৭ মার্চের ভাষণ দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    340

    জিসান,নিউজ৩৯ঃ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘, ‘৭ মার্চের ভাষণ কোনো লিখিত ভাষণ ছিল না। কোনো রিহার্সেল দিয়ে তৈরি করা ভাষণও না। এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে দীর্ঘ ২৩ বছরের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর।’ এ ভাষণের কোনো তুলনা হয় না। এটি অতুলনীয় ভাষণ। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর এ ভাষণ বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এ ভাষণ আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ দিক নির্দেশনা ছিল এ ভাষণে। এই ভাষণের আবেদন যুগ যুগ ধরে থাকবে। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হবে। খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা ও শিক্ষা পাবে। এটাই ছিল ৭ মার্চের ভাষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছয় দফা দাবি ছিল মুক্তির সনদ। ছয় দফার বিপরীতে একটি আট দফা দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয় ছয় দফা থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না।’

    অন্য খবর  ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দরিদ্রদের মাঝে গরু ও সেলাই মেশিন বিতরন

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে এ সবের অনেকটাই আমরা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কতর্ব্য।’

    প্রায় ৫০ মিনিটের ভাষণে শেখ হাসিনা মূলত ৭ মার্চের ভাষণের নানা দিক এবং মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি বর্ণনা করেন। সচরাচর বিভিন্ন আলোচনায় তিনি যেভাবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দিক নিয়ে কথা বলেন, আজকে সেটা হয়নি।

    এ সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের আগে চট্টগ্রামে ব্যারিকেড দেয়া বাঙালিদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছিল, সেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

    পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ম্যাসেজটা সমগ্র বাংলাদেশে পৌঁছার সাথে সাথে তিনি যে সংগ্রাম পরিষদ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল। ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠকারী এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করতে দেয়া ব্যারিকেড ভাঙতে গুলি করেছিলেন।’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিটাগাংয়ে যে ব্যারিকেড দেয়া হয়, সে ব্যারিকেড ভাঙার জন্য যে গুলি চালানো হয়েছিল আর্মির থেকে। ওই ২৫ তারিখ রাত পর্যন্ত, সেখানে কিন্তু জিয়াউর রহমানও একজন ছিল যে এদেরকে গুলি করে। এখনও চিটাগাং এর বহু নেতারা আছে, তারা ওই ঘটনা জানেন। আন্দোলনরতদের ওপর গুলি চালিয়ে তখন অনেক বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তখন যদি সাথে সাথে পদক্ষেপ নিত, তাহলে বহু আর্মির সৈনিকদের বাঁচানো যেত। সেখানে মেজর রফিক থেকে শুরু করে অনেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল। বিভিন্ন জায়গায় যে বাঙালি অফিসাররা, তারা কিন্তু তাদের গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে চলে যান।’

    অন্য খবর  দোহার পৌরসভায় পদোন্নতি না পেয়েও নির্বাহী প্রকৌশলী

    বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘একজন নেতা তার জীবনের সব কিছু দিয়ে মানুষকে ভালোবেসে, সংগ্রাম করে, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেও দেশকে স্বাধীন করার জন্য যা যা করণীয়, যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। আমার মনে হয় এর আর কোনো তুলনা কারও সাথে হয় না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নয়টা মাস বজ্রকণ্ঠ হিসেবে এই ভাষণ প্রতিদিন বাজানো হতো। মাঠেঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন উজ্জীবিত হতো, আমরা যারা বন্দীখানায়, আমাদের জন্যও সেটা ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন।’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাঙালি জাতি গর্বিত, তারা হারানো মানিক আবার ফিরে পেয়েছে। ৭৫ এ হারিয়েছে তারা এই ভাষণ। এই ভাষণ মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। আজকে সেই ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্যের দলিলে স্থান করে নিয়েছে। কাজেই এটা সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় এবং মুক্তিকামী সকল মানুষের জন্য প্রেরণাদায়ক।’

    আপনার মতামত দিন