তিনচাক্কার বেবীটেক্সি, একটা সময় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের রাস্তা দাপিয়ে বেড়িয়েছে যানবাহনটি। ব্যাক্তিগত ভ্রমনের জন্য অথবা পরিবার নিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াতের জন্য এই বেবীটেক্সিই ছিলো সবার ভরসা। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ায় ২০০১ সালে ঢাকাসহ সারাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় এই বাহনটি। খোলা বেবী
এরপরে পর্যায়ক্রমে ২০০১ ও ২০০২ সালে বেবীটেক্সির বিকল্প হিসাবে ভারত ও চীন থেকে আনাহয় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। অকটেন চালিত বেবীটেক্সি থেকে প্রচুর পরিমান ধোয়া নির্গত হতো, তাই পরিবেশ দূষন কমাতে বন্ধ করে দেয়া হয় এই বেবীটেক্সি গুলোকে।

২০০০ সালে বন্ধ হয়ে গেলেও কেরানীগঞ্জের নির্দিষ্ট কয়েকটি রাস্তায় এখোনো চলছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই পরিবহনটি। মোহাম্মদপুর থেকে বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের আটিবাজার, আটিবাজার থেকে খোলামোড়া, খোলামোড়া থেকে কোনাখোলা,কোনাখোলা থেকে রাজাবাড়িসহ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এখনো এই খোলা বেবী চলাচল করছে।

প্রতিবার পারাপারে ৫ জন করে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে পরিবহনটি। ভাড়া খোলামোড়া থেকে কোনা খোলা অথবা আটিবাজার জন প্রতি ১০ টাকা। প্রায় ১০০ টির ওপর খোলা বেবীটেক্সি যাতায়াত করে প্রতিদিন এই রুটগুলোতে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুড়তে আসা লোকজন শখকরে এই খোলা বেবীতে উঠে কেরানীগঞ্জ বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ে পরিদর্শন করে।

এ সকল গাড়ীর নাই কোনফিটনেস, নেই কোন বৈধ কাগজপত্র আবার এসব গাড়ীর চালকদেরও নেই কোন লাইসেন্স। তবুও এ গাড়ীগুলো যাত্রীদের কাছে পছন্দ নির্দিষ্ট ষ্টান্ডগুলোতে। এর কারন একটাই ,গাড়ীগুলো খোলা। গাড়ীগুলোর নেই কোন পর্দা নেই কোন হুক সম্পূর্ন খোলা। তাই এ সকল গাড়ীতে যাত্রীরা চলাচল করে আনন্দ পায় বলেই এর চাহিদা। যারা দ্রুত কোথাও যেতে চান তাহলে সে সকল যাত্রীরাই অন্য কোন পরিবহন ব্যবহার করেন আর যারা ধীরে সুস্থে চলাচল করতে চান সে সকল যাত্রীরাই বেবীটেক্সীতে চলাচল করেন।

৬০ বছর বয়সী রহমত আলী নামে এক বেবটেক্সী চালক বলেন, বিগত ৩০ বছর যাবৎ সে বেবিটেক্সি চালায়। অনেকেই কেরানীগঞ্জে শখের বসে খোলা বেবিটেক্সিতে ঘুড়তে আসে। প্রতিদিন খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।

অন্য খবর  সালমা ইসলাম ও টিএনও সুপরিকল্পিত ভাবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বাদ দিয়েছে- আব্দুর রহমান আকন্দ

আলী হায়দার নামে আরেক ড্রাইভার বলেন, ৯৫ সালের দিকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি বেবিটেক্সি কিনেন। কালের বিবর্তনে এই পরিবহনটি হারিয়ে গেলেও তিনি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন রাত ২ টা পর্যন্ত এখানে যাত্রীরা যাতায়াত করে।

খোলামোড়াষ্টান্ডে শাহনেয়াজ নামে এক যাত্রী বলেন, খোলা বেবীতে ঘুরতে ভালো লাগে,চারপাশের পরিবেশ খোলামেলাভাবে দেখাযায়। গাড়ীগুলো সরকার বন্ধকরে দেওয়ার পর স্থানীয় কিছু চালক তারা গরীব হওয়ায় এ গাড়ীগুলো বিক্রি না করে তারা কেরানীগঞ্জে নিয়ে এসে যাত্রী সেবা করছে। আমার মতে এটি এই এলাকার ঐতিহ্য। অনেকেই ছুটিরদিনে ঘুড়তে আসে বিষয়টা ভালো লাগে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ঘুরতেআসা খোলা বেবীর যাত্রী আবুল হোসেন জানান, তিনি একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। রাজধানীর মোহাম্মাদর এলাকায় তার বাড়ি। রাজধানীতে সারাদিন যান্ত্রিক গাড়ীর সব্দে অতিষ্ট আমরা, তাই সপ্তাহে একদিন বন্ধ পেলে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসি কেরানীগঞ্জের এই নিরিবিলি পরিবেশে। আর আমরা কেরানীগঞ্জে ঘুরতে আসলে খোলা বেবীতে না ঘুরলে আমাদের ঘোড়াই অতৃপ্ত থেকে যায়। খোলা বেবী দিয়ে ঘুড়তে যেমন ভাল লাগে তেমনি প্রান ভরে প্রাকৃতিক নিঃস্বাস নেওয়া যায়।

