কবে হবে দোহার পৌর নির্বাচন?? সীমানা জটিলতায় ১৯ বছর ধরে আটকে আছে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী দোহার পৌরসভার নির্বাচন। এদিকে বছরের পর বছর কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পৌরবাসী।
একটি প্রভাবশালী মহল এই পৌরসভার নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দোহার উপজেলার জয়পাড়া, রাইপাড়া, সুতারপাড়া ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের আংশিক নিয়ে ২০০০ সালে গঠিত হয় দোহার পৌরসভা। ওই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। এর পর সীমানা জটিলতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও নামকরণ নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় কেটে যায় ১৩ বছর। ২০১৩ সালে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও ভোট গ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে মাহমুদপুরের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান সীমানা জটিলতা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। এতে নির্বাচন আবার ঝুলে যায়। আব্দুস সোবহানের অভিযোগ, মাহমুদপুরের যে অংশটি দোহার পৌরসভায় পড়েছে, তারা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। তাদের বাদ দিয়ে পৌরসভা সীমানা নির্ধারণের দাবি জানান তিনি। ২০১৩ সালের ২৫ মে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তফসিল ঘোষণার পরপর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে মেয়র পদে ১৫ জন ও নয়টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৬ জন ও তিনটি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা বাতিল ও প্রত্যাহারের পর প্রতীক বরাদ্দ পান ৭৪ জন প্রার্থী। নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছিলেন প্রার্থীরা। এক যুগ পর নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররাও ছিলেন নতুন জনপ্রতিনিধিকে বেছে নেওয়ার অপেক্ষায়। সেই মুহূর্তে ৭ মে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড মাহমুদপুর ইউনিয়নের চর লটাখোলার বাসিন্দা আবদুস সোবহান বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদন করেন।
পৌরবাসী মনে করেন, ১৯ বছর ধরে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তারা মেয়র ও কমিশনার নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন না। পৌরসভার বাসিন্দা কুদ্দুস জানান, বর্তমানে পৌর এলাকায় নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বাজেট প্রকাশ হলেও চোখে পড়ার মতো কাজ হয়নি। বছরের অধিকাংশ সময় পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো থাকে খানাখন্দে ভরা। মশা নিধনে নেই কোনো ব্যবস্থা।
রাইপাড়া ইউনিয়নের শাহরিয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স নিচ্ছে। কিন্তু রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কথা বললে দুই পরিষদ থেকে একে অন্যের ওপর দায় চাপানো হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, দুই সংস্থার টানাহেঁচড়ায় পৌরবাসী কুপোকাত। রাস্তায় খুঁটি আছে তো বাতি নেই। তাই রাতের শহরে সড়কবাতি জ্বলে না। অন্ধকারে চলাফেরা করতে তাদের সমস্যা হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী তা তারা জানেন না। এদিকে গত ২৪ মার্চ অতিরিক্ত কর আদায়ের প্রতিবাদে পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও করে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসী। এ সময় কিছু অতি উৎসাহী পৌরসভায় ভাঙচুর চালায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে আন্দোলনকারীদের একিটি প্রতিনিধি দল মেয়র আ. রহিমের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। পৌরসভার নির্বাচনসহ বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র আব্দুর রহিম মিয়া সব দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বলেন, ‘সরকার চাচ্ছে না দেখে নির্বাচন হচ্ছে না। আমি এখান থেকে সরে যেতে পারলে বাঁচি।’
মেয়র আরও বলেন, ১৭ বছর ধরে নির্বাচন হয় না। জনসাধারণও ঠিক সময়ে ট্যাক্স দিচ্ছে না। ট্যাক্স সংগ্রহ করতে গেলে কর্মকর্তাদের মারতে আসে। আমি কোথা থেকে উন্নয়ন করব। সরকারের কাছ থেকে বছরে মাত্র ৬০ লাখ টাকা পাই। এত কম টাকায় উন্নয়ন হবে কেমনে। সীমানা জটিলতা ও মামলার ব্যাপারে মেয়র কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
