সাগর রায়/ আতাউর রহমান সানী: ঈদের আনন্দে জমে উঠেছে ঢাকার দোহার উপজেলার মৈনট ঘাট এলাকা। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সুবিশাল পদ্মা নদী। নদীর বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য বালুর চর যেখানে সূর্যের আলোর কিরণে চকচক করছে বালু প্রতিনিয়ত। পদ্মা যেন আজ সেজেছে নব-আঙ্গিকে এক নতুন রূপে। এই মায়াবী পদ্মা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে পরিচিত ঢাকার দোহারের মৈনট পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ মিরাজ (১৮) ও তালহা (১৮) নামে দুই যুবকের এখনো সন্ধান মেলেনি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে আসা দমকল বাহিনীর ডুবুরিরা তিন ঘণ্টা ধরে উদ্ধার অভিযান চালালেও তাদের সন্ধান মেলেনি।
বৃস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় তারা নিখোঁজ হন। এদিকে, নিখোঁজ মিরাজ ও তালহার স্বজনদের কান্না আর আহাজারি চলছে মৈনট পদ্মাপাড়ে। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন।
মিরাজের মা আয়েশা খাতুন বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে আমার ছেলে। আমি জিজ্ঞাসা করলে বলে, সোরওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যাওয়ার কথা। সন্ধার দিকে মোবাইলে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে এসেছি।” তিনি জানান, তাঁর ছেলে মিরাজ ঢাকার ইসলামপুরের একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
নিখোঁজ ওই দুই যুবকের সঙ্গে ঘুরতে আসা মো. জুবায়ের বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুরে আমিসহ মিরাজ, তালহা এবং হাসিব- এই চার বন্ধু ফেসবুকে ‘মিনি কক্সবাজার মৈনট’ দেখে ঢাকার সূত্রাপুর থেকে মৈনটে পদ্মাপাড়ে ঘুরতে আসি। একপর্যায়ে মিরাজ ও তালহা পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে দুইজন পানিতে খেলতে থাকে। একসময় তারা কিছুটা দূরে চলে যায়। নিমিষে দুইজনকে আর দেখতে পাইনি আমরা।”
অপর বন্ধু হাসিব বলেন, “বিকেল ৫টার দিকে গোসল করতে নেমে মিরাজ ও তালহা যখন পানি ছিটাছিটি করছিল তখন আমি মোবাইলে ছবিও তুলেছি। কিন্তু আমি ও জুবায়ের একটু অন্যমনস্ক হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নদীর দিকে চোখ ফেরানোর পর ওদের আর দেখতে পাইনি।”
খবর পেয়ে দোহার থানা মাহমুদপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক(এসআই) রাকিব ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তিনি বলেন, “মিরাজ ও তালহার সঙ্গে ঘুরতে আসা অপর দুই বন্ধু জুবায়ের ও হাসিবের তথ্যমতে আমরা খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু ওদেরকে পাওয়া যায়নি।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, “গত কয়েকদিন আগে মৈনটে গোসল করতে নেমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এরপর উপজেলা প্রশাসন পদ্মাপাড়ে ভ্রমণে সর্তকতা জারি করে এবং নদীতে গোসল করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ঈদের দিন থেকে হাজার হাজার মানুষ মৈনটে আসছে। ঈদের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এখানে ঘুরতে এসেছিল। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে না পেরে আমরা সারাদিন মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করেছি যাতে কেউ পদ্মা নদীতে গোসল করতে না নামে। কিন্তু অনেকেই মানছেন না, আমরা কী করব বলুন।”
জুবায়ের ও হাসিব জানান, পরিবারের কাউকে না জানিয়ে তারা ঢাকা থেকে মৈনটে ঘুরতে এসেছে। তারা সবাই ঢাকার ধোপখোলা সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা। মিরাজ ওই এলাকার মো. গনির ছেলে ও তালহা মো. মনিরের ছেলে।