একটি অবহেলিত জনপদের নাম নবাবগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চল। চারটি ইউনিয়ন নয়নশ্রী, বারুয়াখালী, জয়কৃষ্ণপুর ও শিকারিপাড়া যেটি নিয়ে গঠিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই উন্নয়নের সুষম বন্টনের শিকার এ কয়েকটি ইউনিয়ন যা কোনক্রমেই অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উন্নয়নের ছোঁয়া আসে মুলত এমপি হারুনুর রশিদ ও বোরহান উদ্দিনের প্রচেষ্টায় যাহা মূলত কৃষিকাজে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে, এবং তার পরবর্তী সময়ে বিএনপির ব্যানারে দোহার আসন থেকে এমপি ও নৌপরিবহন মন্ত্রী হয়ে আসা (অবঃ) ক্যাপ্টেন নুরুল হকের মাধ্যমে। নদীর নাব্যতা, নদী তীরবর্তী মানুষের গৃহস্থালি কর্মকান্ড, পরিবেশ ভারসাম্যহীনতা রক্ষা, কৃষিকাজ ও ব্যবসায়ীক সুবিধার্থে ইছামতি নদী খনন শুরু হয়। বান্দুরা হতে বারুয়াখালী হয়ে শিকারিপাড়ার সড়ক নির্মান ও প্রশস্থকরণ, বান্দুরা হতে আলালপুর হয়ে শিকারীপাড়া রাস্তা নির্মান শুরু হয় তৎকালীন সময়ে। এ রাস্তা ও নদীখনন মুলত ছিল ক্যাপ্টেন নুরুল হকের সংগে চুক্তির ফসল যাহার প্রস্তাবনায় ছিলেন তৎকালীন বারুয়াখালী ইউনিয়নের সুযোগ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম শাহাদত হোসেন খান এবং পরবর্তী চেয়ারম্যান আলালপুর নিবাসী মরহুম সিরাজুল ইসলাম। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এমপি ও নৌপরিবহন মন্ত্রী (অবঃ) ক্যাপ্টেন নুরুল হকের মাধ্যমে এ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও উন্নয়নের স্বাদ পায় যা কেরানীগঞ্জের সাথে তুলনায় বিশাল তফাৎ ছিল। পরবর্তী সময়ে আবার বিএনপির ব্যানারে আসা তৎকালীণ ঢাকা-১ আসনে দোহারের ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সময়েও ঐ চুক্তির ফাঁদেই আমাদের থাকতে হলো। নবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি থাকলেও মূলত এ অঞ্চলবাসীর পাওয়ার ভান্ডার ছিল বলতে গেলে হতাশাজনক। নির্ভরতা ঐ দোহারের এমপি সাহেবের উপর। উন্নয়ন বঞ্চিত থাকার কারণ হচ্ছে ভোটের সময় আমাদের পশ্চিমাঞ্চলের এ ইউনিয়নগুলোকে দোহারের সঙ্গে জুড়ে দেয়া আবার ভোট শেষে বেড় করে দেয়া। এতে আমাদের হতে হয় অবিভাবকহীন “নাম কা ওয়াস্তের” পাবলিকের মত। আজ পশ্চিমাঞ্চলের জনগন বলতে গেলে অবিভাবকহীন। ভোটের পর আর আমরা নেতাদের সুনজরেও আসি না। নবাবগঞ্জের এমপি জনাব আব্দুল মান্নান সাহেবের তৎপরতায় দুই বান্দুরার সংযোগ সেতু তৈরি হলেও তাতে ছিল সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব যা এখন বিকল্প আরো একটি সেতুর প্রয়োজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন চাহিদা ও প্রয়োজনের সাথে যুদ্ধ করে হলেও নুরনগরে দৃষ্টিনন্দন প্রশস্থ সেতু তৈরী বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার স্বাক্ষর বহন করে তাতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। মরে যাওয়া ও মাছের খামার হিসেবে খ্যাত বর্তমান ইছামতি নদীর উপর নির্মীত শিকারিপাড়া সেতু সেটাও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার উদাহরণ হিসেবে মুল্যায়ন করা যায়। আরো গুটিকয়েক কাজ যা বর্তমানে শুরু হয়েছে তাও এ অঞ্চলের জনগনের দ্বারা মঞ্চায়িত বিভিন্ন