প্রতিদিনের হাদিসঃ কলহ ও বিপর্যয়

188

 

হাদিস নং ২১৫৮: আবূ উমামা ইবনু সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) বিদ্রোহীদের দ্বারা বাড়ীতে অবরুদ্ধ থাকাকালে (বিদ্রোহীদের) বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে তোমাদেরকে বলছিঃ  তোমরা কি জান যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  “তিনটি অপরাধের কোন একটি ব্যতীত মুসলমান ব্যক্তিকে খুন করা হালাল নয়? বিয়ে করার পর যিনা করা, ইসলাম কুবুল করার পর ধর্মত্যাগী হওয়া এবং কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে খুন করা। এগুলোর যে কোন একটি অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যায়”। আল্লাহর শপথ। আমি জাহিলী আমলেও যিনা করিনি এবং ইসলাম কুবুলের পরেও নয়। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যেদিন আনুগত্যের শপথ (বাই’আত) গ্রহণ করেছি সেদিন হতে ধর্মত্যাগীও হইনি। আর এরূপ কোন প্রাণও আমি হত্যা করিনি যার হত্যা আল্লাহ তা’আলা অবৈধ করেছেন। আমাকে কি কারণে তোমরা হত্যা করবে।(সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৫৩৩), বুখারী, মুসলিম)

আবূ ঈসা বলেন, ইবনু মাসউদ, আইশা ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। এ হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে হাম্মাদ ইবনু সালামা মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন। আর এ হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তানসহ একাধিক বর্ণনাকারী মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন, মারফুভাবে নয়। উসমান (রাঃ)-এর বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একাধিকসূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে।

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

হাদিস নং ২১৫৯: সুলাইমান ইবনু আমর (রাহঃ) হতে তার বাবা আমর (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জে জনগণের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ  এটা কোন দিন? জনগণ বলল, বড় হাজের দিন। তিনি বললেনঃ  আজকের এ দিন ও তোমাদের এ শহর যেমন হারাম (মহাপবিত্র) অনুরূপভাবে তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্ত্রম পরস্পরের জন্য হারাম। সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের জন্য নিজেই দায়ী। সাবধান! সন্তানের প্রতি জনকের অপরাধ এবং জনকের প্রতি সন্তানের অপরাধ বর্তায় না। জেনে রাখো, শাইতানের কোন ইবাদাত তোমাদের এ নগরে কখনো হবে না, সে এ ক্ষেত্রে নিরাশ হয়ে গেছে। তবে তোমরা যে সকল কাজকে তুচ্ছ মনে কর অতি শীঘ্রই সে সকল কাজে তার অনুসরণ করা হবে এবং সে তাতে সন্তুষ্ট হবে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৫৫)

অন্য খবর  কোরআন ছুঁয়ে মিথ্যা বললে কি ইমান চলে যায়?

ইবনু আমর আস-সাদী (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। যাইদাও একইরকম হাদীস শাবীব ইবনু গারকাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র শাবীব ইবনু গারকাদার সূত্রেই জেনেছি।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

হাদিস নং ২১৬০: সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে তার বাবার সূত্রে তার দাদা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  তোমাদের কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের লাঠিতে ঠাট্টাস্বরূপ বা প্রকৃতই যেন হাত না দেয়। যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের লাঠি নিয়ে যায় তাহলে সে যেন তাকে তা ফেরত দেয়।

 

সহীহ, লিগাইরিহি, সহীহাহ (৯২১)।

 

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ বিষয়ে আমাদের ইবনু আবী যিবের বর্ণনা ব্যতীত আর কিছু জানা নেই। সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্য্য পেয়েছেন। তিনি নাবালেগ থাকাকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে অনেক হাদীস শুনেছেন। সাইব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুকালে সাত বছরের বালক ছিলেন। তার বাবা ইয়াযীদ ইবনুস সাইব (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম সাহাবী। তিনি কয়েকটি হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন নামিরের বোনের ছেলে।

অন্য খবর  হাত থেকে কুরআন শরিফ পড়ে গেলে কী করবেন ?

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

হাদিস নং ২১৬৫: ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘জাবিয়া’ (সিরিয়ার অন্তর্গত) নামক জায়গায় উমর (রাঃ) আমাদের সামনে খুতবাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে দাড়িয়ে বলেনঃ  হে উপস্থিত জনতা! যেভাবে আমাদের মাঝে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়াতেন, সেভাবে তোমাদের মাঝে আমিও দাড়িয়েছি। তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ  আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি (তাদের যমানা শ্রেষ্ঠ যমানা), তারপর তাদের পরবর্তীদের যমানা, তারপর তাদের পরবর্তীদের যমানা, তারপর মিথ্যাচারের বিস্তার ঘটবে। এমনকি কাউকে শপথ করতে না বলা হলেও সে শপথ করবে, আর সাক্ষ্য প্রদান করতে না বলা হলেও সাক্ষ্য প্রদান করবে।

 

সাবধান! কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন হিসাবে শাইতান অবস্থান করে (এবং পাপাচারে প্ররোচনা দেয়)। তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস কর। বিচ্ছিন্নতা হতে সাবধান থেকো। কেননা, শাইতান বিচ্ছিন্নজনের সাথে থাকে এবং সে দুজন হতে অনেক দূরে অবস্থান করে। যে লোক জান্নাতের মধ্যে সবচাইতে উত্তম জায়গার ইচ্ছা পোষণ করে সে যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকে (মুসলিম সমাজে)। যার সৎ আমল তাকে আনন্দিত করে এবং বদ্‌ আমল কষ্ট দেয় সেই হলো প্রকৃত ঈমানদার।

 

সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৩৬৩)।

 

আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। এ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনু সূকার সূত্রে ইবনুল মুবারাকও বর্ণনা করেছেন। একাধিক সূত্রে উমার (রাঃ)-এর বরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে।

 

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]

অধ্যায়ঃ ৩১/ কলহ ও বিপর্যয়

পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী

আপনার মতামত দিন