মাই নেম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড

646
মাই নেম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড

মাই নেম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড। এ ডায়লগ দিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে রমনীমোহন স্পাই ‘জেমস বন্ড’ চরিত্রটি। ৫ অক্টোবর শুক্রবার জেমস বন্ড সিরিজের পঞ্চাশ বছর পূর্তি। ১৯৬২ সালের এ দিনেই ‘ডা. নো’ নামে চলচ্চিত্রটি দিয়েই জেমস বন্ড চরিত্র পথ চলা শুরু করে।

বয়স হয়ে গেছে পঞ্চাশ। কিন্তু এখনও তার জেল্লায় ভাঁটা পড়েনি এতটুকুও। এখনো একইরকম ক্ষুরধার, ক্ষিপ্র, অনুসন্ধানী আক্রমণাত্মক। আর এসবের জন্যই তো যে কোনও লাস্যময়ীর পদস্খলন ঘটিয়ে দিতে পারে যেকোনো সময়, অবলীলায়।

স্টুডিও ভেঙে পড়া, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান। এই ধরনের যে কোনও ঘটনা বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারত বন্ডের জীবনে। সে সব নিয়ে স্টিভান রিলের তথ্যচিত্র ‘এভ্রিথিং অর নাথিং’। এদিন তারই প্রকাশ আর থিম টিউন বাজিয়ে জেমস বন্ডের ছায়াছবির ৫০ বছর উদযাপিত হল লন্ডনে।

১৯৬২-তে ঠিক আজকের দিনেই বন্ডের প্রথম ছবি ‘ডক্টর নো’র প্রিমিয়ার হয়েছিল হ্যারল্ড ম্যাকমিলানের শহরে। চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিলেন কঠিন-কোমল সুপার স্পাই শ্যন কনরি। আত্মক্ষমতায় মদমত্ত এক খলনায়কের চক্রান্ত ভেস্তে দিতেই যাত্রা শুরু ০০৭-এর। ঠিক দু’বছর পর সিরিজের তৃতীয় সিনেমা ‘গোল্ডফিঙ্গার’ যখন রিলিজ করল, জেমস বন্ডের ক্যারিশমায় তখন আকণ্ঠ ডুবে গিয়েছে ব্রিটেন। সেদেশের সংস্কৃতিতে বন্ড তখন একটা আলাদা ডিসকোর্স।তার এই কারিশমার সঙ্গে একমাত্র ব্রিটিশ পপ ব্যান্ড বিট্লসের তুলনা টানা যায়।

যার হাত ধরে জেমস বন্ডের শুরু, সেই সিন কোনারী স্কটল্যান্ডের এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন। মা ছিলেন ক্লিনার। আর বাবা লরি ড্রাইভার। শৈশবে অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই কোনারি বেড়ে উঠেন। জন্মের পর থেকে বাবা-মায়ের আদর নয়, বরং অনেকটা অবহেলা দিয়েই শৈশব শুরু। এরপর মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি দুধ বিক্রেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। কবছর যেতেই ১৯৪৬ সালে তিনি রয়েল নেভিতে কাজ শুরু করেন। এর ঠিক তিন বছরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীরে আলসারের জীবাণু পাওয়া যায়। রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে কোনারিকে নেভি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।

অন্য খবর  “মাইকেল” সিনেমার ফার্স্ট লুক প্রকাশ্যে

জীবনযুদ্ধে দুমড়ে-মুচড়ে যান কোনারি। তারপরও ভাগ্য ফেরানোর আশায় বিভিন্ন সময় ইট ভাঙার কাজ, লাইফ গার্ড হিসেবেও পরিশ্রমের কাজ করে গেছেন। তবে এতসব কিছুর পরও কোনারি প্রতিদিন ব্যায়াম করতেন। নিজের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখাতে তিনি ছিলেন সদাসচেষ্ট। এর ফলে ১৯৫৩ সালে মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। এখানেই ভাগ্য বদলে যায় কোনারির। ভাগ্য দেবতা যেন তার দিকে ফিরে তাকালেন। অসহায় গরীব কোনারি মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।
কোনারি ছিলেন ভালো ফুটবলার। কথিত আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাকে দলে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন বয়স ২৩। এতো কম বয়সে ফুটবল খেলোয়াড় না হয়ে তিনি অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। শুরুতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিজ্ঞাপনে মডেল হলেন। তারপর থিয়েটারে গিয়ে নাটকে কাজ করলেন। থিয়েটার নাটকে চরিত্র পাওয়া খুব কঠিন। তাই তিনি ব্যাকস্টেইজে অন্য শিল্পীদের সহযোগিতা করতেন। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করারও সুযোগ পেতেন। ১৯৫৭ সালে বি গ্রেড চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেলেন সিন কোনারি। একজন গ্যাংস্টার হিসেবে ‘নো রোড ব্যাক’ ছবিতে কাজ করেন। এরপর একই বছর ‘হেল ড্রাইভার’ নামে আরেকটি ছবিতে কাজ করেন। এ ছবিটির কাজ দেখেই বন্ড চরিত্রটির জন্য তাকে ডাকা হয়। জেমস বন্ড সিরিজের লেখক ইয়ান ফ্লেমিং স্ক্রিনিংয়ে কোনারিকে প্রথম দেখায় বলে ফেলেন, বন্ড চরিত্রটি আমি এ লোকটির জন্যই সৃষ্টি করেছি। আমি আর কাউকে দেখতে চাই না। এ ছেলেটিই জেমন বন্ড। জেমস বন্ড সিরিজের চারটি ছবিতে অভিনয় করেছেন সিন কোনারি। তিন বছরের চুক্তিতে তিনি রাজি হননি। তাই পরে তিনি বন্ড চরিত্রটি ছেড়ে দেন। কিন্তু ততদিনে ‘ডা. নো’ করে বিশ্বব্যাপী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন জেমস বন্ড।

অন্য খবর  উইকিপিডিয়ায় শীর্ষ ত্রিশ বাঙালির তালিকায় রুনা লায়লা

আর স্বল্পবসনাদের সবলীলায় শয্যাসঙ্গিনী করায়, বন্ড-সিরিজের কপালে ‘সেক্সিস্ট’ তকমাও লাগে। তাতে অবশ্য বন্ডের তুঙ্গশীর্ষ জনপ্রিয়তার বিন্দুমাত্র স্খলন হয়না। এবারের অলিম্পিকে রানি এলিজাবেথকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে আজকের বন্ড ড্যানিয়ল ক্রেগের প্রবেশ সেকথাই প্রমাণ করে।

অ্যালবার্ট ব্রকলি আর হ্যারি সাল্টজম্যানের ইওএন প্রোডাকশনস গত পাঁচ দশক ধরে জেমস বন্ডের মোট ২২টি ছবি বানিয়েছে। দুনিয়াজোড়া রিলিজ এনে দিয়েছে ৫০০ কোটি ডলার। এমাসের শেষে মুক্তি পাচ্ছে তেইশতম ছবি: স্কাইফল।

আপনার মতামত দিন