দোহার-নবাবগঞ্জের ইটভাটাগুলোতে বাড়ছে শিশুশ্রম

684

ঢাকার নবাবগঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকার ইটভাটায় কাজ করছে আট বছর বয়সী পলাশ। প্রতিদিন এক হাজার ইট বহনের কাজ করে সে মজুরি পায় মাত্র ১০০ টাকা। শুধু পলাশ নয়, পেটের দায়ে প্রতিদিন তার মতো অন্তত কয়েকশ শিশু দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করছে। অথচ আইন অনুযায়ী ১২ বছরের কম বয়সের শিশুদের এ রকম কাজে নেওয়া নিষিদ্ধ।

স্থানীয় সূত্রমতে, দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টি ইটের ভাটা। সেসব ভাটায় কাজ করছে ১২ বছর বয়সের নিচের কয়েকশ মেয়ে ও ছেলে শিশু। কয়েকজন ভাটা মালিকের দাবি, বাবা-মায়ের সঙ্গেই এসব শিশু ভাটায় কাজ করতে আসে। তবে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মজুরি নিয়েই সেখানে কাজ করছে।

দোহার উপজেলার ইসলামপুর ইটভাটায় কাজ করে ৬ বছর শিশু মিরাজ। পেটের দায়ে বরিশাল থেকে মায়ের সঙ্গে এসেছে সে ইটের ভাটায় কাজ করতে। মিরাজ জানাল, এই ভাটার মালিক তাদের বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ৩০ হাজার টাকা দাদন দিয়েছেন। দাদনের টাকা শোধ করতেই সে মায়ের সঙ্গে কাজ করতে চলে এসেছে। তার একটাই কথা ‘কাম না করলে খামু কি?’

অন্য খবর  দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরাণিগঞ্জ বিদ্যুৎ বিহীনঃ সচেষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

মিরাজ আরও জানাল, মাথায় করে শুকনো ইট খোলায় তুলে সে। পোড়া শেষ হলে ইট সাজিয়ে রাখে। কাজ বড় কষ্টের। অনেক সময়ে ইট মাথা থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পায়। কিন্তু শ্রমিক সরদার এগুলো দেখে না।

একই রকম কষ্টের কথা জানায় নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইটভাটার এগার বছরের শ্রমিক শান্ত। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। সেও মায়ের সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করতে এসেছে।

এমন দৃশ্য দোহার ও নবাবগঞ্জের বেশিরভাগ ইটভাটার। ইট তৈরি ও টানার কাজ করছে শিশুরা। কোনো কোনো শিশু ২০ কেজি ওজনের সমান ছয়টা কাঁচা ইট মাথায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দোহার ও নবাবগঞ্জের ইটভাটাগুলোয় কর্মরত শিশুদের বেশিরভাগই এসেছে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিলেট, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর থেকে। তাদের অভিভাবকদের অনেককে ভাটা-মালিকরা দাদন দিয়েছেন। এই টাকা পরিশোধ করতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের শিশু সন্তানরাও কাজ করছে। কাজ শেষে এসব শিশু ভাটাতেই ঘুমায়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় তাদের কাজ। মাঝে কিছু সময় বিরতির পর টানা কাজ করে বিকাল চারটা পর্যন্ত।

অন্য খবর  দোহারে পাশের হার ৭৩.৫২ শতাংশ

নবাবগঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকার ন্যাশনাল ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক নাসির উদ্দিন পান্নু জানান, মা-বাবার সঙ্গে সন্তানরাও ইটভাটায় আসে। তার ভাটায় শিশুদের দিয়ে কোনো কাজ করানো হয় না। তবে ওরা মাঝে-মাঝে ইট নিয়ে খেলে থাকে।

নবাবগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহনাজ মিথুন মুন্নী বলেন, ইটভাটায় শিশুদের কাজ করানোর বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আল-আমীন বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

আপনার মতামত দিন