অপরিকল্পিত বাঁধে কেড়ে নিয়েছে একটি নদীর প্রান

1080
বান্দুরা সেতু থেকে ইছামতি নদী, নবাবগঞ্জ

ঢাকার নবাবগঞ্জের ইছামতি নদী। এক সময় এই নদীতে দিন-রাত শোনা যেত লঞ্চ ও জাহাজের সাইরেন। ঢাকা থেকে দোহার-নবাবগঞ্জে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান ভরসা ছিল নদীপথ। কিন্তু সেই জলপথ আজ মৃত, শুধুমাত্র পরিকল্পনাহীন এক বেরিবাধের কারনে হারিয়ে গেছে এই নদীপথ, সাথে মেরে ফেলেছে এই নদীটিকেও।

পদ্মা নদীর সঙ্গে ইছামতির সংযোগ থাকায় তীব্র স্র্রোত ছিল নদীতে। স্র্রোত এতই প্রবল ছিল অনেকের বসত বাড়ি চলে গেছে নদী গর্ভে। নদী ভাঙন থেকে মানুষের বসত ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয় ১৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বেড়িবাঁধ। তবে বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইচ গেট না থাকায় এখন মৃত প্রায় ইছামতি নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙ্গন ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে ইছামতি নদীতে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহারের অরঙ্গাবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাটিপাড়া বংখুরী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে সরকার দোহার-নবাবগঞ্জ এবং হরিরামপুর উপজেলাকে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য দোহারের অরঙ্গাবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাটিপাড়া বংখুরী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। যে বাঁধটি ঢাকা জেলা দক্ষিণ রক্ষা বেড়ি বাঁধ নামে পরিচিত। বেড়িবাঁধের কারণে সে যাত্রায় নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা পেলেও সেই বেড়িবাঁধই এখন ইছামতির মরার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদক্ষতা ও অপরিকল্পতায় বাঁধের ইছামতি-পদ্মা নদীর সংযোগস্থলে স্লুইচ গেট স্থাপন না করা এবং বহু বছরেও নদীটি ড্রেজিং না করায় ইছামতি এখন বিলুপ্তির পথে। সরজমিনে ইছামতি নদীর তীর ঘুরে দেখা যায়, হারিয়ে যেতে বসেছে ইছমতির আপন চেহারা। বেড়িবাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বাধা পাওয়ায় শুকিয়ে গেছে কাশিয়াখালী থেকে শিকারীপাড়া বারুয়াখালী বান্দুরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার নদীপথ। সমস্যায় পড়েছে স্থানীয় ৫ হাজার জেলে পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য। সে সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারও পেশার মানুষ।

অন্য খবর  নিজ বাসায় কোয়ারেণ্টাইনে আছেন নবাবগঞ্জের সন্তান স্বাস্থ্য সচিব আলি নুর

আর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ওপর। বিশেষ করে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ চরমে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ রক্ষা মঞ্চ, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরম, ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন ও স্থানীয় বাসিন্দারা মূল নদীতে স্লুইচ গেট নির্মাণের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সব সময়ই উদাসীন।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা জেলার অন্যতম বৃহত্তম কোঠাবাড়ীর বিলে আজ পানির অভাবে ধান চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা। এক সময় এই বিলেই চাষ হতো লাখ লাখ হেক্টর ইরি-বোরো ধান। বিলের পানির উৎপাদিত ধানই নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলাবাসীর চালের চাহিদা মেটাতো। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে জেলেরা এ বিলের পানিতে রাত-দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকত। আর সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চলত জেলে পরিবারগুলোর। এখানে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির হরেক রকম সুস্বাদু মাছ। কিন্তু এখন মাছ পাওয়া তো দূরের কথা দেখা দিয়েছে পানির চরম অভাব।

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি অ্যাড. সাইদুর রহমান মানিক বলেন, নদী মরে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ও মৎস্য আহরণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত নদীটি খননের দাবি জানান তিনি।

অন্য খবর  মুক্তিযুদ্ধে নবাবগঞ্জের ইতিহাস

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মইউদ্দিন বলেন, ২০১০ সালে এই বাঁধে ৬টি স্লুইচ গেইট, ইছামতি নদীর ৭২ কিলোমিটার খনন এবং আড়িয়াল বিলের ৬টি খাল খননসহ সমুন্নয় পানি নিষ্কাশন নামে একটি প্রকল্প ওপর মহলে জমা দেয়া আছে পাস হয়ে এলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেললা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শীঘ্রই বিআইডব্লিউটি এর সঙ্গে ইছামতি নদী খনন ব্যবস্থা ও স্লুইচ গেইট নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি করা হয় যাতে ইছামতি নদীকে বাঁচাতে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হয়।

আপনার মতামত দিন