দোহারে সাবেক স্ত্রীর জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা

1393
দোহারে সাবেক স্ত্রীর জন্য আত্বহত্যার চেষ্টা

নিউজ৩৯ প্রতিবেদক: ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার নারিশা পশ্চিমচর এলাকায় সাবেক স্ত্রীকে পুনরায় ফিরে পেতে স্ত্রীর বাসার সামনে শামীম হোসেন (২৬) নামে এক যুবকের “আত্মহত্যার চেষ্টার” খবর পাওয়া গেছে। শামীম হোসেন আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে।

জানা যায়, নারিশা খালপাড় এলাকার ইউনূস বেপারীর ছেলে শামীম হোসেন  প্রায় ৫ বছর আগে নারিশা পশ্চিমচর এলাকার মো: ইসলাম কারালের মেয়ে ফারজানা ইসলাম (২২) কে বিয়ে করেন। স্কুল জীবনে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এবং পরবর্তীতে তারা নিজেরা বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিলো বলে জানা যায়। শামীমের অসৎসঙ্গে মিশতো এবং নেশাগ্রস্থ ছিলো বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান।

বিয়ের পর ৩ বছর পূর্বে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে শামীম বিদেশে পাড়ি জমান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানান, “শামীম স্ত্রীকে তার বাসায় নিয়ে যেতে জোর জবরদস্তি করে। কিন্ত ফারজানা তাকে বলে সে তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। এসময় ফারজানা ও তার পরিবার এবং শামীমের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তখন শামীম নিজেকে  নিজেই মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে শামীম বাইক থেকে তেল নিয়ে এসে শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এসময় শামীমের শ্বশুর তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলে শামীম ও ফারজানার বাবা দগ্ধ হন। ঘটনার এক পর্যায়ে ফারজানা ইসলামকে না পেয়ে নিজেই তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মো: ইসলাম কারাল ও এলাকার লোকজন শামীমের শরীরের আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন।”

মো: ইসলাম কারাল নিজেও আগুনে আহত হন।  রাত ৯টার ঘটিকায় শামীমকে উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকার কোনো হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়। শামীমের শ্বশুরবাড়ির এলাকার মো: রুবেল, জিহাদসহ ৩ জন আক্রান্ত শামীমকে  ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে  ভর্তি করান।

এই ব্যাপারে অগ্নিদগ্ধ শামীমের বোন স্বর্ণা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার ভাই ভাবীকে প্রেম করে বিয়ে করে। ভাবীকে তার পরিবার মেনে নেয়নি। সে আমাদের বাসায় থাকতো। কিন্ত ভাই বিদেশে গেলে সে আসতে চায়নি আর আমাদের বাড়ীতে। বিভিন্ন সময় সে চাপ দিতো আলাদা হতে।”

তিনি বলেন, “আমার ভাই বিদেশে থাকা অবস্থায় ভাবী ভাইকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ডিভোর্স দেয়। ভাই ও ভাবীর মাঝে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। ভাই, ভাবীকে ডিভোর্সের কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে, আমাকে পরিবার জোর করে দেয়াইছে বলে জানায় – তুমি আসো, আমাকে নিয়ে যাও। ভাই বিদেশ থেকে এসে ভাবীর সাথে যোগাযোগ করে তার কর্মস্থল স্কুলে যায়। এছাড়াও, বিভিন্নস্থানে ভাই ভাবীর সাথে দেখা করেছে। এটা অনেকেই দেখেছে।”

অন্য খবর  দোহারে ১ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস

তিনি বলেন, “ঘটনার দিন ভাই ভাবীর বাসায় যায়। ভাবী ডেকে নিয়ে যায়। কিন্ত সে ভাবীকে আনতে চাইলে তার পরিবার বাধা দেয়। এসময় হাতাহাতি ও ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। ভাইকে ওদের পরিবার বাধ্য করে গায়ে বাইকের তেল ঢালতে। এসময় কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন লাগিয়ে কেউ ভাইকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। পরে আশেপাশের লোকজন ভাইকে উদ্ধার করে ভাইকে হাসপাতালে পাঠায় এবং আমরা জানতে পারি।”

তিনি ‌আরও বলেন, “আমরা এর বিচার চাই। আমার ভাই সংকটাপন্ন অবসস্থায় আছেন। আপনারা দোয়া করবেন।”

