ঢাকার দোহার উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুসুমহাটি ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া এলাকায় নান্নু শরীফ ও মোক্তার হোসেনের বাড়িতে শুক্রবার সকালে হামলার ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে কার্তিকপুর এলাকার রহুল আমিন নামে এক ব্যক্তির পাওনা টাকা দেয়ার বিষয়ে মো.আলী শরিফের কাছে জানতে চান তার আত্মীয় নান্নু শরীফ। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সিরাজ শরীফ ও মো.আলী শরিফ নান্নু শরীফকে শারীরিবভাবে লাঞ্ছিত করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের জন্য বসলে আবারও নান্নু শরিফকে লাঞ্ছিত করেন মো.আলী। এসময় নান্নু শরিফের ছেলে শামিম শরীফ প্রতিবাদ জানায়। পরে মো.আলী শামিমসহ তার পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বেড়িয়ে যায়। ঘটনার একদিন পর শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে শিরাজ শরিফ, মো.আলী শরিফ,মারুফ শরিফ ও শিফাত শরীফসহ আরও ১০/১২ জন মুখ বাঁধা অবস্থায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নান্নু শরিফের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায় ও দরজা জানালা ভাংচুর করে। এসময় সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর ভেঙ্গে হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। তবে এই ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি।
শাহানাজ বেগম (৬৫), স্বামী আব্দুর রহমান শরীফ ওরফে নান্নু শরীফ, থানা অভিযোগ দায়ের করেন বিবাদী গন ১। মোহাম্মদ আলী শরীফ (৫০), পিতা-মৃত রশিদ শরীফ, ২। সিরাজ শরীফ (৪৫), পিতা-মৃত রশিদ শরীফ, ৩। লিটন শরীফ (৪০), পিতা-মৃত রশিদ শরীফ, ৪। মারুফ শরীফ (২১), পিতা-সিরাজ শরীফ, ৫। সিফাত শরীফ (১৯), পিতা-মোহাম্মদ আলী শরীফ, সর্ব সাং-সুন্দরীপাড়া, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকাগনসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, জনৈক রুহুল আমিন মৃধা (৫৫) উল্লেখিত ০১ নং বিবাদী মোহাম্মদ আলী শরীফ (৫০) এর কাছ হইতে ৭,০০০/- টাকা পায়। উক্ত টাকা ফেরত না পাওয়ায় উক্ত রুহুল আমিন মৃধা (৫৫) আমার স্বামী আব্দুর রহমান শরীফ ( নান্নু শরীফ) এর নিকট উক্ত টাকা সংক্রান্তে বিচার দেয়। আমার স্বামী ০১ বিবাদী মোহাম্মদ আলী শরীফ (৫০) ও ০২ নং বিবাদী সিরাজ শরীফ (৪৫) দ্বয়কে ভাতিজা হিসাবে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তাহারা আমার স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে এবং এলোপাথারী চর থাপ্পর মারিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফলা জখম করে।
নান্নু শরিফের স্ত্রী শাহনাজ বেগম জানান, আমার স্বামী ও ছেলেকে মেরে ফেলতে এমন আক্রমন করা হয়েছে। আমরা ২য় তলার গেইট বন্ধ করে দেয়ায় সবাই প্রাণে বেচে যাই। আমরা প্রতিনিয়ত এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
অভিযোগে আরো বলেন,আমার বসত বাড়ীর মুল লোহার গেইট ভাঙ্গিয়া অনধিকার প্রবেশ করিয়া আমার দোতলা বিল্ডিং এর লোহার মেইন গেইট সহ বাসার মোট ০৩ টি লোহার গেইট, চিলে কোটার ০১ টি, জানালার ০২ টি, মোট ০৩ টি থাই গ্লাস ভাঙ্গচুর করিয়া অনুমান ২,০০,০০০/- টাকা ক্ষতিসাধন করে এবং ০৪ টি বন্ধ সিসি ক্যামেরা নিয়ে যায়। যাহার মূল্য অনুমান ৫,০০,০০০/- টাকা। ।
এরপর উক্ত বিবাদীরা আমার একতালা বিল্ডিং (যাহা জনৈক শিক্ষক সাইফুল সাহেব এর নিকট ভাড়া দিয়েছি) এর ০৮ জোড়া জানালা ভাঙ্গিয়া ক্ষতিসাধন করে। যাহার মূল্য অনুমান ৮০,০০০/- টাকা। বিবাদীরা উক্ত ০১ তলা ভবনের ভিতরে প্রবেশ করিয়া একটি কক্ষের ( এখনে আমার নাতনি বসবাসরত) মালামাল তছনচ করে এবং ০৪ নং বিবাদী মারুফ শরীফ (২১) একটি এনড্রয়েট মোবাইল সেট ফোন নম্বর- নিয়ে যায়। যাহার মূল্য অনুমান ৩৫,০০০/- টাকা,
০৩ নং বিবাদী লিটন শরীফ (৪০) সোকেজের ড্রয়ারে থাকা ৭০,০০০/- টাকা নিয়ে যায়। আমার বড় ছেলের বউ ইয়াসমিন আক্তার (৩৫) ও মেঝ ছেলের বউ মৌ (২৫) বউ চিৎকার করিলে বিবাদী ০১ নং বিবাদী মোহাম্মদ আলী শরীফ ০২ নং বিবাদী সিরাজ শরীফ (৪৫) এবং ০৫ নং বিবাদী সিফাত শরীফ (২১) তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং অপহরণ করার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আমিসহ আমার ছোট ছেলে শামিম শরীফ (২৬) দোতালার বেলকনিতে এলে হলে উক্ত বিবাদীসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন বিবাদীরা আমাদেরকে জীবনে মারিয়া ফেলার হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে আমাদের ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন আগাইয়া আসিলে উক্ত ০১ বিবাদী মোহাম্মদ আলী শরীফ (৫০) ২ নং বিবাদী সিরাজ শরীফ আমার ছোট ছেলে শামীম শরীফ (২৬) হাত পা ও কাটিয়া পদ্মা নদীতে ফেলা দেওয়ার হুমকি প্রদান করিয়া চলিয়া যায়।
এদিকে নান্নু শরীফের পক্ষে কথা বলায় প্রতিবেশী মুক্তার হোসেনের বাড়িতেও হামলা চালায় মো.আলী শরিফ গংরা। এই বিষয়ে মুক্তার হোসেন জানান, আমার ছেলে প্রতিবাদ করায় আমার বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। ২৯তারিখ ঘটনার জের ধরিয়া গত ইং ৩১/১২/২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ৯ঃ৩০ ঘটিকার সময় উক্ত বিবাদীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটায় এর পর দোহার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নান্নু শরিফের স্ত্রী শাহনাজ বেগম।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা দোহার থানার এস আই শুভাষ দত্ত জানান, এবিষয়ে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত মো.আলী শরিফের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমরা কেউ হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এটি কতটুকু সত্য তা জানিনা। আমাদের উপর মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে।