একমাস রোজা রাখার পর আসে মুসলমানদের ধর্মীও উৎসব ঈদ। জয়পাড়ার ঈদ-কেনাকাটায় লক্ষ লক্ষ টাকার বেচাকেনা হয় দোকানগুলোতে। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে কেনাকাটার ধুম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভিড়, বেচাকেনা চলছে মধ্যরাত পর্যন্ত। ক্রেতাদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে দোহারের জয়পাড়া ও মেঘুলা ঈদবাজার। ক্রেতাদের এমন ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। এবারের ঈদে নতুন আকর্ষণের দিকেই ছুটছে পোশাক প্রেমীরা।
বিক্রেতারা বলছেন, বরাবরের মতো এবারের ঈদবাজারে তরুণীসহ নারীদের প্রধান আকর্ষণ নতুন কালেকশন। এবার ঈদ মাঠ কাঁপাতে বাহারি রঙের ভারতীয় জামা, ‘পুষ্পা’ সারারা ও গারারা নামের নতুন বেশ কিছু থ্রি-পিস ও জামার প্রতি ছোট-বড় সবার আকর্ষণ বেশি।
সোমবার সকাল থেকে দোহারের সবচেয়ে বড় ঈদ বাজার জয়পাড়ায় ক্রেতাদের ভিরে জমে উঠেছে ঈদ শপিং। এর মধ্যে চৌধুরী হাইসট,পাপেল শপিং মল, বেগম আয়েশা শপিং মল, সামিয়া শপিং মল, আয়োজন শপিং মল, তাজমহল গার্মেন্টস, সুমন বস্রলয়, এম্ব্রেলা, ভলান্টিয়াস, এ্যালিস বস্ত্র বিচিত্রা, কাজী সুপার মার্কেট, বেবি শোপ, পালকি, নীল আঁচল, জুতার দোকান, মেঘুলা বাজার মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। রোজা রেখে প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটার জন্যই মার্কেটে এসেছেন ক্রেতারা। কেউ আবার ভিড় ঠেলে দোকানের সামনেও দাঁড়াতে পারছেন না। ভিড় সামাল দিতে দোকানি ও কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যখন করোনার সময় ছিল তখন তাঁদের লোকসান হয়েছে। তবে এবার রোজার শুরু থেকেই দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি ভালো। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, বিক্রিও ততই বাড়ছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, চাহিদার সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা দাম বেশি নিচ্ছেন।
দোহারপুরি থেকে কেনাকাটা করতে আসা চাকরিজীবী সুজন জানান, পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছি। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর মার্কেটে ভিড় বাড়তে পারে। তবে কাপড়ের দাম বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি পায়নি অথচ সব কিছুর দাম বেড়েছে।
জয়পাড়া চৌধুরী হাইটসের মেলা পাঞ্জাবি হাউসের স্বত্বাধিকারী শাহরিমা ইসলাম রিমা বলেন, আমাদের তো শুধুর পাঞ্জাবির শো-রুম তাই এখনো ঐভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। তবে আশা করছি ঈদের পাঁচ-ছয় দিন আগে থেকে আমরা ভাল কাস্টমার পাবো।
শোরুমে মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের বেচাকেনা আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আমাদের জামাকাপড় এর কিনা দাম থেকে ২৫-৩০ শতাংশ বেশি রাখি কারন আমাদের দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন ধরনে খরচ আছে সে জন্য। তবে যারা ভাল কিছু চায় তারাই বেশীরভাগ শোরুমে আসে।
অন্য দিকে ছেলেদের শার্ট পেন্টের দোকানী Export ফ্যাশনের মালিক রাজিব হোসেন বলেন, আমাদের বেচাকেনা ভাল চলছে। ছেলেদের নতুন নতুন কালেকশন আছে আমাদের কাছে।
মোল্লা সু স্টোর এর মালিক সবুজ মোল্লা জানান, জুতার দোকানে গুলোতে ক্রেতার ভির পরতে শুরু করেছে। তবে মহিলা ক্রেতারা বেশি আসছে কয়েক দিন গেলে ছেলেদের কেনাকাটা বাড়বে। আমাদের দোহারে বেশীভাগ চাহিদা সফ্ট জুতা ও নামি-দামি ব্যান্ডের জুতার। আমাদের দোকানে ৩শত থেকে ৪হাজার টাকার জুতা পাওয়া যাচ্ছে।
জয়পাড়া পূর্ব বাজার মালিক সমিতি সভাপতি মো. মানিক বেপারি জানান, আমরা বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ক্রেতাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা রোজা আসার সাথে সাথে জয়পাড়া কলেজ মোড়ে থেকে ওয়ান ব্যাংক পর্যন্ত গাড়ি আসা বন্ধ করে দিয়েছি যাতে করে ক্রেতারা যানজট এরিয়ে তাদের পছন্দের জামা কাপড় কিনতে পারে সে জন্য। কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ দেখে আমরা খুশি। আশা করছি, এবার ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর ঈদের বাজারে মেয়েদের দেশি সুতি থ্রি-পিসের সঙ্গে ভারতীয় জামা, পুষ্পা, অরগেনজা, জয়পুরি ও পাকিস্তানি শারারা-গারারা বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের থ্রিপিস ১ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঞ্জাবি পায়জামাও বিক্রি হচ্ছে ৪শত থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও জুতা বিক্রি হচ্ছে ৫শত থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রি বেশীর জন্য s3,সাথী সু স্টোর, বেগম আয়েশা শপিং মলসহ বেশ কয়েকটি দোকানে দেওয়া হচ্ছে লটারি ও ছাড়।
মেঘুলা বাজারে দোকানীরা জানান, আমাদের এই বাজারে একটু কম ভির থাকে কারণ সবাই চলে যায় জয়পাড়া বাজারে শপিং করতে সে জন্য আমাদের এবাজারে একটু কম ভির থাকে। তবে বেচাকেনা ভালোই চলছে।
দোহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুস্তাফিজুর রহমান জানান, সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দাম নেওয়া যাবে না। যাঁরা এমন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলছে। ইতি মধ্যে আমরা অতিরিক্ত দাম রাখায় ব্লাক বি স্মার্ট কালেকশনকে চার হাজার টাকা জরিমানা করেছি এবং অন্য সব দোকানিদেরকে সর্তক করেছি যাতে বেশী দামে কোন কিছু বিক্রি না করে। বেশি দামে বিক্রি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ক্রেতাসমাগম বেশির কারণে রাস্তায় সামনে দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। পৌর ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা দেখা গেলেও যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।