কালের সাক্ষী হয়ে ১১০ বছরেও দাড়িয়ে আছে “হার্ডিঞ্জ ব্রিজ”

45
কালের সাক্ষী হয়ে ১১০ বছরেও দাড়িয়ে আছে “হার্ডিঞ্জ ব্রিজ”

১৯১৫ সালের ৪ মার্চ ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু উদ্বোধনকালে সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেলস্ আবেগভরে বলেছিলেন, ‘যে সেতু নির্মাণ করে গেলাম উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এ সেতু চিরযৌবনা হয়ে থাকবে।’ কথাটি যে কতখানি সত্য, তার প্রমাণ ১০৯ বছর আগে পদ্মা নদীর বুকে তৈরি করা এই ব্রিজটি শতবর্ষ পেরিয়ে ১১০ বছরে পদার্পণ করলেও সেতুর গায়ে বার্ধক্যের কোনো ছাপ পড়েনি। অনেক শাসক-শোষক ও প্রজন্মের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষ পেরিয়ে আজও বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

বাংলাদেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সেতুবন্ধ তৈরি করেছে ঐতিহাসিক এই ব্রিজটি। পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্তকারী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একসময়ে ছিল বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু।

ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের ইতিহাস রয়েছে। ১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সঙ্গে আসাম, ত্রিপুরাসহ উত্তরাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করেছিল। সে সময়ে প্রস্তাবটি কার্যকরী না হলেও কয়েক দশক পর ১৯০৯ সাল থেকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ব্রিজ নির্মাণের সময় ছিল ১৯০৯ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত।

অন্য খবর  আমদানি করলে ১২ টাকার ডিম ২০ টাকায় খাওয়ানোর হুঁশিয়ারি

প্রায় ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মিত হয় ব্রিজটি। তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ রুপি। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছিল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫ হাজার ৮৯৪ ফুট বা ১.৮ কিলোমিটার। এর ওপরে রয়েছে দুটি ব্রডগেজ রেললাইন। ব্রিজটির নকশা করেছিলেন আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল। ব্রিজে স্প্যান রয়েছে মোট ১৫টি, প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি ১৯১৫ সালের আজকের এই ৪ মার্চে চালু হয়েছিল ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনী ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্যাংক, যুদ্ধসরঞ্জামসহ সৈন্যও পারাপার করত। ১৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনীকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে মিত্রবাহিনী বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করলে ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর যথারীতি ভারত সরকার ব্রিজটিকে মেরামত করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। এরপর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে পুনরায় ব্রিজটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’সহ বিভিন্ন ট্রেন ৪০ বছর ধরে চালাচ্ছেন এল এম (ড্রাইভার) তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হলেও এখন ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। তবে আগের মতোই চলছি, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হয় না।

অন্য খবর  সুন্দরবনে পর্যটক বাড়াল পদ্মা সেতু

গত ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষ পূরণ হয়। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) বীরবল মন্ডল জানান, ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, লৌহকাঠামোর রাসায়নিক ধাতুর গুণাবলি আরও ২৫ বছর বলবত থাকবে। ফলে ব্রিজ ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকছে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ব্রিজ রং করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। ইতিমধ্যেই সরকার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ৩০০ মিটার অদূরে উজানে নতুন করে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

আপনার মতামত দিন