অস্ট্রেলিয়া শ্রম ঘাটতি পূরণে চার বছরে ১২ লাখ কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য বড় সুযোগ আসছে এই সুযোগ কি কাজে লাগাতে পারবেন দোহার, নবাবগঞ্জের তরুণ সমাজ।
দোহার, নবাবগঞ্জের বেশিরভাগই প্রবাসী। তাই বলা যায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স উৎস হিসেবে ১৬ তম অবস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া শ্রম ঘাটতি পূরণে চার বছরে ১২ লাখ কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য বড় সুযোগ এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন চাকরির বাজার দখল করতে বাংলাদেশকে আরও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। আর এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে দোহার, নবাবগঞ্জের তরুণ সমাজকে কেননা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন বেশি।
এ বিষয়ে সেপ্টেম্বরে মাসে অস্ট্রেলিয়া সরকার জানায় শ্রম ঘাটতিতে থাকায় দেশটি আরও ৩৫ হাজার আবেদনসহ এক লাখ ৯৫ হাজার স্থায়ী অভিবাসী আবেদন গ্রহণ করবে।
অস্ট্রেলিয়া এর আগে প্রতি বছর সর্বোচ্চ এক লাখ ৬০ হাজার স্থায়ী অভিবাসনের অনুমোদন দিয়েছে। এবার নার্স, প্রকৌশলী ও কৃষি কর্মীদের নিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশি মানুষ নেওয়া হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত জবস অ্যান্ড স্কিলস সামিটে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলেন’ আমরা প্রথমে অস্ট্রেলিয়ানদের চাকরিই গুরুত্ব দিব। তবে কোভিড-১৯-এর প্রভাব এতটাই গুরুতর যে আমাদের সব সম্ভাব্য জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর পরেও স্বল্প মেয়াদে অন্তত কয়েক হাজার কর্মীর সংকট থাকবে।’অস্ট্রেলিয়া ব্যবসা খাতে হিমশিম খাওয়ায় দক্ষ পেশাজীবী নেওয়া হবে।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী এবং কনসালটেন্সি ফার্ম স্টাডি সলিউশনের সিইও ব্যারিস্টার এরশাদ আহমেদ নিশান বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে মূলত তিনটি বিভাগে- স্টুডেন্ট ভিসা, ডিপেন্ডেন্ট ভিসা (ফ্যামিলি) এবং দক্ষ জনশক্তির জন্য কাজের ভিসা।’
‘শিক্ষার্থীদের অভিবাসনের মাধ্যমে কর্মশক্তির ঘাটতি মেটানোকে অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই গুরুত্ব দিয়েছে। যারা পড়তে যায় তাদের পরে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়। মেলবোর্ন ও সিডনি ব্যতীত অন্যান্য শহরে শিক্ষার্থীরা স্নাতক পাশের পর পাঁচ বছর কাজ করতে পারে, বলেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ফার্মের মাধ্যমে আন্ডারগ্র্যাড, মাস্টার্স এবং ডিপ্লোমা পর্যায়ের আটজন শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়া গেছে। বাংলাদেশ থেকে ভিসা পাওয়া এখন সহজ হয়েছে কেননা বাংলাদেশ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ক্যাটাগরিতে উঠে এসেছে’।
দ্য ফিনান্সিয়াল রিভিউ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায় অস্ট্রেলিয়ার চার বছরে আরও ১২ লাখ কর্মী প্রয়োজন, যার মধ্যে ৯৮ হাজার ৬০০টি পদে বেশি কারিগরি বিশেষজ্ঞ, ২০ হাজার ৪০০ আইনজীবী এবং সাত হাজার ৭০০ অডিটরের প্রয়োজন হবে। বেতন বাড়ানো ও পদোন্নতির জন্য নিয়োগকর্তাদের ওপরও চাপ বাড়ছে।
এই পেশাগুলোতে কর্মসংস্থান ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বা প্রায় দুই লাখ ছয় হাজার ৬০০টি কর্মসংস্থান বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইটি সহকারী ও টেস্ট ইঞ্জিনিয়ারের জন্য সবচেয়ে বেশি ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কর্মসংস্থান বাড়বে যা প্রায় এক লাখ ৫৭ হাজার। ডেটাবেস, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও আইটি সহকারীর চাহিদা বাড়বে ৩৫ শতাংশের বেশি।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অস্ট্রেলিয়ান ফার্ম বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসল)-এর মাধ্যমে আরও বাংলাদেশি আইটি বিশেষজ্ঞ বিশেষ করে পেগা ডেভেলপার/ইঞ্জিনিয়ার, পিএইচপি/সিমফনি ডেভেলপার, সেলসফোর্স ডেভেলপার এবং নেট ডেভেলপারদের নিয়োগ শুরু করেছে।
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) ও ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. সালাহউদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ায় জনবল সংকট সম্পর্কে অবগত। সেখানে পিআর নিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা বিদ্যমান পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারেন। প্রয়োজনে দূতাবাস সব ধরনের সহায়তা দেবে।’
এদিকে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণার পর চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সিডনিতে অবস্থিত একজন বাংলাদেশি অভিবাসন আইনজীবী এবং সাংবাদিক কাওসার খান সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই বিভিন্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দাবি করা হয় আপনি স্পনসর বা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ান ভিসা পেতে পারেন। এগুলো ভিউয়ারদের আকৃষ্ট করার জন্য ক্লিকবেইট। কিছু ভিডিও বিভিন্ন ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় রিকয়ারমেন্টগুলোকেও ভুলভাবে উপস্থাপন করে।’
তিনি উল্লেখ করেন প্রায়ই ওয়ার্কিং হলিডে ভিসাকে আকর্ষণীয় ভিসা হিসাবে প্রচার করা হয়, যা আগতদের অস্ট্রেলিয়ায় এক বছর থাকার ও খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ দেয়।
‘কিন্তু তারা বলে না যে বাংলাদেশ এমনকি ভারতের জন্যও এই ভিসা প্রযোজ্য নয়। কেবল মাত্র ১৯টি দেশের নাগরিকদের এই ভিসা দেওয়া হয়,’ বলেন তিনি।
ব্যারিস্টার এরশাদ আহমদ নিশান বলেন, কিছু লোক মানুষকে ধোঁকা দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। এসব কিছুর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করাটা খুবই জরুরি