এই বিষয়ে ফারজানা বলেন, “আমি ভালোবেসে বিয়ে করি। কিন্ত আমি জানতাম না সে নেশা করে। বিভিন্ন সময়ে আমাকে মারধোর করতো। আমি ভাবতাম হয়তো সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্ত হয়নি। বিষয়টি আমি শামীম ও আমার মধ্যকার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলে শামীম মারমুখী হয়ে ওঠে এবং আমার নামে বিভিন্ন অপবাদ দিতে থাকে।  বিয়ের প্রথম দিকে আমার পরিবার বিয়ে মেনে না নিলেও, সেসময় আমার অবস্থার কথা শুনে মেনে নেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে পারিবারিকভাবে বসে শামীমকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “তাকে ভালো হওয়ার জন্য আমি বিদেশ যেতে বলি। কিন্ত বিদেশ গেলে, সে আমার কোন খোজ খবর নেয়নি। মাঝে মাঝে কথা হতো। কিন্ত আসলে কথা না বলে, ঝগড়া হইতো বলা ভালো। কিন্ত সেটা কোন স্বাভাবিক সম্পর্ক নয়। আমি আমার বাবার বাড়ী চলে আসি। পড়ালেখা করতে থাকি। কিন্ত আমাদের মাঝে সংসার করার মতো আর কোন সম্পর্ক ছিলো না। ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ আমি শামীমকে তালাক দেই। ঘটনাটি শ্বশুরবাড়ীকে জানাই। এরপর শামীম আমাকে ফোন দিয়ে জোরাজোরি করতে থাকে। আমি বলি এভাবে আর সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, “শামীম এই মাসের ৫ তারিখে দেশে ফিরে আসে । এসেই আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্ত আমি তাকে এড়িয়ে চলি। সে আমার কর্মস্থল স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে থাকে। স্কুলে গিয়ে জোর করে দেখা করার চেষ্টা করে। বিভিন্ন গিফট দিতে চায়। আমি মেঘুলা পড়তে গেলে সে দেখা করার চেষ্টা করে। পথে কথা বলার চেষ্টা করে। বলে, আমি জোর করে নিয়ে যাবো। আমি তোমার বাসায় যাবো। আমি তাকে বলি, আপনার সাথে ডিভোর্স হয়েছে। আপনি চলে যান। কিন্ত সে আগের মতো জোর করতে থাকে। নিজের ক্ষতির চেষ্টা করবে বলে হুমকি দেয়।

এই অবস্থায় রবিবার রাতে সে আসে, আমাকে ছুরি দেখায়। আমার বাবা তাকে চলে যেতে বললে, সে আমাকে জোর করে নেয়ার চেষ্টা করে। আমার ও আমার বাবা-মা’র সাথে তার ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এসময় তার কাছে একটা ছুরি পাই আমি। পরে সে বলে সে নিজে মরে শিক্ষা দিবে। এরপর সে হঠাৎ করে ঘরে আসে, বাইকের তেল মেখে। এসময় আমার বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্ত তার হাতের গ্যাস লাইটে চাপে লেগে আগুন ধরে যায়। এতে শামীম ও আমার বাবা আগুনে পুড়ে যায়। পরে, আমার আপন ভাই ও ভাবী এসে পানি দিয়ে আগুন নেভায়। পরে, শামীমকে সবাই মিলে হাসপাতালে পাঠায়। এখন বিষয়টি নিয়ে শুধু শুধু ঝামেলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত ও সমাধান চাই।”

অন্য খবর  কোরান পোড়ানোর জেরে ইরানে সুইডিশ দূতাবাসের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সূর্য মেম্বার বলেন, “আমি টিসিবির কার্ড ঠিক করতে গিয়ে ঐ বাসায় চা খেতে বসি। এসময় হঠাৎ করে দেখি ঘরের দোয়ারে ধ্বস্তাধস্তি। গিয়ে দেখি শামীমের হাতে বোতল আর ছুরি আর গ্যাস লাইট। ফারজানার বাবা সেগুলো সরানোর চেষটা করেন। শামীমের গায়ে তেলের গন্ধ। এসময় শামীমের হাতে থাকা গ্যাস লাইটে ঠাস করে আগুন ধরে যায়। এসময় ফারজানা, ফারজানার আপন ভাই, ভাবী, বাবা-মা আগুন নেভায়। পরে হাসপাতালে রুবেল নিয়ে যায়।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত তারা আকন বলেন, “আমরা টিসিবির কার্ড ঠিক করতে যাই। এসময় হটাৎ হামতাম শুনে বের হই। এসময় হাতে ছুরি দেখি। কাছে  যাইতে না যাইতে আগুন দেখি। শামীম আগেই তেল মাইখ্যা আইসিলো। পরে, ফারজানার ভাই – ভাবী পানি ঢাইল্যা আগুন নেভায়। পরে, রুবেল, জিহাদ আর মান্নানের ছেলে ওরে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। সেখানে আমি, সূর্যবান, সূর্যবানের বোন, ফারজানা, ফারজানার বাবা-মা, ফারজানার আপন ভাই-ভাবি উপস্থিত ছিলো। পরে, সবাই আসে।”

দোহার থানার ওসি রেজাউল করিম নিউজ৩৯কে জানান, “কোন মামলা হয়নি। তবে, দুপক্ষ থেকে অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি ফুলতলার শাইনপুকুর পুলিশ ফাড়ির ইন-চার্জ শফিকুর রহমান তদন্ত করছেন।”

ইন-চার্জ শফিকুর রহমান নিউজ৩৯কে বলেন, “মামলার বিষয়ে বিস্তারিত ওসি স্যারে বলবেন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, শামীম ফারজানাকে আনতে গিয়েছিলো। সেখানে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে শামীম গ্যাসলাইট ও গায়ে নিজে তেল মেখেছিলো। পরে। ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে গ্যাস লাইটে চাপ লেগে আগুন লেগে যায়। এতে শামীম ও ফারজানার বাবা অগ্নিদগ্ধ হয়। পরে ফারজানার বাব-মা, আপন ভাই-ভাবী আগুন নেভায়। আমরা ঘটনার পরে গিয়ে সেখানে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করি। এই বিষয়ে যা বলার ওসি স্যার বলবেন। তদন্তে ইনশাল্লাহ প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।”

আপনার মতামত দিন