নাফিস আহমেদ সুমন। দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের ব্যাক্তিগত সহকারী। সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। এখন পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে, নিয়মিত অফিস করছেন। কিভাবেই বা তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। কিভাবে সে সময় তিনি কাটিয়েছেন? কি কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন? আর কিভাবেই বা তিনি সুস্থ্য হলেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেছেন নিউজ৩৯ এর সাথে। নিউজ৩৯ এর পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলেছেন নিউজ৩৯ এর স্টাফ রিপোর্টার শরিফ হাসান।
প্রশ্নঃ সুমন ভাই, আপনি কিভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন –
নাফিস আহমেদ সুমনঃ আমি দোহার উপজেলায় চাকুরি করি। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলে কাজ করেছি। আসলে করোনা ভাইরাসটি হচ্ছে অদৃশ্য। কার শরীরে অবস্থান করে আছে এটা বুঝা মুশকিল। আর যিনি বহন করছেন তিনি যদি শারিরিকভাবে অসুস্থ হন তাহলে হয়ত কিছুটা অনুমান করা যায়। আর কিভাবে কার মাধ্যমে যে আক্রান্ত হলাম এটা বলা অসম্ভবই।
প্রশ্নঃ আক্রান্ত হয়েছেন কিভাবে বুঝতে পারলেন-
নাফিস আহমেদ সুমনঃ ঈদের পরদিন হঠাৎ গরম ঠান্ডা লেগে গিয়েছিল। নাক দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। সাথে জ্বর, ঠান্ডা আর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতে থাকে। আমি নরমালি নাপা আর হিসটাসিন খেয়ে নিয়েছিলাম। পরদিন খাবারের স্বাদ চলে গিয়েছিল। তখনো বুঝিনি এটা কেন হচ্ছে। সাথে সাথে ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখতে পাই যে করোনায় মুখের স্বাদ চলে যায় এমন উপসর্গ আছেই।
কিন্তু আমি তখনো পাত্তাই দেইনি, ধরে নিয়েছিলাম ঠান্ডার কারনে এমন হয়েছে। পাশাপাশি আমি শারিরীকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। প্রেসার আর ডায়েবেটিক মেপে দেখি ডায়েবেটিক কমে ২.৫। আমি নরমালি দুটি দিন অসুস্থ ছিলাম। তারপর অনেকটা সুস্থ হই। এরপর ২জুন করোনার স্যাম্পল দেই। আর ৫ জুন শুক্রবার রাত সাড়ে দশটায় নিশ্চিত হই আমি করোনা পজেটিভ।
প্রশ্ন: যখন জানলেন আপনি করোনা পজিটিভ তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিলো। সাথে সাথে কি কি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
নাফিস আহমেদ সুমনঃ আমি বাসায় রাতের খাবার খেয়ে ল্যাপটপে নাটক দেখতেছিলাম। হঠাৎ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে ফোন আসে। জানায় আমার রেজাল্ট পজেটিভ। আমি থমকে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম ভুল হচ্ছে কোথাও। কি করবো মাথায় কিছু কাজ করতেছিল না। আমার ১১ মাসের বাবুটার কি হবে? আমার বাবা মা তাদের কি হবে? সমাজ বিষয়টা কিভাবে নিবে, আমি এখন কি করবো? এমন ভাবতে ভাবতে আমার পুরো শরীর কাপতেছিল। আমি অনেকক্ষণ চুপচাপ দরজায় হেলান দিয়ে বসে রইলাম।
বউকে জানালাম ও সাথে সাথে কান্না শুরু করে দিল। মেয়ে মানুষ এমনিতেই ঘাবড়ে যায় তাড়াতাড়ি। আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কি করবো। সত্য বলতে সিদ্ধান্ত নিলাম ঘরেই আলাদা থাকবো আর কাউকে জানাবো না। সিদ্ধান্তটা সঠিক কিনা ভাবিনি। পরিবারকে আর আমার বাবুকে সেফ করতে হবে এমন ভয় আমাকে পেয়ে বসেছিল। আমি শারীরীকভাবে সুস্থ ছিলাম, কিন্তু মনোবলটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। সব এলোমেলো লাগতেছিল।
প্রশ্নঃ বর্তমানে আপনার শারীরিক অবস্থার কথা বলেন-
নাফিস আহমেদ সুমনঃ ৬জুন শনিবার হতে আমি ঔষধ খাওয়া শুরু করি। ডাক্তারের পরামর্শে বেক্সিমকোর ইভেরা-১২ পাচদিনের কোর্স আর ঘরে নিজেই প্রাকৃতিক চিকিৎসা শুরু করি। বর্তমানে আমি আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।
প্রশ্নঃ শারীরিক ভাবে কি কি সমস্যা বা যন্ত্রণা অনুভব করছেন। কি কি কষ্ট হয় করোনার কারণে।
নাফিস আহমেদ সুমনঃ করোনায় মুলত ঠান্ডা জ্বর কাশি হাচি শ্বাস কষ্ট গলা ব্যাথা এ ধরনের উপসর্গ হয়। স্বাদ গন্ধ চলে যায় আর প্রচন্ড মাথা ব্যাথাও হয়। প্রথমদিকে আমার শরীরে জ্বর আসে, সাথে ঠান্ডা স্বর্দি। শরীর অনেক দুর্বল ছিল। খাবারের কোন স্বাদ গন্ধ ছিল না। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতো কপালের দিকে।
প্রশ্নঃ ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন কি না?
