দোহারে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গন চলছেই। এ পর্যন্ত শতাধীক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এক তো পদ্মায় প্রবল স্রোত অপর দিকে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে প্রায় শতাধিক বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নতুন করে মুকসুদপুরের পুরুলিয়া থেকে নারিশা ইউনিয়নের পূর্বচর পর্যন্ত নদী পারের ২টি গ্রাম পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এলাকাবাসী সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, গত বছর দোহারের ভাঙনকবলিত এলাকায় সাড়ে তিন কি.মি স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ একনেকে পাস হয়। কিন্তু গত শুষ্ক মৌসুমেও এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে ভাঙন এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের বাড়ছে।
গত এক সপ্তাহে নারিশা ইউনিয়নের রানীপুর ও মধুরচর গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী নারিশা পশ্চিমচর গ্রামের ইতিমধ্যে ১৫টি পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে মেঘুলা বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা ও মধুরচরে ২ শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। চর বিলাশপুর ও মুকসেদপুরের আরও ২০টির মতো ঘরবাড়ি পদ্মায় চলে গেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছে এলাকার অসহায় মানুষ। যেন তাদের দেখার কেউ নেই। দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অচিরেই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে আরও কয়েক হাজার পরিবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘুলা বাজার দক্ষিণে রানীপুর গ্রামের ব্রিজটির অধিকাংশই পানির নিচে ডুবে রয়েছে। বাকি অংশ ওপরের দিকে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, গত ২ বছরে প্রায় ২ হাজার পরিবারের বসতভিটে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো সর্বস্ব হারিয়ে দুখে কষ্টে জীবন কাটছে।
নারিশা ইউপি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন দরানী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকা পরিদর্শনও করেছে। ভাঙ্গনরোধে জরুরি ভিত্তিতে নারিশা, মেঘুলা, নারিশা খালপাড়, নারিশা পশ্চিমচর গ্রামে জিও ব্যাগ ডাম্পিং প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার অনুমোদন দিলেই ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে ভুক্তভোগীরা।
দোহার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শামীম আরা নিপা বলেন, নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করার কথা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও অবগত করা হয়েছে।
বর্ষা মৌসুম এলেই ঢাকার দোহারের পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বেড়ে যায়। কেননা প্রতি বছরই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। গত ৫ বছরে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে হাতনী, পানকুন্ড, ধোয়াইর, অরঙ্গাবাদ, বালেঙ্গাসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে কয়েক হাজার পরিবার।