দোহারে পদ্মাপাড়ে বাঁধ নির্মান শুরু

1026

‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পদ্মা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হবে, যাতে হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে পারে’—২০০৮ সালে নির্বাচনী জনসভায় দোহার উপজেলাবাসীকে এ কথা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি সরকার গঠন করেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। অবশেষে কথা রেখেছেন তিনি। গত শুক্রবার ১১ নভেম্বর থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে পদ্মাপাড়ে বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজ। এতে খুশি দোহারবাসী, তারা ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে।

দোহারের নয়াবাড়ী ইউনিয়নের ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের বাহ্রা ঘাট থেকে পশ্চিম ধোয়াইর পর্যন্ত নদীপাড়ে জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে হাজার হাজার জিও ব্যাগ রাখা হয়েছে বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। মাঠের পাশে রাখা হয়েছে বালু। ইট, পাথরসহ অন্য নির্মাণসামগ্রীও আসতে শুরু করেছে প্রকল্প এলাকায়। বাঁধ নির্মাণে আসা কয়েক শ শ্রমিক অবস্থান নিয়েছে বাহ্রা এলাকার শেষ প্রান্তে। সেখানে তাঁবু খাটিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাদের। স্থানীয়রা জানায়, ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, নয়াবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা বাঁধ দিয়ে সংরক্ষণ করবে সরকার। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজটি পরিচালিত হবে। বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা, যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়েছে।

অন্য খবর  দোহারে খান বাড়ির ধানের গোলায় লুকানো ছিল এক মাস!

বাহ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘অবশেষে বাঁধটি নির্মাণে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাঁধের কাজ শুরু না হলে কয়েক দিনের মধ্যে বাহ্রা হাবিল উদ্দিন স্কুল ও বাহ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে চলে যেত।’

বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুত্ফর রহমান বলেন, ‘ভাঙনে নয়াবাড়ী ইউনিয়নের মানুষ আজ নিঃস্ব। দুই যুগের অব্যাহত ভাঙনে হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল সব হারিয়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাটসহ আরো কত কী। ইউনিয়নের অধিকাংশই নদী চলে গেছে। এ বছর বাঁধের কাজ শুরু না হলে আগামী বছরের মধ্যে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেত। দেরিতে হলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। এ জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’

নয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ হান্নান বলেন, ‘বর্তমান সরকার যে কথা রাখে, তার প্রমাণ এই বাঁধ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছে। আশা করি বাঁধের কাজটি দ্রুত শেষ হবে। বাঁধের কাজ শুরু না হলে দোহারের মানচিত্রে নয়াবাড়ীর অবস্থানই হয়তো থাকত না।’

অন্য খবর  পদ্মা বাঁধ দখল করে ইট-বালুর ব্যবসা

নয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জ গুহ বলেন, ‘২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা দোহারের জয়পাড়া বড় মাঠে মান্নান খানের নির্বাচনী জনসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে দোহারবাসীকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করবেন। প্রক্রিয়াগত কারণে দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। এ জন্য দোহারের জনসাধারণের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ভাঙনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য। আমাদের প্রত্যাশা, বাঁধের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে দোহারের নয়াবাড়ী ইউনিয়নের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্থায়ী বাঁধ দিয়ে নদীতীর সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। বেশি ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পুরোদমে কাজ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। নির্মাণসামগ্রী আনা হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

আপনার মতামত দিন