তরুনদের ভাবনা: সচেতন না হলে বিপর্যয় আসছে দোহার-নবাবগঞ্জে

282

প্রথমেই বলব, বর্তমান বাংলাদেশ সহ বিশ্বের কোন দেশেই করোনা বা ক্যাভিড-১৯ এর অবস্থা ভাল নয়।সুস্থ রোগীদের আবারো নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার খবর আমাদের অজানা নয়। বিগত শতাব্দীগুলোর মহামারীর সাথে তুলনা করলে এখন পর্যন্ত সার্ভিকভাবে করোনা বা ক্যাভিড-১৯ এর কে অপ্রতিরোধ্য এবং বিগত মহামারীর চেয়ে এই মহামারীতে অধিক মানুষ মারা যাবে অথবা আক্রান্ত হবে বলেই বিশ্বাস করি। বিংশ শতাব্দীর স্প্যানিশ ফ্লু এর সময় কাল হিসাব করলে দেখা যায়, সেই সময়টা ছিল ১ম বিশ্বযুদ্ধ এর সময়। পাশাপাশি তখন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বর্তমান সময়ের মত আধুনিক ছিল না। কিন্তু এখন যুদ্ধ চলছে না, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আজকে অন্য গ্রহে ভ্রমণ করার সক্ষমতা অর্জন করেলেও বিগত প্রায় ৬ মাসেও (ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) আমরা এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি নি। এমনকি ক্যাভিড-১৯ ভাইরাসের উৎপত্তির ব্যপারেই এখনও দ্বিমত রয়ে গেছে।

করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করলে গা শিউরে উঠে। পুরো পৃথিবী ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে একটা সমস্যায় পড়ে গেছে। ইতোমধ্যেই তেলের দাম শূন্যের নিচে চলে গিয়েছে। বিভিন্ন দেশে থাকা বৈধ এবং অবৈধ সকল প্রকার প্রবাসীদের এক প্রকার জোর করেই দেশে পাঠানো হচ্ছে। আর যারা নিজ নিজ দেশ ফেরত যে পারছে না তারা মানবেতর জীবন যাপন এর সম্মুখীন হচ্ছে। আর বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রবাসীদের অনেক অবদান আছে। যদি এখন প্রবাসীরা কাজ করতে না পারে তবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড অর্ধেক ভেঙ্গে যাবে।

বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ। বর্তমানের এই অবস্থায় দেশের কৃষকদের অবস্থা শোচনীয়। জমির ফসল জমিতেই পড়ে থাকলেও ফসল কাটার লোক পাচ্ছে না। যদিও কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। তবে কৃষকরা তাদের নায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অনেক কৃষক মনের কষ্টে নিজের জমির ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে। তার প্রমাণ দেখা গেছে যশোরের ফুলের বাগানে। ফুল চাষীরা ফুলের নায্য দাম না পাওয়ায় এবং ফুলের বাজার ক্রেতা শূন্য থাকায় বাধ্য হয়েই নিজের গরু ছাগলকে ফুল খাওয়াচ্ছে।

অন্য খবর  প্রশাসনের একটি মহৎ উদ্যোগই ফিরিয়ে দিতে পারে খরস্রোতা ইছামতির রুপ যৌবন

একটি দেশের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আর একটি রাস্তা হচ্ছে আমদানি এবং রপ্তানি করা। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা অনেক ভাল। তবে এই নতুন পরিস্থিতিতে সব কিছু বন্ধ থাকায় আমাদের রপ্তানি শিল্প এখন অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রথমেই অর্থনৈতিক চিন্তা করার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এইদেশে এখনও দৈনিক রোজগারে চলাচল করা মানুষের সংখ্যা অনেক ভাবে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দিনমজুর এবং ভাসমান মানুষ গুলোর জীবন ঝুকির মধ্যে রয়েছে। হয়ত আগামী কয়েক মাস/বছরের মধ্যেই পৃথিবী থেকে বিদায় হবে এই অভিশাপ। কিন্তু এই কোভিড-১৯ আজীবনের জন্যে অভিশাপ হয়ে থাকবে বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে। স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি বন্ধ থাকায় ভবিষ্যতে ভয়ানক এক সেশন জটে পড়বে এই দেশের শীক্ষার্থীরা। যদিও কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে online ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে, তবুও এই পদ্ধতি উন্নত নয়। কেননা একটি বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রতিদিন এই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না প্রযুক্তির অভাবে। আজকে যদি উন্নত দেশ কানাডার দিকে তাকাই তাহইলে দেখা যাবে সেখানে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের সরকারের পক্ষ থেকে online কার্যক্রমে অংশ গ্রহনের জন্যে উপহার পাঠানো হয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করলে কোনভাবেই সম্ভব নয়।

দেশের অনেক বড় একটা জনসংখ্যা বেকার হয়ে যাবে যার জন্যে দায়ী থাকবে শুধুই কোভিড-১৯। আমাদের বর্তমান যুগের শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক এমন সংখ্যাই বেশি। তবে অনেকেই হয়ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারাবে যতদিনে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ততদিনে। অনেকেই বেসরকারি চাকরি করলেও তাদের চাকরি চলে যাবে শুধুমাত্র বেতন না দিতে পারায়। ফলে শিক্ষার্থীরা এক চরম হতাশায় পড়ে যাবে এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মাথা তুলে দাড়াতে সময় লাগবে।আর তার অন্যতম উদাহরণ এখন পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা(HSC) না হওয়া। অথচ বিগত বছর গুলোতে এই সময় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকে।

অন্য খবর  মসজিদে জামাতে নামাজের অনুমতি

করোনা/কোভিড-১৯ এর কারনে দেশের অন্যান্য উপজেলা গুলোর মধ্যে হয়ত দোহার নবাবগঞ্জ সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে। ঢাকা থেকে মাত্র কিছু কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষই প্রবাসী এবং ব্যাবসায়ী। তবে বর্তমানে প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই চাকুরিহীন অবস্থাতেই নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং তাদের পক্ষে পরিবারের ভরণপোষণ দেয়াটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা খুব একটা লাভবান হতে পারছে না। আবার, এই অঞ্চলে শিক্ষার হার যথেষ্ট কম থাকায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মাঝে সচেতনার অভাব রয়েছে। করোনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা গুলো গ্রহণ করতে তারা সবাই অনিচ্ছুক। ফলে ঢাকার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এই উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে হয়ত নদী ভাঙ্গনের স্বীকার এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে আসবে দারিদ্রতার অভিশাপ। পরিশেষে বলতে চাই, আমরা (মানুষরা) চাইলেই এই মহামারীকে নির্মূল করতে না পারলেও এর থেকে অন্তত পক্ষে নিজেদের রক্ষা করতে পারি শুধুমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে। যদি আমরা প্রত্যেক মানুষ সচেতন হই তাহইলে হয়ত করোনা মোকাবেলা খুব সহজ হবে এবং এর দ্বারা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারিবারিক সবক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের আবার প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।

শফিকুর রহমান জয়
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বড় রাজপাড়া, কলাকোপা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

আপনার মতামত দিন