ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) নির্বাচনী আসন। কেরানীগঞ্জের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনের সীমানা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তার বিপক্ষে এ আসনে লড়ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল মিলিয়ে রয়েছে আরো ৪ জন প্রার্থী। এলাকায় প্রবেশ করতেই বোঝা যায় দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। তবে সেটা যেন একটি দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা, শুভাঢ্যা, কদমতলী ও ইকুরিয়াসহ পুরো এলাকার মধ্যে নৌকা মার্কার পোস্টারে সয়লাব। ধানের শীষের ছিটেফোঁটাও নেই কোথাও।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কা দেখা গেছে শুধু তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই। আশপাশের কিছু এলাকায় কয়েকটা হাতপাখার পোস্টারের দেখা মিললেও নেতাকর্মী বা গণসংযোগের কোনো ছায়া পাওয়া যায়নি গত দুইদিনে। কার্যালয়ও বন্ধ পাওয়া গেছে সব সময়। বুধবার জিনজিরা ইউনিয়নের জনি টাওয়ার মোড়, ফেরিঘাট, কাঠুরিয়া, তাওয়া পট্টি ও আগানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকার মহল্লার গলি পথেও সাদা কালো পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। অন্য কোনো দলের পোস্টার লাগানোর যেন কোনো জায়গায় নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে বড় বড় নৌকা বানিয়ে টানিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি মহল্লায় বসানো হয়েছে অস্থায়ী নির্বাচনী অফিস। গতকাল তেঘরিয়া, কোন্ডা, শুভাঢ্যা ও ইকুরিয়া এলাকায় গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের দেখা মেলেনি কোথাও। তবে দুই এক জায়গায় হাতপাখার পোস্টার দেখা গেছে। সরজমিনে জিনজিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নসরুল হামিদ বিপু প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করছেন।
বুধবার তিনি গণসংযোগ করেন জিনজিরা ইউনিয়নের ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। অন্যদিকে গতকাল তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রচারণা শুরু করেন। একই সঙ্গে প্রতিদিন তিনি অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার কর্মিসভায়। পুরো ঢাকা-৩ নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায় সার্বক্ষণিক নৌকা মার্কার পক্ষে মাইকে প্রচারণা চালাচ্ছেন কর্মীরা। রিকশায় একটি মাইক নিয়ে একাধিক টিমে এ প্রচারণা চলছে। তবে ব্যতিক্রমী পাওয়া গেছে ধানের শীষের প্রচারণা। জিনজিরা ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হয়েছে। কার্যালয়ের সঙ্গে একটি মাইক দিয়ে সারাদিন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ধানের শীষের পক্ষে চলছে প্রচারণা। এর বাইরে কোথাও প্রচারণার মাইক চোখে পড়েনি। পাওয়া যায়নি কোনো পোস্টার। তবে কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি সাদা কালো ফেস্টুন টাঙানো দেখা গেছে।
কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা মানবজমিনকে জানান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বুধবার জিনজিরা বাজার থেকে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেন। আগানগর ইউনিয়নের দিকে বহর নিয়ে এগিয়ে যান। রাত পর্যন্ত আগানগর ইউনিয়ন এলাকাতেই প্রচারণা চালাবেন। তবে গতকাল তিনি ঢাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় কোনো গণসংযোগ করেননি। এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো হাঁক ডাক না ছেড়ে ভোটারদে দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বড় ধরনের কোনো জনসমাগম না ঘটিয়েই তিনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মোক্তার আলী নামের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, অনেক আগে থেকে নসরুল হামিদ বিপুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি।
এলাকার বিভিন্ন ক্লাবে ও মোড়ে কর্মিসভা ও পথসভা করছি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। জিনজিরা ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির জয়েন্ট সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, প্রতিনিয়ত পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে হয়রানি করে। কথায় কথায় মামলা দেয়। গ্রেপ্তার করে। আমরা ঠিক মতো এলাকায় থাকতে পারি না। তারপরও আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ এই নির্বাচনকে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন হিসেবে দেখছি। এ আসনে হাতপাখার খুব বেশি কার্যক্রম দেখা না গেলেও কেরানীগঞ্জ থানা ইসলামী আন্দোলন কার্যালয় এলাকা গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতপাখার প্রার্থী সুলতান আহমদ খান প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কয়েকটি ভাগ হয়ে বিভিন্ন মসজিদ এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন।
সুলতান আহমদ খানের পক্ষে প্রতিদিন হাতপাখা নিয়ে মিছিলও করেছেন কর্মী-সমর্থকরা। এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থীসহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- মই মার্কা নিয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের মজিবুর হাওলাদার, সিংহ মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরিফুর রহমান লিটন, জিপগাড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলী রেজা ও উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে গণফোমের প্রার্থী মোস্তফা মোহসিন মন্টু। যদিও মোস্তফা মোহসিন মন্টু এ আসনে না লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের বাইরে এসব প্রার্থীর কোনো নির্বাচনী প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি পুরো কেরানীগঞ্জ এলাকায়।