সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর নবাবগঞ্জের পরিস্থিতি থমথমে। হামলার খবর জানলেও কে হামলা করেছে, সে সম্পর্কে চুপ করে থাকছেন এলাকাবাসী। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি পুলিশও।
গত সোমবার রাতে স্থানীয় এক গেস্টহাউসে যমুনা টেলিভিশন ও যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিক আহত ও ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান এফ রহমান। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলামের স্বামী নুরুল ইসলাম বাবুল দাবি করেছেন, সাংবাদিকদের মাঠ থেকে খেদিয়ে দিয়ে ভোট ডাকাতি করাই ছিল হামলাকারীদের উদ্দেশ্য। নুরুল ইসলাম তাঁর স্ত্রীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক। আর যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন তাঁরই মালিকানাধীন যমুনা গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। গতকাল দুপুরে যুগান্তর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
নুরুল ইসলাম বাবুল প্রথম আলোকে বলেন, সালমান এফ রহমানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও দোহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে হামলা চালিয়েছেন। এ সময় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে সাংবাদিকদের ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা ছিলেন শুধু ঘটনা সম্পর্কে লেখার জন্যই।
এদিকে মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ মিথ্যা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা টাকাপয়সা দিয়ে ভোট কিনছেন। দু–এক দিন টাকা না পৌঁছানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ হামলা চালাতে পারে। মিডিয়ার মনোযোগ পাওয়ার জন্য তাঁরা নিজেরাও হামলার নাটক সাজিয়ে থাকতে পারেন।
গতকাল বিকেলে ভাঙা কাচের স্তূপ মাড়িয়ে তিনতলা গেস্টহাউসের দোতলায় উঠে একজন কর্মচারীকে পাওয়া যায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ২৩ ডিসেম্বর রাত দুইটার দিকে যুগান্তর পত্রিকা ও যমুনা টেলিভিশনের ৪১ জন সদস্য গেস্টহাউসে ওঠেন। পরদিন (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ১৫–২০ জন লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, লোহার পাইপ ও রামদা নিয়ে হইহই করতে করতে গেস্টহাউসে ঢোকে। চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘কার নির্বাচন করতে আইছিস তোরা, দেখে নেব।’ ভয়ে সাংবাদিকেরা দরজা বন্ধ করে কক্ষে ঢুকে পড়েন। দুষ্কৃতকারীরা এলোপাতাড়ি দরজা-জানালায় রামদা ও লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। ৩২টি কক্ষেই তারা ভাঙচুর চালায়। তবে গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষ মামলা করেনি, করবে কি না, তা–ও বলতে পারেননি ওই কর্মচারী। গেস্টহাউসের মালিক মো. শোয়ায়েব মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ঘুমাচ্ছেন বলে জানান।
গতকালও সাদাপোশাকে পুলিশ গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষকে শাসায় বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা গেস্টহাউস ছাড়ার জন্য সাংবাদিকদের আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়, নইলে গ্রেপ্তার করা হবে বলে হুমকি দেয় বলে দাবি করে ক্ষতিগ্রস্ত একটি সূত্র।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ওই আলাপ বাদ দেন, অন্যকিছু বলেন।’ বিপন্ন সাংবাদিকেরা তাঁর সাড়া পাননি এবং তাঁরা গেস্টহাউসে গিয়ে শাসিয়েছেন— এমন অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
গতকাল সালমা ইসলামের বাড়িতে ঢোকার মুখে বক্সনগরে সালমান এফ রহমানের নতুন নির্বাচনী অফিস দেখা যায়। রাস্তার ওপর দাঁড়ানো ট্রাক আর নির্বাচনী অফিস পাল্লা দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের পক্ষে গান বাজাচ্ছিল। সালমান এফ রহমানের পোস্টার বাতাসে দুলতে দেখা গেলেও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে সালমা ইসলামের পোস্টার। সাইরেন বাজিয়ে দুবার সেনাসদস্যদের টহল দিতে দেখা গেল।
বক্সনগরে সালমা ইসলামের বাড়ির সামনে বসে ছিলেন ৯১ বছর বয়সী রমজান আলী ভূঁইয়া। তাঁর একটাই পরিচয়, এখন তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু চান ভোটটা সুষ্ঠু হোক। মানুষ খুশির সঙ্গে ভোট দিক। এই পোস্টার ছেঁড়া, হামলা-মামলা তাঁর একেবারে পছন্দ নয়।