কোঠাবাড়ী কলেজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন: দোহারের শিক্ষাঙ্গণে নতুন ঠিকানা

746
কোঠাবাড়ী কলেজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন: দোহারের শিক্ষাঙ্গণে নতুন ঠিকানা

অবশেষ স্থাপিত হলো দোহারের পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের ‘কোঠাবাড়ী কলেজ’-এর শেকড়। বুধবার বিকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এই ভিত্তি স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির নামে সাইনবোর্ড স্থাপণের মধ্য দিয়ে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার শিক্ষাঙ্গণে যুক্ত হল আরেকটি নাম, আরেকটি ঠিকানা। নামকরণের সাইনবোর্ড স্থাপণের শুভদিনে শেকড় থেকে শিখরে পৌঁছার অঙ্গীকার সবার মুখে।

দোহার উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ইউনিয়ন কুসুমহাটি, মাহমুদপুর, নয়াবাড়ি এবং জয়কৃষ্ণপুরের অধিকাংশ মানুষ নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে যখন বেঁচে থাকার যুদ্ধে অবতীর্ণ, সেখানে সন্তানের উচ্চ শিক্ষার খরচ যোগান দেয়া তো আরও কষ্টসাধ্য। আর সে শিক্ষার জন্য যদি যেতে হয় দূরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাহলে তো মরার উপর খাড়া ঘাঁ’য়ের মতো অবস্থা। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চ শিক্ষা থেকে ঝরে পরে বা বঞ্চিত হয় অনেক শিক্ষার্থী। জড়িয়ে পড়ে অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডেও।

এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে চিন্তা করেণ দোহার উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের দুই শিক্ষানুরাগী বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট রমজান আলী শিকদার ও ওর্য়াল্ড ওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরের সাথে সংযুক্ত ও গ্রামীনফোনের সাবেক পরিচালক এবং বর্তমানে রবি আজিয়াটার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার এম এ খান সোহেল। স্বপ্ন দেখেন পশ্চিমাঞ্চলে একটি কলেজ করার। শুরু হয় সবার সাথে আলোচনা। নয়াবাড়ি, কুসুমহাটি ও মাহমুদপুরের সাথে নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, শিকাড়ীপাড়া এবং বারুয়াখালী ইউনিয়নের সকল শিক্ষানুরাগী ও গন্যমান্য ব্যক্তিরাও একমত পোষণ করেণ তাদের সাথে। যার ধারাবাহিকতায় প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে সকলের স্বঃতস্ফূর্ত উপস্থিতিতে নামকরণের সাইনবোর্ড স্থাপণ করা হয় বুধবার বিকেলে। শিলাকোঠা মৌজার অন্তত ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে কলেজটির মূল ক্যাম্পাস। যার মধ্যে ১১ বিঘা জমি ইতোমধ্যে ক্রয়ের প্রক্রিয়া অনেকটা চুড়ান্ত।

অন্য খবর  দোহারে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলো শিশু ফাতিমা

নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান এর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেট রমজান আলী শিকদারের সঞ্চালনায় বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে উল্লেখিত ইউনিয়নসমূহের হাজার হাজার জনতার ঢল নামে কোঠাবাড়ী কলেজ স্থাপনা ও কলেজের সাইন বোর্ড স্থাপন অনুষ্ঠানে। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে এলাকার মানুষের স্বপ্নের কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা শোনার জন্য।

বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শিক্ষানুরাগী এ্যাডভোকেট রমজান আলী শিকদার বলেন, শিক্ষার হার ধরে রাখতে এবং উচ্চ শিক্ষার লক্ষে দোহারের পশ্চিমাঞ্চলে একটি কলেজ প্রয়োজন। সময়পোযোগী এই চাহিদার সাথে এলাকার সবাই একমত পোষণ করেণ। আমাদের দোহার-নবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কোঠাবাড়ী বিলের নামে কলেজের নামকরণের প্রস্তাব আসে সবার কাছ থেকে। সবার মতামতের ভিত্তিতে দোহারের পশ্চিমাঞ্চলে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে কোঠাবাড়ী কলেজের কার্যক্রম।

রবি আজিয়াটার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শিক্ষানুরাগী ইঞ্জিনিয়ার এম এ খান সোহেল বলেন, শুধু দোহার নয়, নবাবগঞ্জেরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য দূরের পথ পেরিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। যে কারণে আমাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন ছিল পশ্চিমাঞ্চলে একটি কলেজ করার। আমাদের ইচ্ছার সাথে সবার ইচ্ছার সম্মিলণ ঘটেছে। সবাই এগিয়ে এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। যে কারণে আল্লাহ আমাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস দোহার-নবাবগঞ্জের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এই ‘কোঠাবাড়ী কলেজ’।

অন্য খবর  নারিশা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠিত

নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান বলেন, কোঠাবাড়ী কলেজের কার্যক্রম শুরু হলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে দোহারের শিক্ষাক্ষেত্রে। এটি দোহারের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন সিকদার বলেন, কলেজটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে দোহারের শিক্ষাক্ষেত্রে পঞ্চিমাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, কমবে উচ্চ শিক্ষার ধাপ থেকে ঝরে পড়ার হারও।

কোঠাবাড়ী কলেজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন: দোহারের শিক্ষাঙ্গণে নতুন ঠিকানা

বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, সরকারের আন্তরিকতায় শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে এই কোঠাবাড়ী কলেজ। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।

গত বুধবার বিকেলে কলেজের সাইনবোর্ড স্থাপণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠা কমিটির অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার পারভেজ, জাফর ইকবাল লাবলু, আইয়ূব আলী, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন, সুরুজ আলম সুরুজ, কমল রতন পাল, মো. আশ্রাফ আলী, মহসীন উদ্দীন আহমেদ দীপু, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, মো. ওবায়দুর রহমান, মঞ্জুরুল হক শিকদার, আবুল বাশার, মো. আবু সাঈদ মিয়া, কালাম বিশ্বাস, মশিউর রহমান, মো. শহিদ মিস্ত্রী, গিয়াস উদ্দিন, জাহাঙ্গীর মিস্ত্রী, আলমগীর মিস্ত্রী প্রমূখ।

আপনার মতামত দিন