ঘুরে এলাম সুলতানী বাংলার রাজধানী পানাম নগর

573
ঘুরে এলাম সুলতানী বাংলার রাজধানী পানাম নগর

পৃথিবীময় ব্যস্ততম এই শহরে নানান মুখি মানুষের জানার ইচ্ছাটাও সুধীর আগ্রহের। শত শত বছরের স্তম্ভচিত্র নানা গল্প কাহিনি ও ব্যবহার্য তৈজসপত্র দেখতে কার না মনে টানে; তারই টানে আমরা একদিনের জন্য হারিয়ে যাবো।

সোনারগাঁ ঈশা খার প্রাসাদ ও দূর্গ, লোকশিল্প যাদুঘর সাথে থাকছে পানামনগর, যা ১৩০৫ সনে তৈরিকৃত ভবন।

হৈ–হুল্লোড়ে সারাদিন, কাটুক নিজের সাধের একদিন। এমন মনোমুগ্ধকর চিন্তা থেকেই দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট (DNSM) পিকনিক এর আয়োজন করে। DNSM এর কার্যক্রম থেমে নেই শুরু থেকেই। অসহায় গরিব বানভাসি ও করোনার সময় থেকেই মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে DNSM। আমি এই আনন্দ মহলে সামিল হতে পারবো তা পিকনিকের আগের দিন সন্ধায় ও মাথায় ছিলো না। তবে দোহার–নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট এর সদস্যদের সাথে কয়েকবার বসা হলেও আমার খুব কাছের মানুষ তারেক রাজিব স্যার, সুমন ভাই, আবু নাঈম ভাই,শরিফ ভাই, অনিক ইসলাম আরো নাম আছে। আসলে এই ভাই গুলোর কথা, কাজ, কর্ম স্পৃহা ধৈর্য্য ও মানুষের প্রতি মনোমুগ্ধকর আচরন চোখে পড়ার মত।

শুক্রবার (৩০শে অক্টোবর) সকাল ৫:৩০টায় ঘুম থেকে উঠে গোসল করে জামা পরিধান করে হাটা দিলাম জয়পাড়া কলেজ মোড়ের উদ্দেশে। তখন সময় ঘড়িতে ৬:৪০মিনিট, যদিও গাড়ি ছাড়ার কথা ছিলো ৬:৩০ মিনিটে, তবে সবার আসায় লেট হওয়ায় ৭:১০ মিনিটে রওনা হলাম আমরা। জয়পাড়া বেগম আয়শা কলেজে সামনে থেকে ১৮৫ জন আনন্দ ভ্রমন করার জন্য তিন তিনটা যমুনা বাস নিয়ে রওনা হলাম। আমি যেতে আগ্রহী ছিলাম না। আমার প্রাণপ্রিয় অভিভাবকের মত স্যার, যাকে সব সময় পাশে পাই সে বলে তুমি যাচ্ছো আমাদের সাথে। আমি যাবোনা বলায় স্যার বলে তোমাকে যেতে হবে খুব সকালে চলে আসবে তুমি যাচ্ছো আমার গেস্ট হয়ে। এ কথা শোনার পর আমার খুব আনন্দ লেগেছে তারও কারন আছে, যে মানুষ গুলো  পরিবার, দেশ, সমাজকে ভালো রাখতে চায়, যাদের পদের প্রতি লোভ নেই, যাদের টাকা বা খ্যাতির প্রতি লোভ নেই, যাদের আছে স্রষ্টা আর মানুষের জন্য ভালোবাসা, ভালো কাজের প্রতি উন্মাদনা, যাদের আছে সিংহ হওয়ার মতো সাহস, নীল আকাশের মতো উদার হৃদয় আর চ্যালেঞ্জ কে উপভোগ করার জন্য শান্ত মন, তারাই DNSM এর সকল ভালো কাজের প্রাণ। এ ভালো মনের মানুষদের সাথে একদিনের জন্য হলে মিশতে পারবো।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে আমরা অনেকটাই বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত। দোহার–নবাবগঞ্জে করোনা মহামারীর সময় একটানা ৪ মাস টানা ত্রাণ ও ওষুধ সহযোগীতা এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে দোহার–নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট (DNSM)। কিন্ত এখন শরতের শুভ্র নীলাকাশ ও হুটহাট বৃষ্টির রোমান্টিকতা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘর হতে বের হয়ে ঘুরে বেড়াতে। দূর হয়ে যাক সকল ক্লান্তি-শ্রান্তি, অবসাদ ও চিন্তা। আসুন সব ঝেড়ে ফেলে হই উদ্যমী, হই সাহসী। মন নেচে উঠুক ছন্দে-আনন্দে, মুক্ত পাখির মতো একদিন ডানা মেলি শুভ্র আকাশে।

