রমজানে দাঁত ও মুখের যত্ন

275

চলছে পবিত্র মাস রমজান। এই মাসে  পরিবর্তিত হয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সেই সাথে পরিবর্তিত হয় আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়ার নিয়মকানুনেরও। রমজানে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তা নিয়ে আমরা অনেকেই সন্দিহান থাকি। এ মাসে দাঁতের যত্নে কী করা উচিত, মুখের যত্নে কী করা উচিত, কখন দাঁত ব্রাশ করা উচিত বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যাবে কী না প্রভৃতি নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন জাগে।

আসুন দেখে নিই, রমজানে দাঁত ও মুখের যত্নে আমাদের কী করা উচিত। রমজানে কোনটা নিষিদ্ধ আর কোন কাজটা হালাল:

দাঁত মাজার সময় –

একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখেন। তার দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের পরবর্তন হয় এই মাসে। তিনি সন্ধ্যায় ইফতার ও ভোররাতে সেহরি গ্রহণ করেন। এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোজাদারদের দাঁত মাজার সময়েও পরিবর্তন আনা জরুরী। রমজানে ইফতারের পরে একবার ব্রাশ করে ফেললে ভালো। পরে সেহরির পরে একবার। এ দুবার ব্রাশ করতে হবে। এছাড়া প্রতিবার নামাযের আগে মেসওয়াক করা হলে তা দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

রমজানে দাঁত ও মুখের যত্ন সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা –

যারা রোজা রাখে তাদের মধ্যে বারবার থুতু ফেলার একটি প্রবণতা দেখা যায়।এটা কিন্তু অপ্রয়োজনীয়। মাহে রমজানে দীর্ঘ সময় মানুষ খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকে। এই সময়ে শারীরিকভাবে কিছু পরিবর্তন আমাদের হয়। যেমন শরীরে পানির কিছু ঘাটতি ঘটে। সেই কারণেই দেখা যায় মুখ শুকিয়ে আসে। মুখের যে লালা, যাকে আমরা স্যালাইভা বলি,এটিও কমে যায়। কমে যাওয়ার কারণে ভেতরে স্বাস্থ্যগত যে পরিবর্তন হয়, এর কারণে ভেতরে শুষ্ক একটি পরিবেশ বিরাজ করে। এই শুষ্ক অবস্থা মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর একটি ব্যাপার। এই শুষ্ক অবস্থা তো কোনো কিছু খেয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়, যেহেতু রমজান চলছে। তাই থুথু ফেলে মুখ আর ও শুকনো করে ফেলা কোনভাবেই উচিত নয়।

অন্য খবর  আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় চীনা মেডিকেল টিম

রক্তপাতের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় বিধায় অনেকে দাঁতের জরুরী সমস্যায়ও চিকিৎসা করতে চান না। অনেক রোগী প্রশ্ন করেন মাড়ি দিয়ে একটু রক্ত পড়ল, রোজা আছে কি না? আবার কেউ বলে যে স্কেলিং করতে গেলে রোজা থাকবে কি না। তাদের জন্য আনন্দের বিষয় হচ্ছে, আজকাল অনেক আল্ট্রাসোনিক বা যে ধরনের স্কেলার মেশিন চলে এসেছে যার মাধ্যমে স্কেলিং করলে রক্তপাত হয় না বরং রক্তহীন ও ব্যথাহীনভাবে করা যায়।তাছাড়া ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার এবং পানি রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে।

আর যাদের প্রদাহ আছে, যাকে আমরা বলি জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ সেটি কিন্তু যত্নটা না করলে আরো বেশি বেড়ে যায়। সেখানে খাদ্যকণা জমে যায়। খাদ্যকণার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা বিভিন্ন জীবাণু এসে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে। এতে মাড়ির প্রদাহ, প্রদাহের কারণে রক্তপাত, মুখে দুর্গন্ধ ও নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সুতরাং রমজানে মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিষয়টি বেশির ভাগ নির্ভর করবে। আর হাদিসেই বলা আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।

সাধারণ মানুষের মধ্যে আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, রোজা রেখে মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু মাউথওয়াশ তো বাহ্যিক একটি জিনিস। মুখে কুলি করে ফেলে দিচ্ছেন, এতে রোজার ক্ষতি হওয়ার কোনো কারণ নেই,বরং মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

অন্য খবর  ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ : বৃষ্টি হতে পারে ৩ দিন

তাই আসুন, রমজানে আমরা নিশ্চিন্তে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখি। এতে আমাদের স্বাস্থ্যও যেমন ভালো থাকবে, তেমনি আমাদের রোজাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

রোযা ছাড়াও বছরে অন্তত দুইবার ডেন্টিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডাঃ ইশতি জাহান আভা

বি.ডি.এস(রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিট)

পি.জি.টি ( ঢাকা ডেন্টাল কলেজ)

কনসালটেন্ট,আভা ওরাল & ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা।

বি.এম.ডি.সিঃ ৬৭০৪

অনলাইনে বা টেলিফোনে  সেবার জন্য

মোবাইলঃ ০১৭৯৪-৫৯২৪৩৩

আপনার মতামত দিন