দখল দূষণে মৃতপ্রায় ইছামতী নদী

1456

নবাবগঞ্জের বুক দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের উত্তাল ইছামতি এখন নিস্তব্ধ নিথর হয়ে গেছে। নদীর কাশিয়াখালী, ঘোষাইল, ও কার্তিকপুরে পদ্মার মুখে বাঁধ দেয়ায় নদী এখন অসুস্থ মেরুদণ্ডহীন হয়েছে পড়েছে। পদ্মার সঙ্গে ইছামতির সংযোগ শাখা-প্রশাখাগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুম ছাড়া নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা না নেয়ায় নদীর তীরের বিভিন্ন অংশজুড়ে ক্লিনিকের বর্জ্য ও ময়লার স্তূপ জমে আছে। এতে একদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অন্যদিকে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, আশির দশকের দিকে এ অঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল ইছামতি নদী। যাত্রীবাহী লঞ্চ ছিল এলাকাবাসীর একমাত্র বাহন। সে সময় নদীতে চলাচল করতো মুন্নি, নাহার, বাহার, জনতা নামের কয়েকটি বিলাসবহুল লঞ্চ। উপজেলার বান্দুরা টার্মিনাল থেকে সদরঘাট পৌঁছতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগতো। আর যাবতীয় বাণিজ্যিক পণ্য আনা-নেয়ার হতো নৌকাযোগে। সে সময়ে বিনোদন হিসেবে লঞ্চের কেবিনে দেশীয় জনপ্রিয় সিনেমা দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছতেন দোহার-নবাবগঞ্জের চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। এরপর আশির দশকে স্থলপথের উন্নয়নে কিছুটা পরিবর্তন আসে। তখন বান্দুরা থেকে বাসযোগে মরিচা ও তুলশিখালী ফেরি পারাপার। পরে কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় নেমে নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে রাজধানীতে যেত। এখন স্থলপথে ২ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছতে পারলেও নদীপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী।

অন্য খবর  সংগীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত পদকপ্রাপ্ত রহমত উল্লাহকে সংবর্ধনা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙন ও বন্যার কবল থেকে নবাবগঞ্জবাসীকে বাঁচাতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মার মুখে কাশিয়াখালি এলাকায় বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা নেয় এবং ক্ষমতায় থাকাকালীনই বাস্তবায়ন করা হয় বাঁধ। ফলে বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেলেও নদী পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় পণ্যবাহী নৌকাগুলোর চলাচল। নবাবগঞ্জের কলাকোপা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী বিপদ ভঞ্জন সাহা জানান, সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম পড়ে। পণ্যের দাম কম পড়লে কমদামে বিক্রিও করা যায়। তাছাড়া নৌপথে পণ্যের গুণগতমানও ভালো রাখা সম্ভব থাকে। তাই প্রাচীন কাল থেকে ব্যবসায়ীরা নৌপথে পণ্য পরিবহন করে আসছে। ইছামতি নদী সচল হলে একদিকে পরিবহন খরচ কমবে অন্যদিকে ক্রেতারও সাশ্রয় হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী পথ বন্ধ হওয়ায় অবহেলিত ইছামতি এখন ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাসবিনে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় অসচেতন ব্যবসায়ীরা কাঁচা বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন নদীকে। স্বার্থান্বেষী ক্লিনিক মালিকরা রোগীদের বর্জ্য ফেলার স্থানও করে নিয়েছেন নদীকে। ইছামতি নদীতে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে পানিতে ভাসছে ময়লা আবর্জনা।
অপরদিকে, নদীর পানি প্রবাহ থাকলে বিল ও ফসলি জমি পেত পলিমাটির দেখা। ফসলি জমির উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রবেশ থাকতো চলমান। বর্তমানে নদী, খাল, বিলে জেলেরা আর মাছ ধরতে পারে না। ফলে অনেক জেলেরাই তাদের পেশা থেকে সরে গেছে। যারা আছেন তারাও কোনরকম জীবনযাপন করছেন। তাছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে জেলে পরিবারের।

অন্য খবর  গালিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পিঠা-পুলির উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

নদী রক্ষায় স্থানীয় ‘ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন একাধিকবার। এতে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন প্রক্রিয়া চালালেও তা ধীরগতিতে চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি শফিউর রহমান তোতা বলেন, একটি নদীর মৃত্যু হলে একটি সভ্যতার মৃত্যু হতে পারে। ইছামতির নাব্য সংকটকালীন এলাকাবাসী তা বুঝতে পারছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশবিদরা যদি একটিবার দৃষ্টি রাখেন, শুধু ইছামতি নদী নয়, বেঁচে যাবে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গাও।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, বিষয়টিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হবে। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন নদী তীরবর্তী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে।

আপনার মতামত দিন