শাক্তা ইউনিয়নন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি সালাউদ্দিন লিটন জানান, বেবিটেক্সি অনেক আগে নিষিদ্ধ হলেও এখোনো কেরানীগঞ্জে চলছে পরিবহনটি। আর আমার ইউনিয়নের বেশী চলে এ সকল গাড়ী। তিনি বলেন,মাঝে মধ্যে দেখা যায় অনেক গাড়ীর মালিকরাও এ সকল গাড়ী দিয়ে ঘুরতেছেন। কৌতুহলবসত একবার আমার এক পরিচিত লোককে আমি(চেয়ারম্যান) জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনার এসি গাড়ী থাকতে এই বেবিটেক্সিীতে উঠবেন। আপনার গাড়ীকি দৃষ্টাব দিয়েছে। তাহলে আমার গাড়ী নিয়ে যান। জবাবে তিনি বলেছিলেন আমার গাড়ী ঠিক আছে কিন্তু অনেকদিন হলো খোলা বেবী দিয়ে ঘুরা হয় না। আজ একটু সময় পেয়েছি খোলা বেবীটেক্সী দিয়ে ঘুরে প্রকৃতির সৌন্দয্য অবলোকন ও প্রকৃতিক নিঃস্বাস নিবো,তাই বেবী টেক্সীতে চড়লাম আর কিছুনা।

অন্য খবর  সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাংবাদিককে দেখতে হাসপাতালে দোহার প্রেসক্লাব সভাপতি সেক্রেটারী

এ সকল ফিটনেসবিহিন গাড়ী সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, প্রায় দেড়যুগ আগে সরকার রাজধানীতে এ গাড়ীগুলো চলাচল বন্ধ করে দিলেও আমাদের স্থানীয় কিছু গরীব লোক গাড়ীগুলো নিয়ে চলে আসে নিজ এলাকায় কেরানীগঞ্জে। তখন থেকেই তারা এখানে চলাচল করছেন। এরপর যখন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আসলো তখন এ গাড়ীরচালকদের না খেয়ে মরারমত অবস্থা হলো। এরপর তারা কৌশল অবলম্বন করে বেবীটেক্সীর পর্দা ও উপরের অংশ হুক খুলেনীচের অংশ রেখে দেন। এ অবস্থায় বেবীচালকরা কিছুদিন রাস্তায় চলাচল করায় ভ্রমনপিপাসুদের গাড়ীগুলো ফের নজরকাড়ে এবং সিএনজিচালিত অটোরিক্সার সাথে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। আমার ধারনা একটা সময় আসবে এ গাড়ীগুলো কেরানীগঞ্জেরঐতিহ্য বলেমনেহবে।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেবীটেক্সী সরকার অনেক আগেই বন্ধকরে দিয়েছে। কিন্তু কেরানীগঞ্জের গ্রামঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে খোলা বেবী চলাচল করতে দেখা যায়। এ গাড়ীগুলো বেশীরভাগ বন্ধের দিন চলাচল করে থাকে। এর একটা কারন ভ্রমন পিপাসুরা । এ গাড়ীগুলো দিয়ে ঘুড়ে বেড়ায় কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তারা আনন্দ পায়। যান্ত্রিক শহড় রাজধানী থেকেও অনেকে আসে এ সকল গাড়ী দিয়ে ঘুড়ার জন্য। তবে এসকল গাড়ীর চালকেদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা নিয়ম মেনে চলবেন। সাবধানে গাড়ী চলাবেন, পাল্লাপাল্লি করে গাড়ী চালাবেন না, কোন দুর্ঘটনায় পড়বেন না। জানেনতো একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা দক্ষিন এর ট্রাফিক পরিদর্শক নুরুল ইসলাম মল্লিক জানান, এ সকল গাড়ী সরকার মডেলাই করে দিয়েছে প্রায় দেড় যুগ হয়ে গেছে। আমি কেরানীগঞ্জে আসার পর দেখেছি বেশ কিছু গাড়ী এখান কার গ্রাম গঞ্জের সড়কগুলোতে চলাচল করে। আমরা এ গাড়ীগুলো মহাসড়কে উঠতে দেই না।

আপনার মতামত দিন