দোহারে পদ্মায় বালুদস্যুতা নির্বিকার প্রশাসন

248

ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে পদ্মার মৈনটঘাট এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর, শ্রীকৃষ্ণপুর ও চরবৈতা গ্রামের হাজার হাজার মানুষের বসতভিটা।

জানা যায়, ১০ বছর আগে মাহমুদপুর ইউনিয়ন থেকে পদ্মা নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় ৫ কিলোমিটার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পদ্মার তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে সে দূরত্ব আজ শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। এভাবে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর মাহমুদপুর ইউনিয়নের শত শত বিঘা ফসলি জমিসহ শতাধিক বাড়িঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই ভূমিদস্যুরা। এলাকার কিছু চিহ্নিত ভূমিদস্যুÑ মোবারক হোসেন ওরফে মোবারক, সুজন পেশকার, আফজাল শিকদার, তোফাজ্জল শিকদার, বাহের খাঁ ও সোহরাবের নেতৃত্বে চলছে এই অবৈধ মাটি কাটার কাজ। তারা দৈনিক ২৫০-৩০০ ট্রাক মাটি পদ্মার তীর থেকে কেটে নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর এলাকার তরুণদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরুল করিম ভূঁইয়া বরাবর অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। তিনি দোহার থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ইউএনওর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি ওসির কাছে জমা দিলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু ওসি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এবং ওই দিনই ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাটি কাটা বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপর গত ২ জানুয়ারি থেকে আবারও মাটি কাটা শুরু হয়।

অন্য খবর  সব শঙ্কা দূর করে জয়পাড়া কলেজের ছাত্র সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

বিষয়টি তাৎক্ষণিক দোহার উপজেলার ইউএনওকে ফোনে অবহিত করা হয়। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা করেও দেখা করা যায়নি।

মূলত ভূমিদস্যুরা স্থানীয় চেয়ারম্যান, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ কার্যক্রম। এভাবে আরও কিছুদিন চলতে থাকলে মাহমুদপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ তাদের সবকিছু হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়বে। পাল্টে যাবে দোহারের মানচিত্র। হারিয়ে যাবে মাহমুদপুর ইউনিয়নের অস্তিত্ব। এ ছাড়া বালুর ট্রাক থেকে বালু উড়ে এলাকার পরিবেশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মাহমুদপুরের জীববৈচিত্র্য। ট্রাক থেকে ধুলাবালি ওড়ার কারণে পুরো এলাকা এখন বসবাস ও চলাফেরার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আপনার মতামত দিন