নিজেকে জানো

1105

১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আ স ম আব্দুর রব আর সরকার তথা জাতীয় পার্টির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মরহুম কাজী জাফর। সংসদে আ স ম আব্দুর রবের অভিযোগ ছিল, কি আজব দেশে আমরা বাস করছি। স্বাধীন জাতি হিসাবে যা আমাদের জন্য লজ্জ্বার। কারন হিসাবে তিনি উল্ল্যেখ করেন যে তিনি নিম্ন মাধ্যমিকের এক বইয়ে এক ছাত্রকে পড়তে দেখেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম রাজীব গান্ধী। কারণ বইটি কলকাতা প্রকাশনীর। অথচ সে ছাত্র তা মুখস্থ করছে কিন্তু সে একবারও ভেবে পড়েনি যে, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক।

জবাবে কাজী জাফর বলেছিলেন, জনাব আ স ম রব আপনার উৎকণ্ঠাকে আমরা স্বাগত জানাই; হয়তো আসলেই আমরা সারাজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবো না কিন্তু আমরা আশা করি আপনি আজীবন বিরোধী দলের নেতা থাকুন।

জাতি হিসাবে আমাদের দূর্ভাগ্য, আমরা বুঝি না অনেক সময় আমরা কি বলছি আর কি বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কারণ কি। আজ এ লেখার কারণ , বাংলাদেশ আজ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়েছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের গুণগত মান কমেছে। আজ পুরো তরুণ সমাজ ফেসবুক আর সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত। এক সময়ে আমরা তরুণেরা বই পরতাম – হুমায়ুন আহমেদ, তিন গোয়েন্দা, কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা অথবা শীর্শেন্দু, সমরেশ বা সুনীলের বইতো ছিলই।

কিশোর বেলায় ফেলুদা বা বিল্লু, নন্টে-ফন্টে, ফ্যান্টম বা চাচা চৌধুরি বিকশিত করেছিল আমাদের সৃজনশীলতাকে। সারা বিশ্বে প্রিণ্ট পত্রিকার সার্কুলেশন নিন্মমুখী হলেও এশিয়া বা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রিণ্ট পত্রিকার সার্কুলেশনের হার উচ্চগামী। আপনাদের মনে আছে খেলার পাতা বা বিনোদনের পাতা ছিল কতোটা আমাদের জন্য আকাংখিত বিষয়। আমরা নিয়মিত টেলিভিশন বিতর্ক দেখেছি, এছাড়া খবর আর টক শো ও মানসম্মত নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান এদেশকে একটা সোনালি প্রজন্ম উপহার দিয়েছিল। বাংলাদেশকে দিয়েছে একটা প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশের মাধ্যম।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলবাসীর চাওয়া পাওয়ার ফিরিস্তি

কিন্তু আজ খুব হতবাক হলাম, একটি কলেজ পরিদর্শনে আমি ৪০০ ছাত্র-ছাত্রীকে বললাম, কতজন গল্পের বই পড়ে – হাত উঠলো গোটা ২০। যখন বললাম নিউজ দেখে কতজন হাত উঠলো ১০ জনের মতো। অথচ ফেসবুক ব্যবহার করে কতজন শতকরা ৯০ জন উঠালো। কিন্তু ফেসবুকে কতজন নিউজ দেখে সে হার ১% ও না। তারা জানে না, গত ১ মাসে দেশে ৮৬টি খুন হয়েছে, ২৮টি শিশুকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে, তারা জানে না কেরাণিগঞ্জে চাচাতো  নানা ৫লক্ষ টাকার জন্য নাতীকে হত্যা করেছে, তারা জানে না পরকীয়ার কারণে মিরপুরে মা সন্তানকে ৫তলা থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেছে। এখন তারা জানে না নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শাসমশুন্নাহার প্রধান মন্ত্রীর প্যারেড পরিচালনা করেছে। তারা জানে না, সাবিরুল ইসলাম নামক একজন বাংলাদেশি যুবক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্যোক্তা অথবা জাহিদ হাসান নামক পদার্থ বিজ্ঞানী আগামীতে পদার্থ বিজ্ঞানে আমাদের নোবেল বিজয় করে আনবে, তারা জানে না জাভেদ করিম ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

তাহলে কিভাবে আমরা এগোবো, যে প্রজন্ম ফেসবুক, ভাইবার বা ইমু ব্যবহার করে অথচ নিজেকে অজানা রেখে। তারা জানে না, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নাম কি।

অন্য খবর  তরুনদের ভাবনা: গুটিকয়েক মানুষ সচেতন হলেও বেশিরভাগ মানুষই অসচেতন

মনে পড়ে যায়, সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত উক্তি –  Know thyself (নিজেকে জানো) .  আসলে কতটুকু আমরা নিজেদের চিনেছি, আমরা অপরের আবিস্কারে তথ্য প্রযুক্তি কু-ব্যবহারের নেশায় বুদ হয়ে আছি, কিশোর কুমারের ভাষায়- এ নেশা কেমন নেশা, দাদা? এ নেশা মরণ নেশা , দাদা। আজ পুরো যুব সমাজ হারিয়ে যাচ্ছে সৃজনশীলতা, মননশীলতা, রাজনৈতিক চেতনাবোধ বা দেশ গঠনের মতো অনুভূতিবোধ থেকে।

গুরু সক্রেটিসের সাথে তর্কে প্লুটো বলেছিল তার ‘ রিপাব্লিক ‘ গ্রন্থে, দেশপ্রেম তাই- সেটা হলো যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করা। আমরা দেশপ্রেমিক হই, নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করি, অন্তত তরুণ প্রজন্ম প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ুক, নিউজ দেখুক। গণ মাধ্যম বিশেষত টেলিভিশনগুলো আরও বেশি যুবাদের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করুক, দেশটাকে একটু এগিয়ে দিক। আসুন সবাই তরুণদেরকে একটু সচেতন করি তার পূর্বে নিজে সচেতন হই।

আপনার মতামত দিন