বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী : পরাজয় নয়, আছে জয়ের ইতিহাস

427
বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী : পরাজয় নয়, আছে জয়ের ইতিহাস

The soldier above all others prays for peace, for it is the soldier who must suffer and bear the deepest wounds and scars of war- General of the US Army MacArthur

‘যদি শান্তি চাও তবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও’। বাংলাদেশীরা জাতিগতভাবেই শান্তিপ্রিয়। তবে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী যুদ্ধ করতে পারে কি না, তা জানার জন্য গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। শান্তিবাহিনীকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে, দীর্ঘ দুই যুগ ন্যূনতম সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিভাবে বৃহৎ শক্তি আশ্রিত শান্তিবাহিনীকে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের রেকর্ড ঘাটলে দেখা যাবে, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার সৈনিকেরা জীবন পণ করে কিভাবে যুদ্ধ করেছে লাহোরসহ অন্যান্য সেক্টরে।

ওই যুদ্ধে প্রথম ইস্ট বেঙ্গলে কর্মরত তদানীন্তন মেজর জিয়াউর রহমান পাক সশস্ত্রবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব হিলাল-ই জুরাত পেয়েছিলেন (অবশ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আর সেই খেতাব কখনো ব্যবহার করতেন না)। লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান যে ভারতীয় ট্যাংকটি ধ্বংস করেছিলেন, তা আজো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ‘ওয়ার বুটি’ হিসেবে।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কথা বললে আরো অবাক হতে হবে। আরমানিটোলা স্কুল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র স্কোয়াড্রন লিডার এম এম আলম জেট যুগে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন মাত্র ৩০ সেকেন্ডের আকাশ যুদ্ধে পাঁচটি ভারতীয় হকার হান্টার জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করে। একই যুদ্ধে তিনি লাভ করেন সিতারা-ই জুরাত খেতাব পরপর দুই বার। ঢাকার বিখ্যাত চিকিৎসক ডাক্তার টি আহমেদের পুত্র স্কোয়াড্রন লিডার আলমগীর আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান বিমানবাহিনী অ্যাকাডেমি- রিসালপুর থেকে সোর্ড অফ অনার প্রাপ্ত। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে তিনি অসামান্য সাহস দেখিয়ে শহীদ হন ও তাকে ভূষিত করা হয় সিতারা-ই জুরাত খেতাবে।

তদানীন্তন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম ভারতীয় জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করায় তাকেও দেয়া হয় সিতারা-ই জুরাত মেডেল। পরে ১৯৬৭ সালে জর্ডান বিমানবাহিনীতে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত থাকার সময় আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনি তিনটি ইসরাইলি জঙ্গি বিমান ধ্বংস করেন ও জর্র্ডান এবং ইরাক থেকে বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত হন। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র জঙ্গি বিমান পাইলট, যিনি তিনটি দেশের বীরত্বসূচক খেতাব লাভ করেছেন ও দুর্ধর্ষ ইসরাইলি বিমানবাহিনীর তিনটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় থেকে আজ পর্যন্ত জঙ্গি বিমান চালকদের যে র‌্যাংকিং মার্কিনিরা করেছে, তাতে এই উপমহাদেশ থেকে একমাত্র সাইফুল আজমের নাম আছে শীর্ষ ১৫ তে। এ ছাড়াও উল্লেখ করা যায়, স্কোয়াড্রন লিডার সরফরাজ আহমেদ রফিকী, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শওকতের নাম। স্কোয়াড্রন লিডার রফিকী ছিলেন রাজশাহীর সন্তান। তিনিও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে শহীদ হন। দু’টি অপারেশনে তার অসাধারণ বীরত্বের জন্য পাক বিমানবাহিনী তাকে শুধু হিলাল-ই জুরাত ও সিতারা-ই জুরাত খেতাবই দেয়নি, বরং তাদের একটি বিমান ঘাঁটির নামকরণ করেছে পিএএফ রফিকী হিসেবে। গ্রুপ ক্যাপ্টেন (তদানীন্তন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট) শওকতও আরব-ইসরাইল যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

এবার আসা যাক আমাদের সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাসে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত পাঁচটি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। মেজর জিয়াউর রহমান স্ত্রী-পুত্রের নিরাপত্তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বিদ্রোহ করেন, যার সাথে ছিলেন অন্যতম মেধাবী মেজর মীর শওকত আলী। তিনি পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে সিনিয়র আন্ডার অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন যা অত্যন্ত কঠিন এক ব্যাপার। ট্যাকটিকস্- এ অসামান্য দক্ষতা ছিল বলে পাক সেনাবাহিনীতে জুনিয়র অবস্থাতেই মীর শওকতকে বলা হতো ট্যাকটিকস-এর জাদুকর। মেজর শফিউল্লাহ তার কোর্সমেট মেজর জিয়ার সাথে পাক মিলিটারি অ্যাকাডেমি- পিএমএতে প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারাই কেবল মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। অপর মেধাবী কর্মকর্তা মেজর খালেদ মোশাররফও পাক আর্মিতে পরিচিত ছিলেন যুদ্ধকৌশলের একজন দক্ষ হাত হিসেবে।

