দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১ মাস ১৪ দিন পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সব দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহম্মেদের মধ্যে ভোটযুদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মন্ত্রী মান্নান খানের দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে চরম ভরাডুবি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ঝিলু নিজ কেন্দ্রেও পরাজিত হওয়ায় তার প্রতি নেতাকর্মীরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা যন্ত্রাইল ও নয়নশ্রী এলাকায় স্বাধীনতার পর বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পাস করলেও এ নির্বাচনে অবমূল্যায়ন ও অদক্ষতার কারণে নিশ্চিত পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বলে তৃর্ণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেছেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল মান্নান খান পাস করলেও পরবর্তীতে তিনি জনগণের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল মান্নান খান মন্ত্রী হওয়ার পর ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে গ্র“পিং তৈরি করে একক প্রার্থী না দিয়ে দুজন প্রার্থী দাঁড় করান। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুজনই হেরে যান। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হলে নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এছাড়া মন্ত্রীর পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ায় আওয়ামী লীগের ওপর স্থানীয় জনসাধারণ আস্থা হারিয়ে ফেলে। মন্ত্রীর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভোটের সংখ্যা কমতে থাকে। দশম সংসদ নির্বাচনে আবদুল মান্নানকে ভোট না দিয়ে তারা তার প্রতিপক্ষকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে নাসির উদ্দিন ঝিলু, দলীয় লোকজনদের মূল্যায়ন না করা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় না রাখাকে আবদুল মান্নানের পরাজয়ের মূল কারণ বলে স্থানীয় ভোটাররা মনে করেন। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে যন্ত্রাইল ইউনিয়নে ৫ হাজার, নয়নশ্রী ইউনিয়নে ৩ হাজার ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পাস করেন। এ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেয়নি বলে কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়। নামপ্রকাশ্যে অনিচ্ছুক হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতা বলেন, ত্রাস সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ায় এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে যথাযথ মূল্যায়ন না করায় হিন্দুরা তাকে ভোট দেননি।
এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলের সমর্থিত নাসিরউদ্দিন আহমেদ ঝিলু ও বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা প্রচার সম্পাদক শেখ হান্নান উদ্দিন।
ঝিলুর পক্ষে ভোটের দুই-একদিন আগে মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেখা যায়। কিন্তু অনেক নামি-দামি নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। নেতাকর্মীদের গণসংযোগেও তেমন তৎপর দেখা যায়নি। নিজে বিজয় নিশ্চিত মনে করে সহকর্মী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মাঠ পর্যায় থেকে অভিযোগ ওঠে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ঝিলু উপজেলা নির্বাচনে ২৬ হাজার ৪১০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত না হলে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এবারের পরাজয় থেকে আওয়ামী লীগের শিক্ষা নেয়া উচিত বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।