটা আমার জানা নাই। এ ব্যাপারে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন। ’

অন্য খবর  গয়েশ্বর রায়কে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকা জেলা বিএনপি’র প্রতিবাদ

ব্লক তৈরিতে নিম্নমানের পাথর ও বালুর ব্যবহার প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী মো. বাবুল বলেন, ‘লাল পাথরটা ভুলে এসে গেছে, এটা নিয়ে আমাদের অফিসে অনেক কিছু হয়ে গেছে। ’ ব্লক তৈরিতে পাথর ও বালুর পরিমাণের হেরফের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা শ্রমিকরা গরমিল করেছে।

 

আপনার মতামত দিন