অন্য খবর  তরুনদের ভাবনাঃ সচেতনার বিকল্প নেই

পাক সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামাল মতিনউদ্দিন তার ‘ ট্র্যাজেডি অব এরর’ বইতে লিখেছেন- ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে জিএইচকিউ (জেনারেল হেড কোয়ার্টার্স) পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও যুদ্ধকৌশল কার্যোপযোগী করার জন্য মেজর খালেদ মোশাররফকে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করতে বলে। সে সময় মেজর খালেদ কোনো একটি ব্রিগেডে ব্রিগেড মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বলা বাহুল্য, ব্রিগেড মেজর পদেও নিয়োগ পান কেবল তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন কর্মকর্তারাই। যা হোক, মেজর খালেদ মোশাররফ যে দিকনির্দেশনামূলক পেপার তৈরি করে সাবমিট করেছিলেন পাক সদর দফতরে ঠিক সেটিকেই তারা পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধকৌশল হিসেবে অনুমোদন করে। জে. মতিনউদ্দিন দুঃখ করে বলেছেন- খালেদ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তারই প্রণীত যুদ্ধকৌশল চমৎকারভাবে প্রয়োগ করেন যা পাক বাহিনী তখনো আত্মস্থ করতে পারেনি! মেজর এম এ মঞ্জুর ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে একটি ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর। তিনি ওই ব্রিগেডের পুরো অপারেশনাল প্লান নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই কর্মকর্তা ছিলেন পুরো যুদ্ধকালে সাহসিকতার প্রতীক। মেজর আবু তাহের ছিলেন পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ কমান্ডো বাহিনী এসএসজির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কমান্ডো ব্যাটালিয়নে উপ-অধিনায়ক থাকাকালীন তার অধিনস্থ কর্মকর্তা ছিলেন ক্যাপ্টেন পারভেজ মোশাররফ, যিনি পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। কর্নেল তাহের হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তাকে পাক সেনাবাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রেঞ্জার্স কোর্স করতে পাঠায়। সেখানে তার কোর্স রিপোর্টে বলা হয়- পৃথিবীর যেকোনো সেনাবাহিনীতে, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে ও যেকোনো আবহাওয়ায় কাজ করতে সক্ষম মেজর আবু তাহের।

এরকম কত জনের নামই না উল্লেখ করা যায় বাংলাদেশী জাতির শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের তালিকায়। মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর হাফিজ, শহীদ লে. কর্নেল এম আর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন শমসের মুবিন চৌধুরী, মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান, মেজর জেনারেল আমিন আহমদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল হারুন আহমদ চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল হক, কর্নেল জিয়াউদ্দিন, কর্নেল জাফর ইমাম, কর্নেল অলি আহমদ, মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান, মেজর জেনারেল সি আর দত্ত, মেজর এম এ জলিল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসিম, মেজর জেনারেল আইনউদ্দিন এমনি ক’জন মুক্তিযোদ্ধা যারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন মাতৃভূমির স্বাধীনতায় বিদ্রোহের ঝুঁকি নিয়ে।

যোদ্ধা হিসেবে মেজর জেনারেল জামিল ডি আহসানের পারিবারিক ইতিহাস আবার বিস্ময়কর। তার বড় ভাই ছিলেন পাক বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জিয়া ডি হাসান। ফ্লাইং অফিসার থাকাকালে তিনি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে অর্জন করেছিলেন সিতারা-ই জুরাত খেতাব। আর তার ছোট ভাই জামিল ডি হাসান অর্জন করেছেন বীর প্রতীক খেতাব একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। ফ্লাইট লে. জিয়া ডি হাসান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারেননি, কারণ তার আগেই তিনি এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।

একই পরিবারের দুই সন্তান দুই দেশের বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন এমন নজির পৃথিবীর কোথায় আছে? মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় পুরো পূর্ব পাকিস্তানে মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। তিনি চাইলেই পৃথিবীর নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হতে পারতেন। কিন্তু যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে এবং পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে তার কোর্সে অধিকার করেন প্রথম স্থান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থাকাবস্থায় দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় পাক সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরে কর্মরত অনেকেই সুযোগ পাননি সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার। তবে ওইসব তীক্ষ্ণধী কর্মকর্তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন ছিল তাদের চাকরি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা ইচ্ছে করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে যান বা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি। এদের একজন ছিলেন প্রফেসর কবীর চৌধুরী, প্রফেসর মুনীর চৌধুরী ও ফেরদৌসী মজুমদারের আপন ভাই কর্নেল কাইয়ুম চৌধুরী, যিনি পাক মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে সোর্ড অফ অনার লাভ করেছিলেন প্রথম বাংলাভাষী হিসেবে। তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি তা আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে বেঁচে থাকাবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখত একজন মেধাবী মানুষ হিসেবে।

