দোহারে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ভাসছে পানিতে

283
দোহারে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ভাসছে পানিতে

হঠাৎ করে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার দোহারের কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন ভাসছে পানিতে। দোহার ও পার্শবর্তী জেলা ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন উপজেলায় এবার বোরো এবং আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে । এই দুই উপজেলার সর্বত্র পাকা ধানের সোনালী শীষ যেন হাতছানি দিচ্ছিলো । নুতন ধানের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গ্রামের পর গ্রাম। আশায় বুক বেঁধেছিল স্বপ্নে বিভোর কৃষকেরা । ধান কাটার আর কটা দিন বাকি। ঠিক তার আগ মুহূর্তে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেল দোহার উপজেলার মাহমুদপুর, কুসুমহাটি, বিলাশপুর এবং ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর ঝাউকান্দা, গোপালপুরের প্রায় ১৯০ একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান ।

জোয়ারের পানি পদ্মার কয়েকটি শাখা নদী দিয়ে ঢুকে পড়ায়। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকা বোরো ধান ও আউশ ধানের জমি তলিয়ে গেছে। পদ্মা নদীর আশেপাশের এলাকার ধানের সাথে তলিয়ে গেছে কৃষকের বুকভরা স্বপ্নও।

আর এ তলিয়ে যাওয়া ধান নিয়ে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । কৃষি শ্রমিকের চরম সংকট দেখা দিয়েছে এই এলাকায় । চড়া মজুরি দিয়েও পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া না যাওয়ায় দুশ্চিন্তাই পড়েছেন কৃষক। আবার ধান না তুললেও কৃষককে না খেয়েই মরতে হবে । তাইতো জীবন পণ করে এলাকার নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবকরা পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কেটে নৌকাযোগে পারে আনার চেষ্টা করছেন।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা

চর মাহমুদপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, জোয়ারের পানিতে তার প্রায় ৭ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। ১০০০ টাকা করে ছয়জন শ্রমিক এনে ধান কাটার চেষ্টা করছেন। পানিতে শ্রমিকরা তেমন ধান কাটতে পারছেন না।

নারানপুর গ্রামের কৃষক সামাদ বেপারী বলেন, অন্য বছর ধান কাটার এক দেড় মাস পর তাদের জমিতে পানি আসে। এবার ধান কাটার আগ মুহূর্তে হঠাৎ পানি এসে কৃষকের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। যেভাবে ধান কাটা হচ্ছে এতে প্রতি মণ ধানে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হবে।

চর ঝাউকান্দার কৃষক বাবুল জানান, ” আমি ১৩ বিঘা ধান বুনছিলাম। সব ধান এখন পানির নিচে। ডুবিয়ে ডুবিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে আমাদের। অনেক লোকশান হবে এবার।

নারানপুর গ্রামের আরেক কৃষক লতিফ ভুইয়া বলেন, ” পানিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। অনেক পানি বাড়ছে আর একারণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। “

চর বৈতা গ্রামের কৃষক হোসেন মোল্লা জানান, ” আমরা কয়েকজন মিলে ৩৪ বিঘা জমিতে ধান রোপন করছি। অর্ধেক জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না। তিনি আরো জানান, কৃষকরা তাদের ৫০ ভাগ ধান কাটতে পারবে না বলে আমি মনে করেছি।

অন্য খবর  উদ্বোধন করা হলো নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার ল্যাব

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোহারের পদ্মা পাড়ের এলাকার শত শত কৃষকের বোরো ও আউশ কয়েকদিনের জোয়ারের পানিতে অনেক জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। আবার অনেক জমির ধান ভাসছে বন্যার পানিতে। অথচ গত সপ্তাহেও খেতের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিল সবুজের সমারোহ। যা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষকরা।

কৃষকের সোনালী স্বপ্ন পানিতে ভাসার কারনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের। সরকারি সহয়তায় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন কৃষকরা এমনটাই প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।

এবিষয়ে দোহার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মামুন ইয়াকুব বলেন, দোহারে কিছু স্থানে ধান খেতে পানি টুকেছে এতে কৃষকরা কিছু টা ক্ষতির মধ্যে পরবে বলে আমরা আশা করি। আমাদের কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছে আর এতে হয়তো কিন্তুটা ক্ষতি কম হবে এবং এতে পানির নিচে ধান থাকলে পঁচে যাবে সে থেকেও তারা রক্ষা পাবে এই ধান কাটার জন্য। আমাদের দোহারে ক্ষতির পরিমান ২% হবে। সারাদেশে সরকার ক্ষতিগ্রহস্থ কৃষকদের সহায়তা দিলে দোহারের কৃষকরাও এ সহায়তা পাবে।

আপনার মতামত দিন