প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৮৩টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের গেজেট গত একবছর ধরে ঝুলে থাকায় চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব কলেজের প্রায় ৮ হাজার শিক্ষক। তারা বলছেন, সরকারিকরণের জন্য কলেজগুলোর সব সম্পত্তি সরকারের নামে লিখে দেওয়া হয়েছে একবছর আগে। অথচ এখনো গেজেট প্রকাশ করে সরকারি করা হয়নি কলেজগুলো। আদৌ এই সরকারের আমলে সরকারি করা হবে কিনা সংশয় দেখা দিয়েছে তাদের মনে। তবে এই সংশয়ে পানি ঢেলে দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, একবার যেহেতু সম্পত্তি সরকারের নামে দলিল হয়ে গেছে এবং প্রধানমন্ত্রী যখন কথা দিয়েছেন, তখন কলেজগুলো সরকারি হবেই। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপসচিব মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, খুব শিগগিরই কলেজগুলো সরকারি হবে। গেজেট প্রকাশের কাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে গেজেট হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভাবনা আছে।
কেন এতদিন ধরে কলেজগুলো সরকারিকরণের জন্য গেজেট জারি হচ্ছে না প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২৮৩টি কলেজের মধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজের বিপক্ষে বঞ্চিত কলেজগুলো রিট করেছে। আরও কিছু বিষয় আছে। এরমধ্যে রিট নিষ্পত্তি করে সবগুলো কলেজকে একসঙ্গে জাতীয়করণের চিন্তাও ছিল। সবমিলিয়ে এই দেরি। তবে কোন কোন কলেজের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ রিট করেছে এবং এই রিটের কারণে জাতীয়করণে বাধা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি রিট নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো আপাতত সরকারি করা না যায় তাহলে যেসব কলেজের বিরুদ্ধে রিট নেই সেগুলো সরকারি করা যায় কিনা চিন্তাভাবনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও গেজেট প্রকাশে দেরির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব বিবেচনায় দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেন, তারা আশা করছেন আগামী মাসে জাতীয় সংসদে বাজেট পাসের আগেই কলেজগুলো সরকারি করে গেজেট বা প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা যাবে।
সূত্রে জানা গেছে, সরকারি করার জন্য চূড়ান্ত ২৮৩টি বেসরকারি কলেজের মধ্যে প্রতিপক্ষ রিট করেছে এমন কলেজের সংখ্যা ৫০টির বেশি নয়। তবে গেজেট প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার অন্য একটি কারণ হচ্ছে শিক্ষা ক্যাডারদের আন্দোলন। ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা প্রশ্ন করছেন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা সরকারি হলেই বিসিএস ছাড়া কেন ক্যাডারভুক্ত হবেন। তাদের নন ক্যাডার রেখে কলেজ সরকারিকরণে আপত্তি নেই এই প্রতিবাদী শিক্ষকদের। তারা বলেছেন, অনেক ধাপ পেরিয়ে সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম ব্যয় করে লাখ লাখ প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে তারা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক। কিন্তু বেসরকারি কলেজগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া এত কঠিন নয়। এখন হঠাৎ সরকারি হলেই ক্যাডারভুক্ত হয়ে বিসিএস শিক্ষকদের সমান কেন হবেন?
এদিকে সরকারিকরণের জন্য চূড়ান্ত হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকরা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন, তাদের অভিজ্ঞতা কম কিসের। তাই বিসিএস না হলেও তারা ক্যাডারভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। ক্যাডার-নন ক্যাডারের এই দ্বন্দ্বের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মীকরণের এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে একটি বিধিমালার কাজ শেষ পর্যায়ে।
সরকারি হলো আরও ১২ মাধ্যমিক বিদ্যালয় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও ১২টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা হয়েছে। সোমবার (৭ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। এর আগে গত ১১ এপ্রিল ২১টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা হয়। গতকাল সোমবার সরকারি হওয়া ১২টি বিদ্যালয় হলো- সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার ডি.এন. উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্বনাথের রামসুন্দর অগ্রগামী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার কিশোরীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসান উল্লাহ মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার খোকসা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা বি.বি.পি ইনস্টিটিউশন, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আলমডাঙ্গা বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং খুলনার রূপসা উপজেলার কাজদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, যেসব জেলা ও উপজেলায় সরকারি স্কুল ও কলেজ নেই, সেসব জেলা ও উপজেলায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব বিদ্যালয়কে সরকারি করার আদেশ জারি করা হলো।