হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাগেজ আনতে গিয়ে দোহারের ইসলামপুর গ্রামের লোকমান আলী (৫৫) নামের এক ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। লাগেজ ছাড়াতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সময়মতো ঘুষ দিতে না পারায় লোকমানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে তাঁর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের শাক্তা এলাকায় সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশার সংঘর্ষে তিনি আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
লোকমানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকমানের স্ত্রী মিনজু আক্তার সৌদি আরবে থাকেন। ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে উড়োজাহাজে করে পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি লাগেজ পাঠান। ওই লাগেজে নতুন-পুরোনো কিছু জামা কাপড়, ১২ কেজি খেজুর, দুটি পুতুল, একটি কুকারসহ বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা ছিল। এরপর গত ২ সেপ্টেম্বর শনিবার ঈদুল আজহার দিন সৌদি আরব থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মিনজু আক্তার। ওই লাগেজ নিতে মিনজু ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কাস্টমসে যান। কিন্তু কাস্টমসের এক কর্মকর্তা এ জন্য ৩২ হাজার ২৪০ টাকা দাবি করেন। তাঁদের কাছে সেই পরিমাণ টাকা ছিল না।
লাগেজে এত টাকার জিনিসপত্রও ছিল না। এ কারণে তাঁরা লাগেজ নেবেন না জানিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। তখন কাস্টমস কর্মকর্তা তাঁদের আপাতত এক হাজার টাকা বিকাশ করতে বলেন। ওই টাকা বিকাশ করার পর কাস্টমস কর্মকর্তা আরো ২২ হাজার টাকা দিয়ে লাগেজ নিয়ে যেতে বলেন।
ওই লাগেজ ছাড়াতে আজ দোহার থেকে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন মিনজুর স্বামী লোকমান। তিনি বসেছিলেন সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায়। পথে অপর অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিনি। দুর্ঘটনার পর অটোরিকশা চালক নিজেই তাঁকে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর লোকমানকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত লোকমানের ছেলে রাজীব বলেন, ‘৩২ হাজার ২৪০ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় কয়েক দফায় চেষ্টা করেও আমরা আমাদের ল্যাগেজ আনতে পারিনি। তারপর চলে আসি বাসায়। আজ সর্বশেষ আমার বাবা তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছিলেন বিমানবন্দর, যদি কোনোভাবে ছাড়ানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে। আর সেই লাগেজ আনতে গিয়েই আজ আমার বাবা চিরতরে চলে গেলেন।’
কাঁদতে কাঁদতে রাজীব বলেন, ‘শেষমেশ এই ঘুষের টাকার জন্যই আমার বাবা মারা গেল। এই ঘুষ, এই কাস্টমসই দায়ী আমার বাবার মৃত্যুর জন্য! আমি এর বিচার চাই।’
নিহত লোকমানের মেয়ের জামাই মজ্জেল তালুকদার বলেন, ‘আমি, আমার ছোট শালা আর আমার শাশুড়ি দুই দিন গিয়েও ফিরে এসেছি। প্রথম দিন ৩২ হাজার ২৪০ টাকার কথা বললেও পরে ২২ হাজার টাকায় লাগেজ দিতে রাজি হয় কাস্টমস কর্মকর্তা। তারপর তো আজ আমার শ্বশুরকেই চলে যেতে হলো পৃথিবী ছেড়ে।’