জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রাসাদবিলাসী প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। তিনি ছিলেন, গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের প্রেসিডেন্ট।
জীবদ্দশায় তিনি শুধু চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে। তিনি সেই রাষ্ট্রনায়ক যিনি ক্ষমতায় থাকার সময় রাজধানী ছেড়ে প্রায় প্রতিদিনই গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ আমরা দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে এক ক্ষণজন্মা মহান নেতাকে স্মরণ করছি। তাকে হারানোর শোকে আমরা কাতর।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওপর আনা শোক প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে রোববার তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, দেশ ও জনগণের প্রতি রাষ্ট্রনায়ক এরশাদের গভীর ভালোবাসা সম্পর্কে কলকাতার বনেদি সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকা ১৯৮৯ সালের ২৩ আগস্ট এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিল- একটি মানুষকে ঘিরে সারা পল্লীবাংলার এমন আশা-আকাক্সক্ষা, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি বলেন, ‘পল্লীবন্ধু’ এরশাদ যেন কল্পতরু। যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়। সবাই তাকে কাছের মানুষ বলে মেনে নেয়।
রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে আছে এরশাদের কীর্তি- এমন মন্তব্য করে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, তার ৯ বছর দেশ শাসনের ইতিহাস- সৃষ্টি আর সংস্কারের ইতিহাস। দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে এগিয়ে নেয়ার ইতিহাস। যে কারণে এ দেশের মাটি থেকে, ইতিহাসের পাতা থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম কোনোভাবেই মুছে ফেলা সম্ভব না।
সালমা ইসলাম বলেন, যতদিন থাকবে তার প্রতিষ্ঠিত উপজেলা, গুচ্ছগ্রাম, যতদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মুজিব নগরের স্মৃতিসৌধ, তিন নেতার মাজার, যতদিন রেডিও-টেলিভিশনে শোনা যাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধুর ধ্বনি, যতদিন ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, যতদিন রেডিও-টিভিতে সংবাদ প্রচারের আগে শোনা যাবে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে শ্রদ্ধাভরা সঙ্গীত- সব কটা জানালা খুলে দাও না, যতদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোট-বড় ৫০৮টি সেতু আর হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করবে কোটি কোটি মানুষ আর যানবাহন, ততদিন বেঁচে থাকবে পল্লীবন্ধু এরশাদের কীর্তি, বেঁচে থাকবে তার নাম।
এরশাদ কোনোভাবেই স্বৈরাচারে বিশ্বাস করতেন না মন্তব্য করে সালমা ইসলাম বলেন, গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতায় তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। তিনি যদি স্বৈরাচারী হতেন তাহলে তার শাসনামলে বিরোধীরা স্বৈরাচার শব্দটি উচ্চারণ করার সুযোগও পেতেন না। তিনি যদি স্বৈরাচার হতেন, তাহলে পত্রিকার পাতায় স্বৈরাচার শব্দটি লিখতে পারতেন না কেউ। তিনি যদি স্বৈরাচার হতেন, তাহলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্য আমলের মতো গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারতেন।
তিনি যদি স্বৈরাচার হতেন, তাহলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে উপজেলা সৃষ্টি করতেন না। উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেন না। তিনি যদি স্বৈরাচার হতেন, তাহলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতেন। জনতার হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চার-চারবার নির্বাচনের ঘোষণা দিতেন না। তিনি স্বৈরাচারী হলে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মহান সংসদে আসতে পারতেন না। তিনি স্বৈরাচারী হলে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসন অলংকিত করতে পারতেন না।
এরশাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির ইতিহাসে এরশাদ একটি মাইলফলক। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক অক্লান্ত যোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আমরা ব্যথিত। শোকাভিভূত। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই শোক সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ যেন দেন, সেই দোয়া করছি।