শান্ত পরিবেশ, বিশ্ব স্বীকৃত গবেষণাকর্ম, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, প্রচুর স্কলারশিপ, গ্রুপ ওয়ার্ক, স্বাধীন চিন্তার সুযোগ- এসবের জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে সুইডেন বেশ জনপ্রিয়। তাই, পৃথিবীর প্রতিটা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসতে চায়। আপনিও যদি তাদের মতো সুইডেনে পড়তে চান, তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
কেন পড়বেন সুইডেনে?
সুইডেনের পড়াশুনার মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। কেননা, বিভিন্ন শাখায় খ্যাতিমান শিক্ষকেরা পড়ান সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পাশাপাশি, এখানকার শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরই অনেকটা গবেষণানির্ভর। আর এ কারণেই সারা বিশ্বের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এর চাহিদাও অনেক বেশি।
এছাড়া, উন্নতমানের শিক্ষার পাশাপাশি পার্ট টাইম কিংবা ফুলটাইম চাকরি করে এখানে থাকা এবং খাবারের টাকার যোগান দেওয়া যায়।
পড়তে কী কী লাগবে?
ইংরেজি শর্ট কোর্সগুলোতে (৬ মাস) সবচেয়ে কম ডকুমেন্টস লাগে। আইএলটিএস (IELTS) স্কোর ৫.৫ আর এসএসসি (S.S.C) এবং এইচএসসি (H.S.C) থাকলেই যথেষ্ট। তবে, ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স লেভেলের কোর্স এবং প্রোগ্রামগুলোতে আইএলটিএসের স্কোর সর্বনিম্ন ৬.৫ দরকার। মাস্টার্স প্রোগ্রাম এ চান্স পেতে হলে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যারা সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য অথবা ইংলিশ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাদের জন্য আইএলটিএস শিথিলযোগ্য।
কখন করবেন আবেদন?
সুইডেনে ২ সেমিস্টারে আবেদন করা যায়।
১. স্প্রিং সেমিস্টার ( মধ্য জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত): এই সেমিস্টারের জন্য আবেদন করা যায় মে মাসের শেষের দিকে।
২. অটাম সেমিস্টার (প্রথম সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত): এই সেমিস্টারের জন্য আবেদন করা যায় অক্টোবরের মাঝের দিকে।
পড়তে কত খরচ হবে?
১. সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত কোর্স ও প্রোগ্রামগুলোতে পড়তে সাধারণত বছরে ৮০,০০০-১১০,০০০ সুইডিশ সেক লাগে।
২. ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার রিলেটেড কোর্স বা প্রোগ্রামগুলোতে পড়তে সাধারণত বছরে ১২০,০০০-১৪৫,০০০ সুইডিশ সেক লাগে।
৩. আর্কিটেকচার ও ডিজাইন রিলেটেড কোর্স বা প্রোগ্রামগুলোতে পড়তে সাধারণত বছরে ১৯০,০০০-২৭০,০০০ সুইডিশ সেক লাগে।
পড়ার জন্য আবেদন করতে কত খরচ হবে?
১. শিক্ষাগত সব ডকুমেন্ট সুইডেন এ পাঠাতে ২০০০ টাকা লাগতে পারে। তবে, এর পরিমান নির্ভর করে ডকুমেন্টসের ওজন ও কোন কোম্পানি থেকে পাঠাচ্ছেন তার উপর।
২. এপ্লিকেশন প্রসেসিং ফিস হিসেবে ৯০০ সুইডিশ সেক খরচ হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হলে প্রথম সেমিস্টারের টিউশন ফিস দিতে হবে।
ভিসার জন্যে আবেদন কখন করবেন?
বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফিস রিসিভ করলে অথবা টিউশন ফিস এর সফট কপি ব্যাঙ্ক থেকে পাবা মাত্র আপনি ভিসা এপ্লিকেশন এর জন্য প্রস্তুত। এখন আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
ভিসার জন্য আবেদন করতে যা যা লাগবে
১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া অফার লেটারের সফট কপি।
২. ব্যাঙ্ক সচ্ছলতা।
৩. ভিসা ফিস (১০০০ সুইডিশ সেক)
৪. টিউশন ফিসের পেমেন্ট কপি।
৫. আর স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম(ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)।
৬. পাসপোর্ট।
নোট: সুইডেন এ ভিসা এপ্লিকেশন এর জন্য ইন্সুরেন্স লাগে যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দেয়, সুতরাং আলাদা ভাবে ইন্সুরেন্স করার প্রয়োজন হয় না।
ব্যাঙ্ক সচ্ছলতা ভিসা এর জন্য:
যারা ৬ মাসের কোর্স এ আসবেন তাদের জন্য ব্যাঙ্ক এ ৮০১০ X ৬ = ৪৮০৬০ সুইডিশ সেক দেখানো লাগবে।
নোট: যারা ১ বছর, ২ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় এর জন্য স্টাডি করতে আসবেন তাদের ব্যাঙ্কে ৮০১০ (প্রতি মাস) সুইডিশ সেককে বছর অনুযায়ী মাস দিয়ে গুন দিবেন। একটা উদাহরণ দিয়ে ক্লিয়ার করা যাক।
ধরুন আপনি ২ বছরের জন্য স্টাডি করতে আসবেন আর ২ বছরে ২৪ মাস আসে। তাহলে, আপনার ব্যাঙ্কে ৮০১০ X ২০ = ১৬০২০০ সুইডিশ সেক দেখাতে হবে (যারা ১ বছর বা তার বেশি স্টাডি এর জন্য আসবেন তাদের জন্য বছর ১০ মাসে, এ কারনে ২ বছরকে ২৪ এর পরিবর্তে ২০ দিয়ে গুন করা হয়েছে)।
প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সাথে নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন পত্র বাংলাদেশের সুইডেন এম্বাসিতে জমা দিয়ে আসবেন।
বাংলাদেশের সুইডেন এম্বাসির ঠিকানা
বাড়ি নং- ১, রোড নং-৫১, গুলশান-২, ঢাকা
ফোন: ৮৮৩৩১৪৪-৪৭
ফ্যাক্স: ৮৮২৩৯৪৮
ওয়েবসাইট: www.swedenabroad.com/dhaka
ই-মেইল: ambassaden.dhaka@gov.se
সুইডেনের ভিসার জন্য আবেদনের ৩ মাসের মধ্যে জানতে পারবেন আপনি আপনার পছন্দের দেশে যেতে পারবেন কিনা ।
ওয়ার্ক পারমিট কীভাবে পাবেন?
সুইডেনে পৌছানোর ৬ মাস পর আপনি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে আপনার প্রথম সেমিস্টারের ৩০ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হবে এবং কাজ খুঁজে পেতে হবে। পাশাপাশি প্রতিমাসে আপনাকে ১৩৫০০ সুইডিশ সেক আফটার ট্যাক্স দেখাতে হবে।
পার্মানেন্ট হবেন কীভাবে?
ওয়ার্ক পার্মিট এ এপ্লিকেশন করলে প্রথমে ২ বছরের রেসিডেন্স পার্মিট দেয়। তারপর আরো ২ বছরের রেসিডেন্সিয়াল পার্মিট দেয়। এই ৪ বছর পরে আপনি পার্মানেন্ট হবার জন্য এপ্লিকেশন করতে পারবেন।
তবে আর দেরি কেনো? বসে না থেকে শুরু করুন আপনার পছন্দের দেশের পদযাত্রার সূচনা।