ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকায় বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম লেখায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। এছাড়া, জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পত্রিকায় নিবন্ধ লেখায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ (সোমবার) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিরুদ্ধে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক কবি মুহাম্মদ সামাদসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
![](https://news39.net/wp-content/uploads/2024/06/rashed-chokder-adha24-min.jpg)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৬ সালের ১ জুলাই প্রকাশিত স্মরণিকায় উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব রেজাউর রহমান ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে লিখেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
ওই সময় রেজাউর রহমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ছিলেন। এই লেখার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রেজিস্ট্রারকে তাঁর কার্যালয়ে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বিক্ষোভ জানাতে গিয়ে তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের গাড়িতে থাকা অবস্থায় তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন। তারা ভিসির বাসভবনের ফটকেও তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষোভের মুখে রেজাউর রহমানকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে টিএসসির ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে ফেরত পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও ট্রাইব্যুনাল শেষে তাঁকে সিন্ডিকেট থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশনার কাজে সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার রিফাত আমিনকে পদাবনতি দেয়া হয়।
এছাড়া, নয়াদিগন্ত পত্রিকায় ‘জ্যোর্তিময় জিয়া’শিরোনামে এক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিবন্ধে মোর্শেদ হাসান খান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেন। তিনি লিখেন, ‘ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতারা অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান, এমনকি বঙ্গবন্ধুও।’ অবশ্য পরে অধ্যাপক মোর্শেদ ওই পত্রিকাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বঙ্গবন্ধু-সংশ্লিষ্ট অংশটুকু প্রত্যাহার করে নেন।
ওই নিবন্ধ প্রকাশের পরদিন ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার দাবিতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। ওই শিক্ষককে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ছাত্রলীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়। এবার সিন্ডিকেটে ওই বিষয়ে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক কবি মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি করল। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক হাসানুজ্জামান, বাহালুল মজনুন চুন্নু ও অধ্যাপক রহমত উল্লাহ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
![](https://news39.net/wp-content/uploads/2023/08/protiva-coaching-ad-primary-teacher-2023-min.jpg)