নাফিস আহমেদ সুমনঃ ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। যেহেতু করোনার জন্য তেমন কোন ভাল চিকিৎসা এখনো আসেনি সেহেতু কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ম করে খাওয়া আর ন্যাচারালি ট্রিটমেন্ট গ্রহন করতে হয়। নিয়মিত গরম পানি খাওয়া, আদা, রসুন, কালোজিরা, লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা, লেবু এগুলা মিক্সড করে গরম পানির ভাপ নিতে হবে।
প্রশ্নঃ আপনার পরিবার বা আশে পাশের থেকে কি কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।
নাফিস আহমেদ সুমনঃ মূলত এ বিষয়টায় সবাই কষ্ট পায়। কারন করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তি সবার কাছে ভয়ের আতঙ্কের। কেউ চায়না অসুস্থ হতে। যার কারনে আক্রান্ত ব্যাক্তি একা হয়ে পড়ে। পরিবার সমাজ সব কিছু থেকে আলাদা জীবন যাপন করতে হয়, যেটা মানুষ হিসেবে খুবই কষ্টের। প্রতিকূল অবস্থাটা আসলে ভয় থেকেই আসে। আক্রান্ত হলে নিজের যুদ্ধ নিজে করতে হয়। তাই সাহস আর মনোবল সব সময় ধরে রেখে এগুতে হয়। আমি আমার পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি, তারা আমাকে মানষিকভাবে সাপোর্ট করেছে যেন ভেঙ্গে না পরি।
প্রশ্নঃ পরিবারের ও আশেপাশের লোকজন আপনাকে কি ধরনের সমর্থন বা সহযোগিতা করেছেন।
নাফিস আহমেদ সুমনঃ আপনি যখন একা তখন আপনার আপনজনদের আপনি অনুভব করবেন। যখন তারা আপনাকে সাহস দিবে আপনি এমনিতেই অর্ধেক সুস্থ বোধ করবেন।
আমার সম্মানিত স্যার উপজেলা চেয়ারম্যান মো: আলমগীর হোসেন প্রতিদিন আমার ও আমার পরিবারের খোজ নিয়েছেন। আমার অফিসের সবাই, আমার উপজেলার প্রিয় স্যাররা সহ সকল প্রিয় নেতাকর্মিরা নিয়মিত খোজ খবর নিয়েছেন সাহস দিয়েছেন। এটা সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় যখন নিজেকে আর একা মনে হয় না। সবার ভালবাসা পেয়ে আল্লাহর রহমতে আমি এমনিতেই সুস্থ হয়ে গেছি।
প্রশ্নঃ কি কি চিকিৎসা নিচ্ছেন, কি কি ধরনের খাবার খাচ্ছেন?
নাফিস আহমেদ সুমনঃ চিকিৎসা মুলত উপসর্গ দেখে দেখে হয় আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে চিকিৎসা পদ্ধতিটাও অন্য রকম হয়। আল্লাহর রহমতে আমি শুধুমাত্র বেক্সিমকো এর ইভেরা১২ পাচদিন নিয়েছি। খাবারের বিষয়টা এ সময় খুব খেয়াল রাখা জরুরি। শরীর দুর্বল থাকে। বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার চেস্টা করেছি, তরল খাবার খেয়েছি বেশি। গলা শুকনা রাখা যাবেনা এটাই মূল টার্গেট।
প্রশ্নঃ কিভাবে প্রতিদিনের সময় পার করছেন
নাফিস আহমেদ সুমনঃ এ সময়টা যে কিভাবে পার করতে হবে তার কোন অগ্রীম পরিকল্পনা কারো থাকেনা। সারাদিন শুয়ে বসে থাকাটাও সম্ভব না। নামায পড়া, ল্যাপটপে নাটক দেখা, মোবাইলে। গেম খেলা, নিউজ পড়া। আমিক দুরে থেকে পরিবারের সবার সাথে নিয়মিত কথা বলেছি।
প্রশ্নঃ সুস্থ যারা আছে তাদের ব্যাপারে আপনার কি পরামর্শ?
নাফিস আহমেদ সুমনঃ সুস্থতা আল্লাহর বড় নিয়ামত। অসুস্থ হলেও আল্লাহ হেফাজত করেন। ভয় না পেয়ে করোনা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে। সামাজিক দুরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে জীবন যাপন করার সময় এসে গেছে। ঔষধের উপর ভরসা না রেখে শারিরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিতে হবে। নিয়মিত গরম পানি পান করতে হবে। ঠান্ডা যেহেতু মূল সমস্যা সেহেতু ঠান্ডা জাতীয় সকল খাবার পরিহার করতে হবে। অসুস্থ বোধ করলে সাথে সাথে পরিবার ও সকলের থেকে আলাদা থাকতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি আর মনোবল চাঙা রাখতে হবে। নিজে সুস্থ থাকুন পরিবারের সবাইকেধ সুস্থ রাখুন সমাজের সবাইকে সুস্থ রাখার চেস্টা করুন। দেশকে করোনা নামক মহামারি থেকে বাচাতে অবদান রাখুন।