মাথার উপরে এই মেঘ, এই বৃষ্টি ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলায়। আর নিচে জীবনের মতোই অবিরাম বয়ে চলা নদীর ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। অপেক্ষার দিন শেষ, এসেছে আজ সেই শুভক্ষণ।

সকালের সূর্যটা তখন ঠিক কপাল বরাবর। মাওয়া হাইওয়ে রোড দিয়ে বাস থেকে নামলাম মাওয়া ঘাটে। সেখানেই সকালের নাস্তা, সেই সাথে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও চোখ জুড়ানোর মত মনোরম পরিবেশ দেখে থেমে ছিলো না হাতে থাকা ক্যামেরাটাও, ছবি তোলে আটকে নিলাম পদ্মা সেতু ও সৌন্দর্য প্রকৃতি। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম মাওয়া ঘাটে, আবার রওনা দিলাম দূর দিগন্তে।বাসের মধ্যেও আনন্দের কমতি ছিলো না। সবার গায়ে DNSM এর লোগো সহ লাল টি-শার্ট, রাস্তার দুপাশে প্রকৃতির সুন্দর নগর, অট্টালিকা, প্রাকৃতিক সুন্দর্য, সাথে ব্যস্ততম রাস্তাটিও কোলাহলে মুখরিত। সারা পথ জুড়ে গল্প গান জোক্স মজা লাফালাফি যেন কমতি ছিলোনা। অবশেষে বাস থামলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সময় তখন ১২টা, স্থানটা ছিলো খুব সুন্দর ও ঠাণ্ডা যুক্ত পরিবেশ। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভিতরে প্রবেশ করতেই প্রথমেই চোখে পরে ঈশা খার প্রাসাদ, সামনে উদ্যান ভূমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের ভাস্কর্য, শিল্পাচার্য জয়নুলের আবক্ষ ভাস্কর্য, শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প যাদুঘড়, তার পাশে টানানো ছিলো ইতিহাসের সোনারগাঁ, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, লোক-সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্যের নিদর্শনাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং এ বিষয়ে গবেষণায় নিয়োজিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এ দেশের লোকশিল্প ও লোকজ ঐতিহ্য বিকাশের এক সমৃদ্ধ জায়গা সোনারগাঁও। এমন লোক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনারগাঁয়ে ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্পের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পুনরুজীবন তথা বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে প্রথম আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে এদেশের মাটি ও মানুষের শিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন পরিচালনার দায়িত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন বলে সরকার বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে।

অন্য খবর  মিজানুর রহমান শমশেরীর দুটি কবিতা: প্রার্থনা, সুরঞ্জনা 

১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল সোনারগাঁ। ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের হাতে ফখরুদ্দীনের রাজবংশের পতনের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর সোনারগাঁ সমগ্র পূর্ববঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গের সুলতানি শাসনের রাজধানীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল। সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ ও সিকান্দার শাহের শাসনকালে সোনারগাঁ ছিল পূর্ববঙ্গ প্রদেশের রাজধানী। গিয়াসুদ্দীন আজম শাহের শাসনকালেও সোনারগাঁ রাজধানী ছিল। বার ভূঁইয়া প্রধান মসনদ-ই-আলা ঈসা খানের আমলে (১৫৬০) সোনারগাঁ বাংলার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করে। সোনারগাঁয়ের পানাম শহরে ছিল তাঁর প্রধান সামরিক পরিদপ্তর। আনুমানিক ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ঈসা খান মুঘল সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

