জাতীয়করণের মহাকেলেঙ্কারি থামাতে জাতীয়করণের চূড়ান্ত তালিকা করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাতীয়করণের জন্য ২৮৭টি কলেজকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে সে তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পৌঁছেছে। এই কলেজগুলো পরিদর্শন শেষে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সেখানে একটি করে বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এ তালিকা পাঠানো হয়ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শামছুল হুদা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ২৮৭টি কলেজ জাতীয়করণে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। বাকিগুলো মাউশি সরজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পাঠাবে। তিনি জানান, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাকি কলেজগুলো জাতীয়করণ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে এর প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। সর্বশেষ ময়মনসিংহে ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে একজন শিক্ষক মারা যান। মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয়করণের শর্তানুযায়ী এই কলেজটি জাতীয়করণ হওয়ার কথা ছিল। মাউশির সরেজমিন রিপোর্টে তা-ই ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে যায়নি। এর বিপরীতে জাতীয়করণ হয় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ।
মাউশির রিপোর্টের তথ্যমতে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে যে তিনটি কলেজের নাম পাঠানো হয়েছিল সেখানে স্থান পায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ। ফুলবাড়িয়া কলেজটি প্রতিষ্ঠিত ১৯৭২ সালে। আর ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কলেজটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান এমপি মোসলেম উদ্দিনের নামে মোসলেম উদ্দিন কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৯ সালে কলেজটির নাম করা হয় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের এ কলেজটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা তিনশ’র মতো, আর সাত বিভাগে অনার্সসহ ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষার্থী পাঁচ হাজার তিনশ। জাতীয়করণের মানদণ্ডে এই ফুলবাড়িয়া কলেজ এগিয়ে থাকলেও জাতীয়করণ হয় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কলেজ। এসব কারণে ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং স্থানীয় মানুষের দাবি, ওই উপজেলা থেকে যদি কোনো কলেজ জাতীয়করণ করা হয় তাহলে এ কলেজটিই হবে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় এমপির তদবিরের কারণে মন্ত্রণালয় আগে পিছে কোনো কিছু বিচার না করে শুধু নাম দেখেই ফুলবাড়িয়া কলেজকে বিবেচনায় নিয়েছেন। শুধু ফুলবাড়িয়া নয়, সারা দেশে অর্ধশতাধিক কলেজ জাতীয়করণে নিয়ে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকজন সংসদ সদস্যও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে তাদের অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এমনকি দুর্নীতির প্রভাবে কোথাও কোথাও প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত কলেজ জাতীয়করণ হয়নি। রাজনৈতিক তদবির আর দলাদলির ফাঁদে পড়ে অনেক ঐতিহ্যবাহী কলেজও সরকারিকরণ থেকে ছিটকে পড়েছে। জানা গেছে, জাতীয়করণ নিয়ে প্রথম ধাপে ৭৯টি মডেল স্কুলকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বাগত জানালেও দ্বিতীয় ধাপে অস্বচ্ছতা শুরু হয়। মডেল বাদ দিয়ে আরো নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান খোঁজা হয়। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে বাদ পড়তে শুরু হয় ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর ১৯৫টি কলেজ জাতীয়করণ করার তালিকা আসে। সেটি এখন ২৮৭টিতে গিয়ে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক উপজেলায় একটি কলেজ সরকারি করার কথা জানান। এরপরই শুরু হয় জাতীয়করণের কাজ। এরই অংশ হিসেবে গত জুন ও আগস্টে দুটি তালিকা প্রকাশ হয়। নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে নম্বর দিয়ে গ্রেডিং করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। গ্রেডিং করার সময় সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া কলেজকে এক নম্বরে এবং তার চেয়ে কম পাওয়া কলেজকে দুই নম্বরে রাখা হয়। এভাবে একটি উপজেলার সর্বোচ্চ ৪-৫টি কলেজকে তালিকাভুক্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গ্রেডিং করার সময় শিক্ষক, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, কলেজের ফলাফলের পরিসংখ্যান, ঐতিহ্যবাহী, নিজস্ব জমিসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় দেখা হয়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয় মানদণ্ডের কথা বললেও জাতীয়করণের ক্ষেত্রে তা সেভাবে অনুসরণ করেনি। এ নিয়ে সংসদ সদস্যরাও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জাতীয়করণের জন্য ২৮৭টি কলেজ চূড়ান্ত
আপনার মতামত দিন