দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন হাট বাজারে বাড়ছে হাতুড়ে ডাক্তারদের সংখ্যা। প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসক না হয়েও বড় বড় ডিগ্রিধারী চিকিৎসক সেজে তারা দিব্যি দিয়ে যাছেন ‘চিকিৎসা সেবা’। অথচ তাদের অনেকেরই নেই বলার মত তেমন কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা। আবার কেউ কেউ ওষুধ বিষয়ক ২-১ টা কোর্স করেই বাজারে দিয়ে বসছেন ফার্মেসীর দোকান আর সাইনবোর্ডে অথবা ভিজিটিং কার্ডে নিজের নামের আগে লিখছেন ডাক্তার সাথে লিখছেন বড় বড় সব ভুয়া ডিগ্রির নামও ।
দোহারের ৯টি এবং নবাবগঞ্জের ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে হাতুড়ে চিকিৎসক ও চরাঞ্চলে কবিরাজদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাজার হাজার সহজ সরল নিরহ গ্রামবাসী চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গত ১ মাসের অনুসন্ধানে দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে ।
দোহারের লটাখোলা নতুন বাজার, বাংলা বাজার, বিলাসপুর বাজার, পালামগঞ্জ বাজার, নারিশা বাজার নবাবগঞ্জের খানেপুর বাজার, বারুয়াখালী বাজার, শোল্লা বাজার, গালিমপুর বাজার, দূর্গাপুর বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে হাতুরে চিকিৎসকরা তাদের দোকানের সামনে বা চেম্বারে সাধারন মানুকে আকৃষ্ট করতে বিশাল সাইনবোডে নিজেদের নামের পাশে নানা উপাধি ও ডিগ্রী জুড়ে দিয়েছেন । আসলে এদের নেই স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া । অধিকাংশই পড়ালেখা করেছেন পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত।
শুধু দোহারের লটাখোলা নতুন বাজারেই রয়েছে এমন হাতুড়ে ডাক্তারের ৬-৭ টি দোকান তাদেরই একজন ‘আজাদ ডাক্তার’। নামে ডাক্তার হলেও তার নেই কোন চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষা। অথচ তিনি ফার্মেসী দোকানের সাইনবোডে লিখেছেন ‘ডাঃ মোঃ আজাদ হোসেন’। জানা গেছে, বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর এজেন্টরা ‘চিকিৎসা নির্দ্দেশিকা ও সহায়িকা’ নামের কিছু চটি বই পুস্তক দেন সেটি পড়েই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি। তার কাছে ডাক্তারি সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে বলেন, ”শুধু আমি একা নয়, আরো অনেকেই আমার মত ফার্মেসী দিয়ে ডাক্তার সেজে রোগী দেখছেন। এটি আসলে আমাদের ব্যবসা”। অভিযোগ পাওয়া গেছে আজাদের মতো এ রকম হাতুড়ে চিকিৎসকরা রোগী এলে সঠিক রোগ নির্ণয় না করে প্রথমেই উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। এরপর এন্টিবায়োটিকে কাজ না করলে বই ঘেটে অন্য ওষুধ প্রদান করেন।
দোহার নবাবগঞ্জে থাকা এমন শত হাতুরে চিকিৎসক ভুয়া ডিগ্রী লিখে অপচিকিৎসার মাধ্যমে অসহায় গরীব মানুষদেরকে ঠকাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এদের ভুল চিকিৎসায় অনেক সময় রোগী মারা যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
অপরদিকে, দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন চরাঞ্চলে একশ্রেনীর ভন্ড কবিরাজ ও ফকিররা মানুষের ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে পুঁজি করে নিজেদের তৈরী করা বটিকা ও শালসা দিয়ে গ্যাষ্টিক, পেটের পিড়া, মেহ প্রমেহ, বাত, ডায়াবেটিক, সর্দিকাশী, যৌনরোগসহ জটিল কঠিন যত রোগ আছে সমস্ত রোগের ‘১০০% গ্যারান্টি’ সহকারে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে । গ্রাম ও চরাঞ্চলে সরল মানুষগুলো সহজে তা বিশ্বাস করে তাদের কাছে চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।
এছাড়াও দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন হাটে বাজারে সকাল এবং সন্ধ্যা বেলায় এক শেণীর ভ্রাম্যমান ফকির এবং কবিরাজরা গান বাজিয়ে আসর বসিয়ে বিভিন্ন রোগের বিশেষ করে যৌন রোগের ওষুধ বিক্রি করে থাকে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ভ্রাম্যমান চিকিৎসকরা প্রকাশ্যেই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কখনো প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি । তারা বিভিন্ন বন্য প্রাণীর চামড়া কেটে, লজ্জাবতী গাছের ছাল পাতা কেটে তাবিজ বানিয়ে বিক্রি করে থাকে। অনেক সময় এদের কাছে দুর্লভ কিছু প্রাণীর চামড়াও দেখা যায়। কেউ কেউ আবার লতা পাতা সাজিয়ে টেপ রেকর্ডারে কথা বাজিয়ে এবং নিজে শুধু হাত নেড়ে ওষুধের গুনকীর্তন করে বিক্রি করে। তবে এ অপচিকিৎসকরা বেশীরভাগই বিভিন্ন যৌন, বাত, অর্শ, গেজ ও ভগন্দর রোগের ওষুধ বিক্রি করে থাকে। এতে তারা জনগনের সরলতা ও দুর্বলতাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ”সাধারণ জনগণের উচিত এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের সরনাপন্ন না হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিত্তিক সেবা কেন্দ্রে যাওয়া অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা । সরকারের পক্ষ থেকে সকলের জন্য বিনা টাকায় স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে”। এছাড়া কোন হাতুড়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে তিনি সে ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ বড়কর্তা।