ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা গরুর কাছি ছেঁড়া

584
ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা গরুর কাছি ছেঁড়া

 

 

 

আবহমানকাল থেকে আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে গৃহপালিত বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি দিয়ে নানা ধরনের খেলাধুলা বা বিনোদন দেয়ার আয়োজন করে থাকে। এতে অন্য যেকোনো বিনোদন ব্যবস্থার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বাড়তি আনন্দ পেয়ে থাকে। এ জন্য নারী পুরুষ থেকে শুরু করে সব ধরনের বয়সের দেখা মেলে এ ধরনের আয়োজনকে কেন্দ্র করে। আমাদের দেশে সাধারণত পশুপাখি দিয়ে যে বিনোদনের আয়োজন করা হয় এর মধ্যে রয়েছে ঘোরদৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, গরুর গাড়ি প্রতিযোগিতা, মোরগ-মুরগির লড়াই ও গরুর কাছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা অন্যতম। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী পশুর প্রতিযোগিতা হিসেবে গরুর কাছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত একটি জনপ্রিয় খেলা। দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে এ খেলাটি চোখে না পড়লেও প্রায় ২০০ বছর ধরে গরুর কাছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে এলাকাবাসী। বিশেষ করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একাত্মতা প্রকাশ করে এ আয়োজন করে থাকে। বাংলা ক্যালেন্ডারকে অনুসরণ করেই বছরে একবার এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে এ বছর ১৪ জানুয়ারি, শনিবার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের চন্দ্রখোলা গ্রামে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উৎসুক জনতা গরুর কাছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা দেখতে ওই দিন দুপুরের পর থেকে আয়োজন স্থলে আসতে শুরু করে। হাজার হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

অন্য খবর  সড়ক দূর্ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন নির্মল রঞ্জন গুহ

অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন আয়োজন চোখে পড়ে। আয়োজন করা হয় গ্রাম্য মেলার। এ ছাড়া নিমকি, চানাচুর, মদনমুরালী, বাদামি ও মিষ্টিসহ মুখরোচক বিভিন্ন খাবারের লোভ সামলাতে পারে না দর্শনার্থীরা। সেই সাথে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার বিভিন্ন উপকরণের দেখা মেলে।

গরুর কাছি ছেঁড়া খেলায় গরু বা ষাঁড়কে মোটা কাছি অথবা রশি দিয়ে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে দেয়া হয়। একদল ঢোলক ঢোল পেটানো শুরু করলে গরু লাফালাফি শুরু করে, একপর্যায়ে গরু দৌড় দেয়। দৌড় দিয়ে যদি গরুর গলায় বাঁধা কাছি ছিঁড়তে পারে তবে তাকে প্রাথমিকভাবে বিজয়ী হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কাছি ছিঁড়তে না পারলে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে। এভাবে যে গরু সব চেয়ে বেশীবার কাছি ছিঁড়তে পারবে সেই গরুকে বিজয়ী করা হয়। তবে প্রতিযোগিতার সময় গরু কাছি ছিঁড়ে দৌড় দেয়ার সময় গরুর পায়ের নিচে পড়ে অনেকে আহত হয়। তাই এ খেলাটি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি খুবই উপভোগ্য। অনেক সময় গরুর আঘাতে জীবনাশের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। এ জন্য দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তবু গরুর কাছি ছেঁড়া খেলা দেখার জন্য হাজারো মানুষের ঢল নামে পরন্ত বিকেলে। স্থানীয় বাসিন্দা পীযূষ মণ্ডল জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে এ প্রথা পালন করে আসছে এলাকার সবস্তরের মানুষ। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিনে এ উৎসব পালন করা হয়। এলাকায় মানুষজন প্রতি বছরই এ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকে।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন

হরিস্কুল গ্রামের স্কুলশিক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, মেলা উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকে আশপাশের বাড়িগুলোতে বাড়তে থাকে অতিথির সংখ্যা। আপ্যায়নের জন্য রকমারি পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।

যন্ত্রাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নন্দলাল সিং জানান, এ মেলা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের উৎসব। পৌষসংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষে এই আয়োজন এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে অনেক আনন্দ বয়ে আনে। বাড়ি বাড়ি চলে অতিথি আপ্যায়ন।

আপনার মতামত দিন