অন্য খবর  মুক্ত জীবন-রুদ্ধ প্রাণ,ইতিহাসের মুক্তি কোন পথে: মাহফুজ উল্লাহ

এ দিকে বিমানবাহিনীর কথা যদি বলি, তবে এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, এয়ার ভাইস মার্শাল সদরুদ্দিন, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শামসুল আলমের অকল্পনীয় ঝুঁকিপ্রবণ ও সাহসিকতার অপারেশনগুলোকে যুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে হবে। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তো তার অসম সাহসিকতার উদাহরণ স্থাপন করে অর্জন করেছেন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি।

একসময় ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাভাষীদের সশস্ত্র বাহিনীতে খুব একটা নেয়া হতো না। তাদের ডকট্রিনেই বলা ছিল, বাংলাভাষীরা নন মার্শাল রেস। দেখতে ছোটখাটো, উজ্জ্বল বর্ণের না হওয়ায় সইতে হয়েছিল এই বদনাম। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় যেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ইনডিজিনিয়াস বা নিজস্ব রেজিমেন্ট হিসেবে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠিত হয় সেদিন থেকেই বাংলাভাষীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন নন মার্শাল রেসের বদনাম ঘুঁচাতে। তারা তা সাফল্যের সাথেই করেছেন দীর্ঘকায়, উজ্জ্বল বর্ণের সহকর্মীদের সাথে পাল্লা দিয়ে। এই উপমহাদেশের সামরিক ইতিহাস যখন পড়ানো হয়, বিশ্লেষণ করা হয় তখন সঙ্গতকারণেই বাংলাভাষীদের নাম মোছা যায় না। বরং তাদের নাম ও সামরিক দক্ষতা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে ধ্রুবতারার মতো।

আমাদের বর্তমান সশস্ত্রবাহিনী ১৯৭১ সালের পর কোনো কনভেনশনাল যুদ্ধে জড়িত না হলেও তাদের রয়েছে দীর্ঘ দুই যুগ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা। কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি অপারেশন্স কোনো মামাবাড়ির আবদার নয়। এটি অত্যন্ত জটিল ও রক্তক্ষয়ী। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী ন্যূনতম সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে সফলতার সাথে শুধু যুদ্ধই করেনি, বরং শান্তিবাহিনীকে প্রায় ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে; যার পরিপ্রেক্ষিতেই সাধিত হয় শান্তি চুক্তি। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের বহু সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিক দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অকাতরে জীবন দান করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর অপারেশনাল খাতে একমাত্র বীর উত্তম শহীদ লেফটেন্যান্ট মুশফিকের আত্মদানের কাহিনী হয়তো অনেকেই জানে না। তবে আমাদের সামরিক ইতিহাসে তা এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।

যে বা যারাই আজ বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে চোখ রাঙানোর চেষ্টা করবে বা করছে তাদের খুব ভালো করে মনে রাখা উচিত আমাদের রয়েছে সম্মুখ সমরের অভিজ্ঞতা, সাফল্যের সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের অদম্যতা। আমাদের আছে জয়ের ইতিহাস, কোনো পরাজয়ের লজ্জা নয়। আমরা সবসময় জয়ী হয়েছি, আমাদের ভদ্রতা বা নমনীয়তাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবে। হয়তো সমর-সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্রে আমরা এখনো আধুনিকতাকে স্পর্শ করতে পারিনি, তবে ‘ইটস দ্য ম্যান বিহাইন্ড গান হুইচ ম্যাটারস’। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেভাবে নির্দেশ দেবে সশস্ত্রবাহিনীকে তা পালন করতে হবে- এটাই রীতি। কোনো সশস্ত্রবাহিনী নিজে আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ করতে পারে না। তাদের চলতে হয় সরকারের নির্দেশনা মেনে।

এর অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী যুদ্ধ করতে জানে না। শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যই সশস্ত্রবাহিনী এতদিন ধারাবাহিকভাবে কঠোর প্রশিক্ষণ অর্থাৎ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। একে কেউ ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করলে সেটার দায় তার, সশস্ত্রবাহিনীর নয়। সুপ্রশিক্ষিত যোদ্ধারা কখনো যুদ্ধের উসকানি দেয় না। তবে যুদ্ধে গেলে বুঝিয়ে দেয় তারা কারা।

মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার কমান্ডার জেনারেল অফ দ্য আর্মি ম্যাকআর্থার বলেছিলেন- ‘There is no substitute for victory’ অর্থাৎ জয়লাভের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী জয়ী হয়েই এতদূর এসেছে। তারা জানে তারা জয়ী হবেই যদি কোনো শকুন তাদের দিকে কুদৃষ্টি দেয়।

আবু রুশদ

লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক

 

আপনার মতামত দিন