তৃণমূল বিএনপিতে চমক, যোগ দিচ্ছেন উকিল সাত্তার, শমসের মবিন ও তৈমুর, প্রেস সচিবের পদত্যাগ

280

সোহেল হাসান,news39.net: ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গড়া তৃণমূল বিএনপি’র জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। ১৯ সেপ্টেম্বর, মংগলবার সকাল ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে তৃণমূল বিএনপির জাতীয় সম্মেলন এবং কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

এই কাউন্সিলে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির নামের সঙ্গে মিল থাকা তৃণমূল বিএনপিতে থাকছে নতুন চমক। দলটির শীর্ষ দুই পদে (চেয়ারম্যান ও মহাসচিব) আসতে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য (বহিষ্কৃত) এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার। শুধু তারা নন, পর্যায়ক্রমে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং নিজে থেকে ছেড়ে দেওয়া নেতারাও এ দলে যোগ দেবেন। সেই তালিকায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও আছেন।

নাজমুল হুদার মৃত্যুর অনেকদিন পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তার মেয়ে অন্তরা হুদা দলের নেতৃত্বে আসেন। সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ নেয় তার দল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে বলে শোনা যাচ্ছে।
তৃণমূল বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নিয়মরক্ষার কাউন্সিল করে দলের চেয়ারম্যান অন্তরা হুদাকে সরিয়ে নতুন কমিটি গঠনের কাজ চলছে। শমসের মোবিন চৌধুরী এর আগেও তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে আসতে চেয়েছিলেন বলে জানান তারা।

এদিকে তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রেস সচিব তারেক হোসেন পদত্যাগ করেছেন। তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া প্রেস সচিব তারেক হোসেন তার পদত্যাগপত্রে news39.net কে উল্লেখ করেছেন, আপনাকে দলের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) পদে নিয়োগ প্রদানের পরে, আপনি আমাকে আপনার ব্যক্তিগত প্রেস সচিব হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেছিলেন। কিন্তু আমার ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে আপনার দেওয়া পদটির সঠিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে পালন করতে আমি ব্যর্থ হচ্ছি। আমি মনে করছি আমার কারণে আপনার এবং দলের ক্ষতি হচ্ছে। আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিচালনা না করতে পারায় আমি বিশেষভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। অতএব, আমার পদটির দায়িত্ব অন্য কাউকে প্রদান করে আপনার ও দলের কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করতে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি।’

অন্য খবর  ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীতার সম্ভাব্যতাঃ ঢাকা – ১ আব্দুল মান্নান খান

তারেক হোসেন বলেন, ‘আমি নানা কারণে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দিয়েছি।’

তৃণমূল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান news39.net কে বলেন, ইতিমধ্যে শমসের মোবিন চৌধুরী এবং তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপি’র সদস্য হয়েছেন। সদস্য না হলে তো তারা দলে পদ পাবেন না। আর দু’জনেই আজ কাউন্সিলে আসবেন এবং তারা শীর্ষ পদেই থাকবেন। এ ছাড়া কাউন্সিলে চমকও থাকছে।

এই বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তারা একটা ভালো পদে থাকবেন বলে আশা করি। আমরা এমন একটা সময় দলের নিবন্ধন পেয়েছি, সেখানে কারও আগ্রহ ছিল কি না সেটা আমি জানি না।
এক প্রশ্নের জবাবে অন্তরা হুদা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আবার তাদের কর্মকা-কে সমর্থন করি- সেটাও নয়। বিএনপি হয়তো নির্বাচনে আসবে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে সব দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলেই আমরা সরকারের দালাল হয়ে গেছি- এটাও তো ঠিক নয়। তবে, আমরা কোনো জোটে যাব কি না, সেটি এখনো ঠিক করিনি।

১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে এক প্রজ্ঞাপনে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার কথা জানানো হয়। দলটির নির্বাচনি প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন তার মেয়ে অন্তরা হুদা।

এদিকে, বিএনপি থেকে ২০১৫ সালে পদত্যাগ করেন শমসের মোবিন চৌধুরী। এরপর ২০১৮ সালে বিকল্প ধারায় যোগদান করেন। ওই সময় তাকে বিকল্প ধারায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেলেও বর্তমানে দলের সঙ্গে তাকে দেখা যায় না। তবে বিএনপি’র সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে মূলত কূটনৈতিক বিষয়ে কাজ করতেন তিনি।

অন্য খবর  সড়ক দূর্ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন নির্মল রঞ্জন গুহ

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার অভিযোগে ২০২২ সালে তৈমূর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। কিন্তু বহিষ্কারের পরেও দলের প্রত্যেক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। সর্বশেষ ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার জন্য লিখিত আবেদনও করেন তৈমূর আলম খন্দকার। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তৈমূর আলম খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, দেড় বছর হলো আমি বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছি। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেয়া হয়নি। আমার তো রাজনৈতিক পরিচয় দরকার। আর কথা বলার জন্য প্ল্যাটফর্মেরও প্রয়োজন। এজন্যই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ শুধু আমি নই আরও কিছু ব্যক্তি আমার সঙ্গে তৃণমূল বিএনপি’র কাউন্সিলে যাবেন। তারাও যোগদান করবেন। আর অনুসারীরাও আমার সঙ্গে কাউন্সিলে যাবেন।

তবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান এবং কাউন্সিলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি শমসের মোবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার পর পরই দলের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকেই দলটিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের ভিতর ও বাইরে থেকে প্রচণ্ড চাপ আসতে থাকে। পরে দলটির দায়িত্বে আসেন নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা। বিএনপি’র নামের সঙ্গে এবং প্রতীকের সঙ্গে মিল রেখে নিবন্ধন পাওয়া দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা এবং মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান।

আপনার মতামত দিন