মুক্তিযুদ্ধে নবাবগঞ্জের ইতিহাস

1731
নবাবগঞ্জের শোল্লায় পুকুরে ২ নারীর অর্ধগলিত লাশ

মহান মুক্তিযুদ্ধে নবাবগঞ্জর মুক্তি পাগল মানুষের রয়েছে অমর সাফল্য গাথা। যা আমোদের মুক্তিযুদ্ধকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৯৭১ সালে ১লা এপ্রিল নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তৎকালীন গণ পরিষদ সদস্য আবু মোহাম্মদ সুবিদ আলী টিপুর নেতৃত্বে সর্বপ্রখম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে নবাবগঞ্জ বহুমূখি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বর্তমান নবাবগঞ্জ পাইলট মডেল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ) বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।এটি ছিল উপজেলা পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন।

ওইদিন হাজারো মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য আবু মোহাম্মদ সুবেদ আলী টিপু মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে  কয়েক রাউন্ড গুলি ফোটানো হয়। সে সময় পকাতা উত্তোলন কালে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার বদিউজ্জামান বদি, শওকত হোসেন আঙ্গুর, আঃ বাতেন মিয়া, মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ আরও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। নবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতে গেলে যার নাম সর্বাগ্রে আসে তিনি হলেন আজিজুর রজমান ফকু। (ছাত্রজীবনে ’৫২র মহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন আজিজুর রজমান ফকু। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে প্রায় ৩০০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে আগরতলা পাঠিয়ে যুদ্ধের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় আড়িয়াল বিলের ৮৫ হাজার একর অনাবাদি জমি আবাদের জন্য আলমপুর-মদনখালী খাল কাটার ব্যবস্থা করেন তিনি। যার কারণে নবাবগঞ্জ, দোহার, শ্রীনগর, সিরাজদিখান থানার বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি ইরি চাষের আওতায় আসে। কলেজ জীবনেই ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে ১৯৬০ সালে হরগঙ্গা মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক এবং ১৯৬৩ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময় বিএসসি পাস করে তিনি চূড়াইন (নবাবগঞ্জ) আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন এবং বিনা বেতনে ২ বছর ওই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য এবং একজন সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী। একই সঙ্গে চূড়াইন আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।)

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে গরু চোর আটক

পতাকা উত্তোলন, এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আবু মোহাম্মদ সুবেদ আলী টিপু জানান, ১৯৭১ সনের ২৮ মার্চ রাতে  জাতীয় নেতা  তাজউদ্দিন আহমেদ  ও ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম কেরানীগঞ্জ হয়ে নবাবগঞ্জে আগলার টিকরপুর গ্রামে তার বাসায় রাত্রি যাপন করেন এবং তাকে দিক নিদের্শনা দেন। পরদিন  ভোরে সেখান থেকে বের হয়ে দোহার থানা হয়ে ফরিদপুর দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়  তারা। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।

এই ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২৬ তারিখ থেকে কারফিউ জারি হয়। ২৭ তারিখ ২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল হলে আমরা কেরানীগঞ্জ চলে যাই। কেরানীগঞ্জে আমাদের সাবেক সংসদ সদস্য বোরহানউদ্দিন গগনের বাড়িতে আমরা আশ্রয় গ্রহণ করি। জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী সাহেব এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান সাহেব, মনি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই এবং আমিসহ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।২৯ মার্চ কেরানীগঞ্জ থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া হয়ে এপ্রিলের ৪ তারিখ আমরা ভারতের মাটি স্পর্শ করি এবং সানি ভিলায় আশ্রয় নেই। এখানে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন-পরে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী-জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম।

অন্য খবর  সাবেক মন্ত্রী ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ আতাউদ্দিন খানের ইন্তেকাল

নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত হয়। নবাবগঞ্জে পাকসেনাদের প্রধান ক্যাম্প ছিল নাওপাড়া, গালিমপুর, চুড়াইন, আগলা। ১৯৭১ সনে আগলা, গালিমপুর, চুড়াইনে মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় এবং আলোচিত যুদ্ধসংগঠিতহয়। ১৯৭১ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর বিকাল ৪.০০ টার দিকে নদী পথে (ইছামিত) ঢাকা থেকে এম.এল পয়েন্টার নামক লঞ্চযোগে বিপুল সংখ্যক পাকসেনা নবাবগঞ্জ অভিমূখে আসার পথে গালিমপুর পৌছানোরসাথে সাথে আগে থেকে প্রস্ত্তত থাকা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে লঞ্চ আক্রমন করে।  আক্রমনের সাথে সাথে লঞ্চের চালক দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে নদীর চরায় লঞ্চটি ঠেকিয়ে দেয়। শুরু হয় তিন দিক থেকে গুলি বর্ষন।তিন দিন যুদ্ধ চলার পর লঞ্চে থাকা ৪৫জন পাকসেনা সবাই নিহত হয়। ঐ দিন যুদ্ধে শহীদ হন বেনুখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহীম । ঐ যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন জনাব নাসির উদ্দিন খান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন জনাব মোশারফ হোসেন খান। যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন নবাবগঞ্জ-দোহার এবং শ্রীনগরেরবীর মুক্তিযোদ্দারা। যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় ভারত থেকে আসা নবাবগঞ্জের কমান্ডার জনাব শওকত হোসেন (আঙ্গুর) ঐ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। পাকসেনাদের গ্রুপ প্রধান ছিলেন ক্যাপ্টেন জাফর উল্লাহ্ খান। তিনিও ঐ যুদ্ধে নিহত হন।

১৯৭১ সনে নভেম্বরে নবাবগঞ্জ পাইলট স্কুলে পাকসেনাদের ক্যাম্প আক্রমন করা হয়। রোজার মাসে তারাবির নামাজের পরই মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমন করে ক্যাম্পটি ধ্বংশ করেন এবং ১৭/১৮জন পাকসেনাদের হত্যা করেন। জীবিতদের কেঢাকা থেকে এসে পাকসেনারা নিয়ে যায়। এরপরই স্বাধীন হয় নবাবগঞ্জ উপজেলা।

আপনার মতামত দিন