এই সোনারগাঁয়ের মধ্য দিয়েই নির্মিত হয় ষোড়শ শতকের দিল্লীর শাসক শের শাহের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড, যা সিন্ধু থেকে সোনারগাঁয় এসে শেষ হয়। সোনারগাঁ শুধু প্রশাসনিক দিক দিয়েই নয়, এটি ধর্ম, সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানেও প্রভৃত উন্নতি সাধন করেছিল। এখানকার প্রাচীন সমাধি, মসজিদ ও স্থাপত্য নিদর্শনই এর যথার্থ প্রমাণ বহন করে। মধ্যযুগে সোনারগাঁ ছিল একটি সমৃদ্ধশালী শহর। মুঘল সুবেদার ইসলাম খানের সময়ে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে সোনারগাঁয়ের গুরুত্ব ম্লান হয়ে যায়।

প্রাচীন রাজধানীর শেষ স্মৃতিচিহ্ন অনিন্দ্যসুন্দর পানাম সিটি। পানাম সিটির চারদিকে পরিখার মধ্যভাগে নির্মিত হয়েছিল লাল ইটের ইমারত। পুরাতন ছোট ছোট ইট-সংযোগে তৈরি এ ইমারতগুলো প্রাচীনকালের গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্রিটিশ সময়কালে ইংরেজরা এখানে নির্মাণ করেছিল নীলকুঠি, যা আজও ‘কোম্পানি কুঠি নামে পরিচিত। জমিদার এবং ব্যবসায়ীরা এখানে রাস্তার দু’ধারে আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করেছিলেন। এখানে মুঘল, পার্সিয়ান আর ব্রিটিশশৈলী মিলে মিশে একাকার। বর্তমানে রাস্তার উত্তর পাশে ৩১টি এবং দক্ষিণ পাশে ২১টি ইমারতসহ মোট ৫২টি ইমারত রয়েছে।

পানাম নগর।।।।।

রাজধানী ঢাকা থেকে ৩০ কি.মি. দক্ষিণ পূর্বে পানাম নগরের অবস্থান। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ধনাঢ্য হিন্দু বনিকদের দ্বারা পানাম নগরের গোড়া পত্তন ঘটে। পূর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রশস্ত একটি সড়কের দুইপাশে সুরম্য মোট ৫২ টি ভবন নিয়ে পানাম নগর। ভবনগুলির অধিকাংশ আয়তাকার এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত। উচ্চতা; একতলা থেকে তিনতলা। স্থাপত্যশৈলীতে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সাথে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া নির্মাণ শৈলীতে স্থানীয় কারিগরদের শিল্প কুশলতার প্রয়োগও ঘটেছে। বিভিন্ন পরিমাপের ইটের সঙ্গে চুন সুরকীর আস্তর দিয়ে নির্মিত ভবনসমূহে ব্যবহৃত হয়েছে মোজাইক, রঙিন কাঁচ, চিনিটিকরী ও ছাদে কাঠের বীমবর্গা। চমৎকার স্টাকো অলংকরণে সমৃদ্ধ ভবনসমূহের দুইপাশে পরিবেষ্টিত পরিখা, ঘাটসহ পুকুর ও অনেকগুলো কূপ রয়েছে। ভবনসমূহের মধ্যে প্রাপ্ত লিপি অনুযায়ী কাশীনাথ ভবন (১৩০৫ বঙ্গাব্দে নির্মিত), নীহারিকা ভবন এর নামকরণ পাওয়া যায়। পানাম নগরীর পাশ্বর্তী গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে বড় সর্দারবাড়ি, ছোট সর্দারবাড়ি, পানামসেতু, গোয়ালদী মসজিদ, মঠ, পোদ্দারবাড়ি টাকশাল, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি উল্লেখযোগ্য।

অন্য খবর  সুসংগঠনই পারে নির্বাচনে বিজয়ী করতে; নবাবগঞ্জে সালমান এফ রহমান

সোনারগাঁ।।।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সোনারগাঁয়ে রয়েছে অনেক দর্শনীয় নিদর্শন। সোনারগাঁ এবং ঈশা খান একে অপরের পরিপূরক। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে মুঘল সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে তিনি যে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তা তাকে স্মরণীয় ব্যক্তিতে পরিণত করে। বার ভূইয়া প্রধান মসনদ-ই-আলা ঈশা খানের তিনটি রাজধানী ছিল। কাত্রাভূ, সোনারগাঁ এবং জঙ্গলবাড়ি। এই তিনটি জায়গার মধ্যে সোনারগাঁও ছিল অন্যতম প্রধান রাজধানী। হাজার বছরের প্রাচীন নগর সূবর্ণগ্রাম ছিল পূর্ব বাংলার অন্যতম রাজধানী। আজকের সোনারগাঁ প্রাচীন সূবর্ণগ্রাম বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। এই সূবর্ণগ্রামেই তের শতকের স্থানীয় হিন্দু রাজা দনুজমাধব দশরথদেব তাঁর শাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গ অঞ্চল মুসলিম শাসনে আসার পর থেকে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁ ছিল স্বাধীন সুলতানী বাংলার অন্যতম রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। ঔপনিবেশিক সময়কালেও এই এলাকায় বানিজ্যিক, আবাসিক ও ধর্মীয় কেন্দ্রিক স্থাপত্য  র্নির্মিত হয়েছে।