নাটকের সাড়ায় চলছে তা না হলে যে আগামী নির্বাচনের বাজারে “সেরা” উপহার পেতে ঘাম ঝড়াতে হবে। নাটকটি মঞ্চস্থ না হলে হয়তো কপালে সেটিও জুটতো কিনা সন্দেহ আছে। পশ্চিমাঞ্চলই নয় মূলত ঢাকার “মরণ ফাঁদ” নামে আতঙ্ক “কাশিয়াখালী বেড়ীবাঁধ” অস্থায়ী সংস্কারের কাজও চলমান রয়েছে, সেটাও সেই “মানববন্ধন” থেকে ‘গোলযোগের সম্ভাবনা আছে” নামক ছোট বাক্যের প্রতি সম্মান রেখে “ক্যাম্পেইন” নামের ছোট নাটিকার ফল। এ ছোট নাটিকা মঞ্চস্থ না হলে এবং সাধারণ জনতা সোচ্চার না হলে কারো কোনো সুনজরে ধরা পরতো কিনা সন্দেহ। এ বেড়ীবাঁধের সাথে যার অবদান সরকারী দলের সেই আঞ্চলিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা আলীমোর রহমান খান পিয়ারা যিনি বর্তমানে শিকারিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তৎকালীন সংসদসদস্য প্রার্থী ও শিল্পপতি জনাব নূর আলী সাহেবের তাৎক্ষনিক আর্থিক সহায়তায় তড়িৎ গতিতে ভাঙনের কবল থেকে জনগনের জানমাল রক্ষায় পদ্মার পরবর্তী আগ্রাসন রোধ করেন। তৎকালীণ প্রয়াত পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের হস্তক্ষেপে দ্রুত অনুমোদনের মাধ্যমে অপরিকল্পিত হলেও বাঁধ নির্মীত হয়। এ সব কাজ কোনো সংসদ সদস্যই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরে স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিত হয়ে করেননি, অর্জন যা কিছু তা মূলত এ অঞ্চলের মানুষের সোচ্চারের কারণে বলা যায়।
এ অঞ্চলের প্রাণ হচ্ছে স্রোতস্বিনী ইছামতি, যে নদীর সাথে এ অঞ্চলের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। এটাকেও পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে, কোনো স্থানে দখলের “আগ্রাসন” হানা দিয়েছে, কোথাও ময়লার ভাগারে পরিণত হচ্ছে যাহা অপ্রত্যাশিত। বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রতিশ্রুত “হাদিস” গুলোর কয়টা আমরা পেলাম আর কয়টা পেলামনা তার জন্যও “হালখাতা” খোলা রাখি।
![](https://news39.net/wp-content/uploads/2024/06/rashed-chokder-adha24-min.jpg)
আগামী ভোটের মৌসুম ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখনই মৌমাছিদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আমাদের গানের সুর ভেসে আসছে। মৌসুমি পাখি যিনিই যে দলেরই হোক না কেন আমাদের এ অঞ্চলের গণমানুষের “ভিক্ষা” বেশী নয় মাত্র তিনটি এই তিনটি “প্রত্যাশিত ভিক্ষা” পুরণ করতে পারলেই আমরা আমাদের এলাকার উন্নয়ন ঘটাতে পারবো বলে আশা রাখি।
(১) আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বেড়ীবাঁধের প্রয়োজনীয় স্থানে পরিকল্পনানুযায়ী স্লুইচ গেট স্থাপন সহ বাঁধের স্থায়ীসংস্কার ও মেরামতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
(২) ইছমতির নাব্যতা রক্ষায় স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা ও বয়ে চলা নদীর বেশ কয়েকটি বাঁকা গতিপথ রয়েছে সেখানে সম্ভাব্য ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা।
(৩) বান্দুরা হতে বারুয়াখালী হয়ে ধুলশুরা ও কাশিয়াখালী বেড়ীবাঁধ পর্যন্ত রাস্তাটি স্থায়ী ভাবে দুই লেনের টেকসই উন্নয়ন করা।
![](https://news39.net/wp-content/uploads/2023/08/protiva-coaching-ad-primary-teacher-2023-min.jpg)