টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়্ত্বি পেয়েছেন ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তার দায়িত্ব পালনকালেই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর মর্যাদা লাভ করে। এ সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ মহিলা শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং নেভাল ফোর্স পাঠানো শুরু করে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিবদমান সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ড. মোমেন। বাংলাদেশ বিরোধপূর্ণ ওই সমুদ্রসীমা বিজয় করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ড. মোমেন। তিনি জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো অপারেশনের উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউনিসেফ নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ৬৭তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উপ-সভাপতি এবং সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতিসংঘে যোগ দেয়ার আগে ড. মোমেন জাতিসংঘের পিস বিল্ডিং কমিশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি ফ্রামইংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে সৌদি আরবের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থনেতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
ড. মোমেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, দ্য সালেম স্টেট কলেজ, মেরিম্যাক কলেজ, ক্যামব্রিজ কলেজ, কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।
১৯৭৮ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ফোর্ড ফাউন্ডেশন এবং মেশন ফেলো হিসেবে উচ্চশিক্ষা নেয়ার আগে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া সময়ে সময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত ছিলেন।
ড. মোমেন একজন লেখক ও কলামনিস্ট। তিনি ৪টি বই এবং ২৫০টির ওপর গবেষণাপত্র লিখেছেন। তিনি অর্থনীতি এবং ব্যবসা প্রশাসনে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (বোস্টন) থেকে ডক্টরেট এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে লোক প্রশাসন, পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক্সে এমপিএ করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিএ ও এমএ করেন।
ড. মোমেন এর আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের অর্থ ও জাতীয় অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রকল্পে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শিশু শ্রম, শিশুকে জকি হিসেবে ব্যবহার এবং শিশু পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তার নিরন্তর প্রয়াসের ফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আদম পাচার সম্পর্কিত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরবে কর্মরত অবস্থায় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও সোচ্চার ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন। এরপর স্বাধীন দেশেও নতুন সরকারের অধীনে যুক্ত হন। কিন্তু ১৯৮২ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয় বিশেষ সামরিক অধ্যাদেশ (৯) জারির মাধ্যমে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ড. মোমেন। দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।