দোহারের গ্রামগুলোতে তাঁতের শব্দ শোনা যায় না

546
তাঁতের শব্দ শোনা যায় না

এক সময় গ্রামের ভিতর দিয়ে হেঁটে গেলে শোনা যেত তাঁতকলের খট খট শব্দ। সেইসঙ্গে কাজের তালে তালে কারিগরদের কণ্ঠে জারি-সারি আর ভাটিয়ালি গান। কিন্তু সেই গ্রামগুলোতে আজ আর তাঁতের শব্দ শোনা যায় না, শোনা যায় না চিরচেনা খটখট।

আজ তাঁতপল্লীর অধিকাংশ তাঁতকল বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় মূলধন, কাঁচামালের অভাবে প্রশাসনিক জটিলতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলারও কয়েক হাজার তাঁত শিল্প আজ ধ্বংস হতে চলছে। প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্যেও দোহার নবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প আজ বিলীন হওয়ার পথে। বেশকিছু তাঁতি পরিবার এখনও তাদের পৈত্রিক ব্যবসাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

দোহার-নবাবগঞ্জের কারিগরদের সূত্রে জানা গেছে, এক সময় এ অঞ্চলের তৈরি তাঁতের কাপড় সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা ছিল। এমনকি এখানকার লুঙ্গি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হতো। যা কিনা জয়পাড়ার লুঙ্গি নামে সারা বিশ্বে পরিচিত কিন্তু ভারতের তৈরি কাপড়ে বাজার সয়লাব ও দেশি কাপড়ের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলে অধিকাংশ তাঁতকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কারিগররা কাজের অভাবে পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছে অন্য পেশায়।

অন্য খবর  বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জয়পাড়া কলেজে আলোচনা সভা

স্থানীয় কারিগরদের অভিযোগ, সুতার মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। সে হিসেবে বাড়ে নি লুঙ্গির দাম। বছরে দুই ঈদ ছাড়া এ ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছেন না তাঁতশিল্প মালিকরা। এ শিল্পে দক্ষ শ্রমিকেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাওয়ারলুম স্থাপনের কারণে জয়পাড়া এলাকার অনেক তাঁতি পরিবারই তাঁতের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।

রবিবার সরেজমিনে কথা হয় দোহার উপজেলার রাইপাড়া গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী মো. মুজিবুর বেপারী সাথে তিনি জানান, বর্তমান লুঙ্গির বাজার খুবই খারাপ। এক সময় লুঙ্গি তৈরি করে খুবই সচ্ছল ছিল তাঁতিরা। বর্তমান সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় ও সেই সঙ্গে লুঙ্গির দাম কমে যাওয়ায় এখন কোনমতে টিকে আছে এ শিল্প।

নবাবগঞ্জ উপজেলা তাঁতিলীগের সভাপতি মো. হাবিবুব রহমান হাবিব জানান, দোহার-নবাবগঞ্জের ঐতিহ্য তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে কারিগরদের মাঝে ঋণ প্রদান করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে এ শিল্প দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাবে।

দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আল-আমিন বলেন, সরকারি অনুদান ছাড়া আমাদের কোন কিছু করার নেই। সরকার থেকে তাঁতশিল্পের জন্য যদি কোন বরাদ্দ থাকে তাহলে আমরা দিতে পারবো।

আপনার মতামত দিন