প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারিখাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, একটা কুচক্রী মহল সরকারকে বিপদে ফেলতে চামড়া ব্যবসায়ীদের বিভ্রান্ত করেছে। ফলে চামড়ার বিশাল দরপতন হয়। এবছর কোরবানিতে এক কোটি চামড়া হয়। এবার তার মধ্যে ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে, মাটিতে যে চামড়া গেছে তাসহ। প্রতিবছর কিন্তু ৫ হাজার চামড়া এমনিতেই নষ্ট হয়। এবার মূলত বেশি গরমের জন্যই চামড়া বেশি নষ্ট হয়েছে। জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ও সিলেটে বেশি চামড়া নষ্ট হয়েছে। আর কুষ্টিয়ায় কিছু নষ্ট হয়েছে। ঢাকা ও নাটোরে নষ্টই হয়নি।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকার, ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্টদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম ছাড়াও ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, চামড়া আড়তদার ও কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত রয়েছেন।
এবছর এক কোটি চামড়ার মধ্যে মাত্র ১০ হাজার পিস নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। চামড়া শিল্পের কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, চামড়া তেমন নষ্ট হয়নি। এরইমধ্যে চামড়া কেনা শুরু হয়েছে। একটি দেশ যখন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যায়, তা ব্যাহত করতে একটি চক্র কাজ করে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন এক কোটি চামড়ার মধ্যে এবার দশমিক ৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে। এবার যেহেতু গরম পড়েছে সেজন্যই ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হতে পারে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, চামড়ার বিষয়ে নীতিমালা হচ্ছে, আজকের বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আগামী ২২ তারিখে এফবিসিসিআই’র মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে সমাধান করা হবে। এটা গতানুগতিক, এখানে তেমন কোনো সমস্যা নেই। আজকেই সব সমাধান হয়েছে। চামড়া শিল্প নিয়ে যে আস্থার সংকট হয়েছে সেটা হয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে। তারা বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীসহ মিডিয়াকে মিসগাইড করেছে।
তিনি বলেন, এবছর এক কোটির ওপরে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে। অন্যান্য বছর নষ্ট হয় মাত্র পাঁচ হাজার পিস চামড়া। ব্যবসা করতে গেলে এধরনের সমস্যা থাকবেই। তবে মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী আমাদের এবছর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে।
বৈঠকে দেনা পাওনা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আগে কিন্তু তারা পাওনার জন্য কখনো অভিযোগ করেনি। সেখানে যে আস্থার বিষয় সেটি কাজ করেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত না, তখন তারা না বুঝে পুঁজি হারালে তাদের মাথা নষ্ট হয়। এ ধরনের ব্যবসায়ীরাই মিডিয়াকে মিসগাইড করেছে।
চামড়া রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা কাঁচামাল, রপ্তানি করা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। সরকার প্রয়োজন মনে করলে রপ্তানি করবে। তবে অবস্থা বুঝে, রপ্তানি করবো, নাকি করবো না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আশ্বস্ত করেছেন, তারা ট্যানারি মালিকদের কাছে এখন থেকে চামড়া বিক্রি করবেন। আর আগের যে বকেয়া টাকা রয়েছে, তা ২২ আগস্ট এফবিসিসিআই’র মাধ্যমে আদায়ের কথা রয়েছে। তারা দুইপক্ষের সঙ্গে বসে সমাধান করে দেবে। যে সমস্যা ট্যানারির মধ্যে রয়ে গেছে, তা সমাধানে মন্ত্রী ও উপদেষ্টা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ আগস্ট সংশ্লিষ্ট ফিনিস লেদার অ্যাসোসিয়েশন ও টানার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে আড়তদারদের পাওনা আদায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।