শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রোকনউদ্দিন খন্দকার তার নিজ গ্রামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন বেশ কয়েক বছর আগে। হাসপাতালের জায়গায় তিনি প্রাচীর নির্মাণ করেন। সেখানে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। এরপর দুই বছর তিনি আর গ্রামে যাননি।
গতকাল মঙ্গলবার ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে তার পুরো পরিবারের উপর সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঢাকার দোহার উপজেলার আউলিয়াবাদ গ্রামবাসী বিস্মিত হন। গ্রামবাসীদের অনেকেই বলেন, হাসপাতালটি আর হলো না। এলাকাবাসী ডা. রোকনউদ্দিনকে ভালো জানতেন। গ্রামে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলে হাতের কাছে সুচিকিত্সা পেতেন গ্রামবাসী। ডা. রোকন প্রায়ই গ্রামবাসীকে বলতেন যে এই হাসপাতাল হলে আপনাদেরকে বিনামূল্যে চিকিত্সা দেয়া হবে। আউলিয়াবাদ গ্রামবাসী সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ডা. রোকন জঙ্গি কার্যক্রমে যোগ দিতেই সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন—এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে গতকাল গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে আউলিয়াবাদ গ্রামবাসীর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এই সংবাদের পর গ্রামবাসী বলাবলি করতে থাকেন যে আউলিয়াবাদের ডা. রোকন আর সেই রোকন নেই, তিনি এখন জঙ্গি। তার স্ত্রী-সন্তানরাও একই পথের পথিক হয়েছেন।
গ্রামবাসী তাদের এই পরিবর্তনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। গতকাল ইত্তেফাকের দোহার উপজেলা সংবাদদাতা আউলিয়াবাদ গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এই গ্রামের বাসিন্দা তোফাতুল ইসলামের পুত্র ডা. রোকনউদ্দিন খন্দকার। তিন পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে ডা. রোকন সবার ছোট।
গোয়েন্দা সংস্থা নিখোঁজ তালিকার মধ্যে ডা. রোকনউদ্দিন এবং তার পরিবারের ৪ সদস্যসহ ৭ জনের বিষয়ে তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে তারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে ডা. রোকনউদ্দিন সপরিবারে তুরষ্কে রয়েছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে।
এদিকে নিখোঁজ নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র তাওসিফ হোসেন ও সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো বাংলাদেশেই রয়েছেন বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। তাদের পাসপোর্টের সূত্র ধরে বিষয়টি জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্যমতে, এই দুজন জঙ্গি তত্পরতায় লিপ্ত বা কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কোথাও অবস্থান করছে।
ডা. রোকনউদ্দিন শেরে বাংলানগর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৯৯০ সালে ৪ আগস্ট অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই তার চাকরি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত করে। পরবর্তী সময়ে তিনি পদোন্নতি পেয়ে রেজিস্ট্রার হন। গত বছর ৩০ এপ্রিল ওই হাসপাতাল থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
আমাদের দোহার সংবাদদাতা মো. কাজী সোহেল জানান, চার বছর আগে তার গ্রামের বাড়ী আউলিয়াবাদে তার বাবার সম্পত্তিতে বিনা মূল্যে চিকিত্সা প্রদান করার উদ্দেশ্যে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়ে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ভিত্তি প্রস্তর করেন। তিনি গ্রামের প্রতিষ্ঠিত আউলিয়াবাদ জামে মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। এর পর হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর করার পর দ’ুএকবার গ্রামে আসলেও পরে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। জন্মগতভাবে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও বিএনপির সমর্থক ছিলো বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওলিয়াবাদ গ্রামের শেখ সোহেল রানা বলেন, ডা. খন্দকার রোকন উদ্দিনের সাথে চার বছর যাবত্ এলাকার কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। তিনি গ্রামের সকল উন্নয়ন কাজের সাথে জড়িত তার দ্বারা কেউ ক্ষতি গ্রস্থ হয়নি।
আব্দুল জলিল নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ডা. খন্দকার রোকন উদ্দিন ও তার পরিবারের দ্বারা কেউ কোন সময় কোন ক্ষতিসাধিত হয়নি।