ডিএনএসএম (দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেন্ট) কর্তৃক আয়োজিত আনন্দ ভ্রমনের অংশ হিসেবে সোনারগাঁ জাদুঘরে বেশ কিছুক্ষন ঘুরলাম। কত পুরনো দিনের ইতিহাস ও তাদের রেখে যাওয়া ব্যবহার্য জিনিশপত্র, যুদ্ধের ঢাল তলোয়ার, তখন কার মেয়েদের ব্যবহার্য ভারি ভারি স্বর্ন লংকার ও ঢোল বেহেলা সাথে নকশি কাথা। দুপুরে আমরা ভেতরেই নামাজ পরে নিলাম। তার পরেই আমার চোখ কে স্বার্থক করে নিলাম একটি দামি ব্যান্ডের ঘুড়ি দেখে, যার মূল্য প্রায় ২২লক্ষ টাকার উপরে হবে। ঘুড়িটা সবার থেকে আলাদা এবং চোখে পড়ার মত। তার আগে আমরা নৌকায় চরে আনন্দ ভাগাভাগি করি, নৌকাটা যদিও ডিমের মত গোল তবুও ভালো ছিলো। আনন্দের জন্য কয়েক বার ডুবা ডুবা ভাব হলেও নৌকাটা অক্ষত ছিলো সাথে আমরাও। পুকুরটির মধ্যখানে একটি দ্বীপে তিনটি বাঘ আমাদের দিকে তাকিয়েছিল, কিন্তু আমরা তাদের কোন পাত্তাই দিলাম না।

এখান থেকে আবার গেলাম পানাম সিটি। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ধনাঢ্য হিন্দু বনিকদের দ্বারা পানাম নগরের গোড়া পত্তন ঘটে। শত শত বছর আগের স্মৃতি স্তম্ভ হয়ে দাড়িয়ে আছে লাল ইটের গাথোনি।

পানাম সিটি ভ্রমন শেষে সেখান থেকে খাবারের স্থানে চলে আসলাম খাবার খাওয়ার জন্য। ভ্রমন স্পটেই খাবার রান্নার আয়োজন করা হয়েছিলো। দুপুরে খাবার খেলাম মোরগ পোলাও (সাদা পোলাও, ১টি রোস্ট, ১টি ডিম), সফট ড্রিংক ও মিনারেল ওয়াটার। খাবার খেতে খেতে বিকাল ৫টা বেজে গেলো তার পরেই শুরু হলো আমাদের খেলা সকল সদস্যদের  জন্য রাফেল ড্র ও গিফট আইটেম। আমি জানি গিফট আমি পাবো না এবং সত্যি পাইনি, তবে না পেলেও আমার আনন্দটা কম ছিলোনা কোনো অংশে। আমি আমার আনন্দটা সবার চেয়ে বেশি উপভোগ করেছি, এর জন্য DNSM এর সকল সদস্য ও যারা এ পিকনিক আয়োজনের দায়িত্বে ছিলো তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।

অবশেষে বাড়ি ফেরার পালা।

সন্ধার পর আমরা রওনা দিলাম সোনারগাঁ থেকে দোহারের দিকে। পথিমধ্যে একটি কমলা ও দুটি চুইংগাম দেয়া হলো তা খেলাম। আবারো আমরা আনন্দের সাথে গান, মজা, হৈ-হুল্লোর  করার পর আমাদে গন্তব্যে এসে পৌছালাম রাত ৯টার দিকে। একদিনে আনন্দ সম্পর্ক হয়ে উঠলো অনেক দিনের, হয়ে গেলো সবাই আপন। এই আনন্দই বাচিঁয়ে রাখবে মন ভালো করার গল্প।।।।

আপনার মতামত দিন