অক্টোবর নিয়ে হঠাৎ উত্তাপ

    148

    >> পহেলা অক্টোবর থেকে বিএনপির সরকার পতন আন্দোলন
    >> আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে থাকার ঘোষণা আওয়ামী লীগেরও
    >> দাবি মানতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময়

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এ উত্তাপ।

    গত শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে এক নাগরিক সমাবেশ থেকে ৪ দফা দাবিতে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। প্রবীণ আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই নতুন প্লাটফর্মে বিএনপির শীর্ষ ৪ নেতার যোগদান ও ঘোষণা পত্রের পরই মূলত এই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে।

    তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ঘোষিত ওই পত্রে বলা হয়, সরকার ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিবেন।

    ঘোষণায় বলা হয়, ন্যায় বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না।

    অন্য খবর  দোহার নবাবগঞ্জ কেরাণিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

    এ গণ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পযায়ে মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, শ্রেণি-পেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ কমিটি গঠন করুন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ গণজাগরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।

    ঘোষিত দাবি কার্যকরে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।

    ওই ঘোষণার পর রোববার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য দুর্নীতিবাজরা যুক্তফ্রন্টের নামে জোট বেঁধেছে। সুদখোর-ঘুষখোর, খুনি, দুর্নীতিবাজরা একত্র হয়ে সরকারবিরোধী জোট গড়েছে।’

    এ দিকে আগামী শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে ২৬ সেপ্টেম্বর ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের অপরিহার্যতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিটিউশন মিলনায়তনে। এতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

    মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ সরকারকে অপসারণ করব। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের মাধ্যমে কোনো ভায়োলেন্সের মাধ্যমে নয়। প্রেস ক্লাবের বক্তব্য দিয়ে কাজ হবে না, ‘সরকার পতনের আন্দোলন’র জন্য পহেলা অক্টোবর থেকে রেডি থাকতে হবে।

    মওদুদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঠে নামতে হবে। জনগণের জোয়ার এ সরকারকে দেখাতে হবে এবং দেখবে। কারণ আমরা এবার খালি মাঠে গোল দিতে দেব না। জনগণকে নিয়েই আমরা থাকব।’

    অন্য খবর  বিমানবন্দরে আটক নবাবগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শিরিন

    অন্যদিকে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ দাবিকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের চলছে দফায় দফায় বৈঠক। জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল, ইনশাল্লাহ আগামীতেও ঢাকা দখলে থাকবে। শুধু ঢাকা নয় সারা দেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।

    জোট নেতাকর্মীদের যে কোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুত থাকবেন, যেন ওই (বিএনপি) অপশক্তি মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখব কারা মাঠে নামবে আর কে নামবে না। আগামী এক মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় সজাগ থাকবেন। কোনো চক্রান্ত নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা প্রতিহত করা হবে।’

    রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে ১৪ দলের মতবিনিময় করে।

    ওই মত বিনিময় সভায় সরকারের নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং বিএনপি মিলে ঐক্যের নামে যেটা হচ্ছে সেটা জাতির জন্য হুমকি।

    শাজাহান খান বলেন, ‘আদর্শবিহীন কোনো ঐক্য হতে পারে বলে মনে করি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, দুর্নীতির দায়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা… আসলে তাদের ঐক্যের ভিত্তি কি? এটা এখনো জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। এটা একটা চক্রান্ত। এ চক্রান্তকে নস্যাৎ করতে ১৪ দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব নিতে হবে।

    আপনার মতামত দিন